উলট-পুরাণ: শীতের দুপুরে ঠান্ডা উধাও। গায়ের গরম জামা চলে এসেছে হাতে। বুধবার, ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
দিন কয়েকের ঠান্ডার পরে হঠাৎ করেই গরম ভাব। বেলা বাড়লে গায়ে রাখা যাচ্ছে না শীতের পোশাক। কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে পাখাও চালিয়ে ফেলছেন। কিন্তু এই ঠান্ডা-গরমের দোলাচলে শরীর সুস্থ থাকবে তো? আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে আবহওয়াবিদেরা জানাচ্ছেন, দিন কয়েক আগেই পাওয়া ঠান্ডার আমেজ এখনই ফেরার সম্ভাবনা নেই। এই পরিস্থিতি চলবে আরও অন্তত চার-পাঁচ দিন।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশ দাস বললেন, ‘‘আমাদের পরিবেশ ঠান্ডা হয় মূলত উত্তরাখণ্ড, কাশ্মীর এবং দিল্লি থেকে আসা উত্তুরে হাওয়ার দাপটে। কিন্তু পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এমন খেল দেখাচ্ছে যে, সেই হাওয়া বাংলায় প্রায় ঢুকছেই না। প্রতিদিনই সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ফারাক খুব বেশি হচ্ছে। জানুয়ারির ৯ বা ১০ তারিখের আগে অবস্থা বদলানোর বিশেষ আশা নেই।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে এখন সতর্ক না হলে কিন্তু সমূহ বিপদ। তাপমাত্রা বাড়ছে বলেই দ্রুত গরম পোশাক খুলে ফেললে শরীর মানিয়ে নেওয়ার সেই সময়টা পায় না। ফলে হঠাৎ করে যেমন ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, তেমনই বাড়তে পারে ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও। ফলে আর পাঁচটি সতর্কতার সঙ্গেই বাধ্যতামূলক মাস্কের ব্যবহারও।মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘মানুষের শরীর ৬-৮ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রার পার্থক্য নিতে পারে। কিন্তু সেই পার্থক্য যদি এখনকার মতো বাড়তে থাকে, তা হলে বিপদ। হঠাৎ গরম পোশাক খুলে ফেলার বদলে শরীরের তাপমাত্রা বুঝে পদক্ষেপ করা দরকার। আর গরম পড়ল বলেই ঠান্ডা জল খেয়ে ফেললে তো রক্ষা নেই।’’ মেডিসিনেরই আর এক চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস আবার বললেন, ‘‘সর্দি-কাশি হওয়া সব ক্ষেত্রে সংক্রমণের লক্ষণ না-ও হতে পারে। হঠাৎ ঠান্ডা বা হঠাৎ গরমের জেরে শরীরের যে সমস্যা হয়, তার বহিঃপ্রকাশও হতে পারে এই সর্দি-কাশি।’’
তাই দুই চিকিৎসকেরই পরামর্শ, অনেকেই এই সময়ে কম জল খান। সেটা করা যাবে না। দাঁত এবং মুখ পরিষ্কার রাখতে পারলেও বহু ক্ষেত্রে সংক্রমণ আটকানো সম্ভব। সে কারণেই পর্যাপ্ত জলপান প্রয়োজন। জল কম খেলে ত্বক শুকিয়ে যায়। ত্বকে র্যাশও দেখা দিতে পারে কম জল খাওয়ার কারণে। পাচনতন্ত্রের উপরে যাতে চাপ না পড়ে, সেটাও দেখতে হবে। গরমে যা খাওয়া হয়, শীতেও সেই পরিমাণে খেতে হবে। অনেকে আবার শীতের এই সময়ে বেশি মদ্যপান করতে পছন্দ করেন। সাময়িক ভাবে শরীর গরম করলেও পরে এর জেরে ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি বাড়ে।
আরও পড়ুন: দ্বন্দ্ব ভুলে হাতে হাত মিলিয়ে উত্তরবঙ্গে কাজের বার্তা অভিষেকের
আরও পড়ুন: ৯ হাজারের কম সক্রিয় রোগী, উদ্বেগ কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনায়
শিশু-রোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বললেন, ‘‘হঠাৎ এই গরম-ঠান্ডা মনে হচ্ছে চলবে। বাকি সতর্কতার থেকেও বেশি করে বলব, জোর করে বাচ্চাদের গায়ে বাবা-মায়েরা যেন গরম পোশাক চাপিয়ে না রাখেন। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাচ্চারা গ্রীষ্মকালে যতটা না গরমে কষ্ট পায়, তার চেয়ে অনেক বেশি গরমে কষ্ট পায় শীতকালে!’’চিকিৎসকদের বড় অংশই মনে করছেন, হঠাৎ গরম, হঠাৎ ঠান্ডার এই পরিস্থিতিতেও বড় হাতিয়ার হতে পারে মাস্ক। অরুণাংশুবাবু বলেন, ‘‘কোভিড তো আছেই। কিন্তু তাপমাত্রার তারতম্যের এই পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকতে মাস্কের বিকল্প নেই। মাস্কের ব্যবহার বহুলাংশে বেড়েছে বলেই এ বার অ্যালার্জি জাতীয় রোগ অনেক কম।’’ অরিন্দমবাবুর মন্তব্য, ‘‘কোভিড তো পরের কথা। এমনিতেই বাতাসে অনেক ভাইরাস থাকে। হঠাৎ তাপমাত্রার বদলে তাদের রাজত্ব বাড়ে। নাক এবং গলার মাধ্যমে শেষে ফুসফুস পর্যন্ত সংক্রমিত হয়ে সহজেই বংশবিস্তার করতে পারে তারা। ঠান্ডা-গরমের বাকি নিরাপত্তার সঙ্গে মুখ এবং নাকের মতো ভাইরাস-ব্যাক্টিরিয়ার প্রবেশপথ মাস্ক দিয়ে আটকাতে পারলেই অনেকটা কাজ হয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy