Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
migraine

আক্রান্তের সিংহভাগই মহিলা, মাইগ্রেনের সমস্যা সমাধানে এগুলি মাথায় রাখতেই হবে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে দাঁতে পোকা মানে ডেন্টাল ক্যারিসের পরেই সব থেকে কমন ও কষ্টকর অসুখ হল মাইগ্রেন বা আধকপালি।

পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি আক্রান্ত হন এই রোগে। ফাইল ছবি।

পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি আক্রান্ত হন এই রোগে। ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:১৩
Share: Save:

কখনও রোদের তাপ আর প্রচণ্ড গরমে, কখনও কনকনে ঠান্ডায় কখনও আবার ঘুম কম হলে কিংবা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কিংবা অ্যাসিডিটির প্রভাবেও হতে পারে নানা সমস্যা। বিশ্বের প্রায় ১০৯ কোটি মানুষ এই সব নানা কারণ মিলিয়ে মাইগ্রেনের হানায় ভয়ানক কষ্ট পান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে দাঁতে পোকা মানে ডেন্টাল ক্যারিসের পরেই সব থেকে পরিচিত ও কষ্টকর অসুখ হল মাইগ্রেন বা আধকপালি। কপালের অর্ধেক দিকে ব্যথা হয় বলে আধকপালি নামকরণ। বিশ্বের প্রায় ১৪.৭ % মানুষ মাইগ্রেনের মাথা ব্যথায় কষ্ট পান। মাইগ্রেনের সুনির্দিষ্ট কারণ কী সেই উত্তর এখনও খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। কিছু ট্রিগার ফ্যাক্টরকে মাইগ্রেনের কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।

কখনও একটি কখনও বা একাধিক ট্রিগার ফ্যাক্টর মিলেমিশে আধকপালি ডেকে আনতে পারে বললেন নিউরোমেডিসিনের চিকিৎসক অংশু সেন। ট্রিগার ফ্যাক্টরগুলির মধ্যে আছে প্রচণ্ড রোদ্দুরে বা গরমে ঘোরাঘুরি, অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকা, খিদে পেলে চকোলেট, চিজ বা আইসক্রিম অথবা মিষ্টি খাওয়া, পেট্রোল, ডিজেল সহ কোনও তীব্র গন্ধ, অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে গরমে বা উল্টোটা করলে, অনিদ্রা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অ্যাংজাইটি সব মিলেমিশে মাইগ্রেনের আক্রমণ শুরু হতে পারে বলে জানালেন অংশু সেন।

আরও পড়ুন:বিখ্যাত মানুষের আত্মহত্যার খবরে কি মানুষ আরও বিপন্ন বোধ করেন? কী বলছেন মনোবিদরা​

অসুখটা কিন্তু মোটেও নতুন নয়। প্রাচীন মিশরের চিকিৎসা বিজ্ঞানের বই লেখা হয়েছিল যিশুর জন্মের প্রায় দেড় হাজার বছর আগে। সেই প্রাচীন পুঁথি ইবার্স প্যাপিরাসেও মাইগ্রেনের ভয়ানক মাথার যন্ত্রণার উল্লেখ আছে। সত্যি কথা বলতে কী কম-বেশি প্রায় প্রত্যেক পরিবারের কেউ না কেউ মাইগ্রেনের মাথা ব্যথায় কাবু হয়ে পড়েন। মাথা ব্যথার ওষুধ খেয়ে সাময়িক স্বস্তি হলেও অনেকের ক্ষেত্রে ট্রিগার ফ্যাক্টর যখন তখন সমস্যা ডেকে আনে।

পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীব্যাপী মহিলাদের মধ্যে মাইগ্রেন অ্যাটাক পুরুষদের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশি। আমেরিকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬% পুরুষ মাইগ্রেনের ব্যথায় কষ্ট পান, আর ওদেশের মহিলাদের মধ্যে এই হার ১৯% এর কাছাকাছি। ছোটদেরও নিষ্কৃতি দেয় না। ১২ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের মধ্যে মাইগ্রেন হয় কমবেশি ১৫% এর।

মহিলাদের ঋতুনিবৃত্তি অর্থাৎ মেনোপজের পর মাইগ্রেনের প্রবণতা কমতে শুরু করে। অন্যান্য মাথার যন্ত্রণার সঙ্গে আধকপালির মাথা ব্যথার কিছু তফাত আছে, বললেন অংশু সেন। মাইগ্রেনের মাথা ব্যথা কপালের একদিকে হয় এবং তা চোখে ঘাড়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর সঙ্গে বমি বা বমি বমি ভাব থাকতে পারে। আলো বা শব্দ হলে বিরক্তি বাড়ে, ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম ফটো ও ফোনোফোবিয়া। মাইগ্রেনের অ্যাটাক হলে কোনও কাজকর্ম করা যায় না, এমনকি বাড়ির মধ্যে হাঁটাচলা করলেও কষ্ট বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

মাথার যন্ত্রণা হলে চোখের সামনে আলোর ঝলকানির সঙ্গে সঙ্গে রোগী আচমকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন

সিঁড়ি ওঠানামা করলে মাথার যন্ত্রণা বেড়ে যায়। অনেকের মাথায় ব্যথা একদিকে শুরু হলেও সম্পূর্ণ মাথা ঘাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। কারও আবার ব্যথার চোটে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। ব্যথার কষ্টে মেজাজ তুঙ্গে ওঠে, কোনও কাজে মনঃসংযোগ করা যায় না, কাজকর্ম শিকেয় ওঠে অবসাদ বাড়ে বললেন অংশুবাবু।

আরও পড়ুন: করোনা আবহে অন্তঃসত্ত্বাদের এই সব বিষয়ে খেয়াল রাখতেই হবে​

এই অসুখের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নিউরোলজিস্টরা করতে পারেন নির্ভুল ভাবে। আধকপালি মাথাব্যথার নানা রকম ভাগ আছে এঁদের মধ্যে মূলত বেশি দেখা যায় সাধারণ মাইগ্রেন, ভার্টিব্রোব্যাসিলারি মাইগ্রেন এবং হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন। এই ধরনের মাথার যন্ত্রণা হলে চোখের সামনে আলোর ঝলকানির সঙ্গে সঙ্গে রোগী আচমকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন। কখনও ব্যথার সঙ্গে মাথা ঘোরাও থাকে, ডাবল ভিশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন হলে স্ট্রোকের মত শরীরের একদিক অসাড় হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগী আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। কিন্তু এটা কখনও কখনও ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থেকে যেতে পারে। আবার রেটিনাল বা অকিউলার মাইগ্রেনের অ্যাটাকে সাময়িক ভাবে দৃষ্টিশক্তি চলে যায়। আর এইসব কারণেই বারংবার মাইগ্রেনের অ্যাটাক হলে একজন নিউরোমেডিসিনের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুন: ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?​

মাইগ্রেনের উপসর্গে সঙ্গে ব্রেন টিউমার, অ্যানুরিজিম এবং স্ট্রোকের লক্ষণের কিছু কিছু মিল আছে। তাই এইসব রোগের আশঙ্কা আছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে প্রয়োজন সিটি স্ক্যান ও এমআরআই করানোর দরকার হতে পারে। ইদানিং বেশ কিছু ওষুধের সাহায্যে মাইগ্রেনের হাত থেকে রেহাই মিলছে। রক্তচাপ ও হার্টের অবস্থা বিচার করে ওষুধ দেওয়া হয়। এছাড়া এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে ট্রিগার ফ্যাক্টরগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখতে অনুরোধ করলেন অংশুবাবু। খালি পেটে থাকার পর কফি, চকোলেট, চিজ বা আইসক্রিম খাওয়া চলবে না। কিছু খাবার খেয়ে এগুলি খেলে সমস্যা হবে না। মাইগ্রেন প্রতিরোধে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন, মন ভাল রাখুন পুষ্টিকর খাবার খান।

অন্য বিষয়গুলি:

Migraine Neurology Nerve brain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy