গায়ে হলুদের সাজে শুভশ্রী এবং তৃণার ‘মেহেন্দি’।
অনুষ্কা শর্মার লেহঙ্গা, প্যাস্টেলরঙা ফুলের সাজ, বরমালা... ভাবী বাঙালি কনেদের মধ্যে অনেকেরই চেকলিস্টে এমন ইচ্ছের ভিড়। এই ইচ্ছের সঙ্গে আর্থিক সঙ্গতির প্রশ্নটি গভীর ভাবে জড়িয়ে। তবে শহরের একাধিক ওয়েডিং প্ল্যানারের মতে, মেহেন্দি-সঙ্গীতের মতো অনুষ্ঠানে এখন বেশি খরচ করার প্রবণতা বাঙালি পরিবারের।
মেহেন্দি বা সঙ্গীতের সঙ্গে সাবেকি বাঙালি বিয়ের সম্পর্ক নেই। আলতার বদলে বাঙালি কনের মেহেন্দি পরার চল এক দশকের বেশি পুরনো। তবে তা নিতান্তই কনে ও তার বান্ধবীদের ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ ছিল। পার্লারে বা বাড়িতে মেহেন্দি পরত কনে। কিন্তু ‘মেহেন্দি’র জন্য আলাদা পোশাক, স্টেজ তৈরি করে ফোটোসেশন... গত কয়েক বছরে এমন জাঁকজমক নজর কাড়ছে। বিয়ে উপলক্ষে হইহুল্লোড়ের জন্য এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন। তবে অবাঙালি জাঁকজমককে আপন করতে গিয়ে কি বাঙালির নিজস্ব অনুষ্ঠান এখন ছোট পরিসরে পালিত হচ্ছে?
অবাঙালি অনুষ্ঠানের চাহিদা বাড়ছে কেন?
এ বিষয়ে সব ওয়েডিং প্ল্যানারই একমত। বলিউড তারকাদের ‘বিগ ফ্যাট ওয়েডিং’ জনপ্রিয় হওয়ায় অবাঙালি রীতিনীতি পালনের দিকে বেশি ঝোঁক বাঙালি বর-কনের। শহরের এক ওয়েডিং প্ল্যানার অরিজিৎ মিত্র বললেন, ‘‘আর্থিক সঙ্গতি থাকলে পাত্র-পাত্রী দু’জনেই সব অনুষ্ঠানে রাজি হয়ে যান। কিন্তু বাজেটের সীমাবদ্ধতা থাকলে তাঁরা বাঙালিয়ানাকে মুখ্য রেখে আনুষঙ্গিক কিছু অনুষ্ঠানে রাজি হন।’’
পাশাপাশি গত কয়েক বছরে বেড়েছে ‘ক্রস কালচার’ বিয়ের ট্রেন্ড। পড়াশোনা বা চাকরির সুবাদে পঞ্জাবি, মারোয়াড়ি, বিহারি, তেলুগু... বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন বাঙালিরা। ফলে সেই বিয়েতে দু’পক্ষেরই আবদার রাখতে হচ্ছে ওয়েডিং প্ল্যানারদের। ‘‘মাসে দশটা বিয়ের মধ্যে পাঁচ-ছ’টি ক্রস কালচার বিয়ের কাজ থাকে আমার। বিদেশিদের সঙ্গেও বাঙালিদের বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে। সে ক্ষেত্রেও রীতিনীতি বদলাচ্ছে,’’ বলছিলেন ওয়েডিং প্ল্যানার শ্রাবণী গুপ্ত-অর্ণব দাশগুপ্ত জুটির শ্রাবণী।
ব্যাচেলরেট
হিন্দি ছবি, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবেই বিয়ের আগে ‘ব্যাচেলরেট’ পালনের বহর বেড়েছে। বন্ধুবান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে বর এবং কনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তাই এখানে সাধারণত ওয়েডিং প্ল্যানারের কোনও ভূমিকা নেই। সপ্তাহান্তের ছুটিতে শহরের বাইরে তাঁরা বুক করছেন ফার্ম হাউস বা রিসর্ট। ‘স্পিনস্টার পার্টি’র জন্য বেছে নিচ্ছেন তাজপুর, মন্দারমণি বা গোয়ার মতো লোকেশন। তার পর চুটিয়ে মজা ও ফোটো- সেশন।
মেহেন্দি-সঙ্গীত
বাঙালি বিয়ের আগের দিন হয় আইবুড়োভাত। এখন আগের দিন সকালে মেহেন্দি, রাতে সঙ্গীত। তাই আইবুড়োভাত আরও এক দিন এগিয়ে যায়। বাঙালি বিয়েতে ‘আশীর্বাদ’ও আগে ধুমধাম করে হত। এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রির দিন (যদি আগে হয়) বা বিয়ের দিনই তা মিটিয়ে নেওয়া হয়।
যাঁরা মেহেন্দি বড় করে করেন, সেখানে আলাদা স্টেজ, পোডিয়াম, ব্যাকড্রপের ব্যবস্থা রাখা হয়। কনে ও তাঁর বান্ধবীদের পোশাকে ‘থিম’ রাখা হয়। সেলফি-গ্রুপফির জন্য আলাদা জায়গা তৈরি করা হয়।
সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ককটেল পার্টি। বাঙালি বিয়েতে অ্যালকোহল আগে ভাবাই যেত না। এখন সেটাই ‘ইন থিং’। ওয়েডিং প্ল্যানার রোহিত দাসের কথায়, ‘‘সাধারণত সঙ্গীত নাইট বর ও কনের পরিবার যৌথ ভাবে আয়োজন করে। খরচ বাঁচে, আবার মজাও হয়। প্রথমে কনের পরিবারের পারফরম্যান্স, পরে বরের পরিবার। দু’টি পরিবারের যৌথ নাচ, তার সঙ্গে বর ও কনের বন্ধুরাও রয়েছে।’’ শ্রাবণীর কথায়, ‘‘বছর দশেক আগেও কনের মা বলতেন, ‘জামাইয়ের সামনে কী ভাবে নাচব!’ এখন অনেক বাড়িতে কনের মা-ই বলছেন, তিনি পারফর্ম করতে চান। এটা বড় পরিবর্তন।’’ অনেকে কেকও কাটেন। সঙ্গীতে ডিজে তো থাকবেই। অল্পবয়সিদের জন্য ফান গেমসও রাখা হয়।
গায়ে হলুদ
বাঙালির গায়ে হলুদ এখন ‘হলদি’ সেরিমনি। পাত্র-পাত্রীর কালার কো-অর্ডিনেটেড পোশাক তো রয়েছে। কনেও নিজেকে সাজিয়ে তোলেন ফুলের গয়নায়। রজনীগন্ধা বা গাঁদা নয়, পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে গোলাপ দিয়েও কাস্টম-মেড অ্যাকসেসরিজ় তৈরি করা হয়।
বিয়ে ও রিসেপশন
শিকড়ের টানে বাঙালি কনে এখনও পান পাতা দিয়ে মুখ ঢেকে পিঁড়িতে ঘোরেন। আবার পিকচার-পারফেক্ট হওয়ার জন্য চাই বরমালা। ওয়েডিং প্ল্যানারদের মতে, মারোয়াড়ি কায়দার ‘জয়মালা’ বা ‘বরমালা’র চাহিদা বেশি। ছাদনাতলার বদলে রিভলভিং স্টেজেই তাঁরা মালাবদলে আগ্রহী। রিসেপশনে বাঙালি কনে এখন দীপিকা–অনুষ্কার স্টাইল অনুসরণ করেন। মাথার চেলি নৈব নৈব চ। রিসেপশনেও কেক কাটার চল রয়েছে।
‘মিলায়ে ও মিলিবে’—এটাই এখন বাঙালি বিয়ের মূল মন্ত্র। তবে অবাঙালি উন্মাদনার সঙ্গে চেনা বাঙালিয়ানার ভারসাম্য থাকুক, কাম্য সেটাই।
ছবি:সায়ন্তন দত্ত (তৃণা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy