জীবনের প্রথম দশকটা পেরোনো মাত্রই দুনিয়াটা হঠাৎ পাল্টে যায়। আগে অবশ্য চোদ্দো-পনেরো বছর বয়স না হলে পৃথিবীর এই রংবদলের খবর পাওয়া যেত না। আর এখন? বছর বারো-তেরোর ভিভান বা কিয়া’দের জিজ্ঞেস করে দেখবেন। সিলেবাস ছাড়াও ওদের সদ্যকিশোর মনে অনেক বোঝা। হঠাৎ রঙিন হয়ে যাওয়া দুনিয়াটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেকেই হিমশিম খায়। কারওর মন খারাপের কারণ মুখ ভর্তি পিম্পল। কারও আবার চুল দেখে বন্ধুরা ‘মেডুসা’ বলে ডেকেছে। শুধু ওদের পড়াশোনার খেয়াল রাখাই নয়, নতুন দুনিয়াটা ওদের পক্ষে সহজ করে দেওয়ার দায়িত্বও অভিভাবকদের। এই বয়স থেকে ওদের গ্রুমিং শুরু করে দেওয়া দরকার। একটু চেহারা-সচেতনতা, রূপচর্চার প্রাথমিক পাঠগুলো দিয়ে রাখা উচিত। এতে ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তা ছাড়া, প্রথম থেকেই যত্ন নিলে ভবিষ্যতেও ওদের ত্বক-চুল জেল্লায় ঝলমলে থাকবে।
বানিয়ে দিন বিউটি রুটিন
কিশোর বয়সে হরমোনের পরিবর্তনের জন্য ত্বকের গ্রন্থিগুলি বেশি তেল নিঃসরণ করে। ফলে ব্রণ, পিম্পল হয়। ত্বকের ছিদ্রে তেলময়লা ঢুকে ব্ল্যাকহেডসের উৎপাত বাড়ে। অনেকের ত্বকে কেরাটিন বেশি তৈরি হয়। ত্বক পুরু দেখাতে শুরু করে। বারবার ত্বক পরিষ্কার করলে ও ত্বকের অতিরিক্ত তেল তৈরির বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা কমবে।
• সাধারণ যত্ন: বারবার মুখ ধোয়া জরুরি। ঘুম থেকে উঠে বা সকালে স্নানের সময় জেল বা ফোম (বেশি তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে) ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। তার পর পিএইচ ব্যালান্স বজায় রাখে, এমন টোনার লাগাতে হবে। পরের ধাপে এমন ময়শ্চারাইজ়ার জরুরি, যা ত্বকের জলীয় ভাব ধরে রাখে। ‘নন অ্যাকনেজেনিক’ ময়শ্চারাইজ়ার লাগালেও ফল মিলবে। ছেলে বা মেয়ে বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার পর ভাল করে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে বলুন। সপ্তাহে এক বার গোলাপ জল আর মুলতানি মাটি মিশিয়ে লাগিয়ে, ১৫ মিনিট পরে তুলে ফেলবে। এতে ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকে।
• তেল মালিশ: শীত শুরুর আগে থেকে স্নানের আগে তেল মালিশ (ছুটির দিনে দশ মিনিট ধরে) করতে শেখান। এতে ত্বক ও অঙ্গের গঠনও সুন্দর হবে। তিল তেল শরীর ঠান্ডা রাখে, হাড় মজবুত করে। কিন্তু অনেকের তা সহ্য হয় না। নারকেল তেলেও অনেকের র্যাশ বেরোয়। সবচেয়ে নিরাপদ জলপাইয়ের বডি অয়েল। এতে হলুদ বাটা মিশিয়ে রাখলে অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে। তবে মুখে যেন তেল না মাখে।
• স্পট কেয়ার: মুখের কোথাও ব্রণ বার হলে সঙ্গে সঙ্গে ‘স্পট কেয়ার’ শুরু করুন। ড্রাই অ্যান্টিসেপটিক, ক্যালামাইন লোশন, অ্যালো ভেরা জেল খুব তাড়াতাড়ি ব্রণ মিলিয়ে দেয়। ব্রণ খোঁটা তো চলবেই না, ব্রণতে যেন হাতও না দেয়। বেশি ব্রণ হলে ত্বকবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
পিম্পল বধের ঘরোয়া অস্ত্র
• অ্যাকনের মাস্ক: চন্দনবাটার সঙ্গে কমলালেবু বা লেবুর রস আর এক চামচ মধু মেশান। এই প্যাক মুখে মাখিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে দিন। এই প্যাক ব্যাকটিরিয়া তাড়াতে ওস্তাদ। তবে অ্যাকনে সহজে যেতে চায় না। তা থেকে মুক্তির জন্য ত্বকের যত্নের সঙ্গে ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা ও শারীরচর্চাও জরুরি।
• তুলসি আর লেবু: ব্রণের উপরে লেবুর রস লাগিয়ে সারা রাত থাকতে পারে। সকালে উঠলে দেখবে, ব্রণ শুকনো হয়ে খসে যাচ্ছে। অনেক বাচ্চার ত্বকে লেবুর রস সহ্য হয় না। সে ক্ষেত্রে তুলসি পাতা বেটে বা ডিমের সাদা অংশ লাগালে সংক্রমণ কমবে।
• ব্ল্যাকহেডসের জন্য: লেবু আর মধু মিশিয়ে লেই বানিয়ে নাক ও তার চারপাশে লাগিয়ে রাখুন। দশ মিনিট পর,আস্তরণটি আলতো করে ধুয়ে ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে দিন। টম্যাটোর দানা আর রস ঘষলেও ব্ল্যাকহেডসের ঝঞ্ঝাট কমে।
নরম চিকন চুল
খুব সকালে স্কুল থাকলে, স্নানের পর লম্বা চুল শোকাতে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্কুলের দিনে চুল বেঁধে স্নান করানো অভ্যেস করান। এখন বাচ্চারা বাড়িতে। এই সুযোগে ওদের চুলের ভাল পরিচর্যা করা যায়। দু’-তিন দিন অন্তর নরম, ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে দিন। চুল যদি খুব রুক্ষ আর ভঙ্গুর না হয়, তবে ১৩ বছর বয়সের আগে কন্ডিশনার ব্যবহার না করানোই ভাল। রুক্ষ চুলের ক্ষেত্রে কন্ডিশনার দেওয়া আছে এমন শ্যাম্পু বেছে নিন। বরং শ্যাম্পুর আগে অয়েল মাসাজ করে দিন। নারকেল তেল অল্প গরম করে, সপ্তাহে দু’বার ১৫ মিনিট ধরে মাসাজ করে দিন। ১৫ মিনিট রেখে চুল ভাল করে ধুয়ে নেবে। ক্যাস্টর অয়েল মাসাজও খুব উপকারী। চুল কোমল থাকবে।
এই বয়সের মেয়েরা অনেক সময়ে মায়ের দেখাদেখি স্পা করানোর আবদার করতে পারে। স্পা মূলত ক্ষতিগ্রস্ত চুলের প্রাণ ফেরাতে সহায়তা করে। কিন্তু এত কমবয়সিদের চুলে এমন কোনও ক্ষতি হওয়ার কথা নয়, যা মেরামতের জন্য স্পা ট্রিটমেন্ট দরকার হবে। তাই সন্তানকে বোঝান, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দামি স্পা সে করাতেই পারে। কিন্তু টিনএজে স্পা-র প্রয়োজন নেই। বরং ওর মন ভোলাতে ঘরোয়া কিছু হেয়ার মাস্ক তৈরি করে দিন।
জলপাইয়ের তেল, লেমন এসেনশিয়াল অয়েল আর দই মিশিয়ে রাতে লাগিয়ে পর দিন ধুয়ে ফেললে, চুল উজ্জ্বল হয়। ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে, সকালে এক ঘণ্টা এই প্যাক লাগাবে।
দুধ, কারি পাতা, বেসনের মাস্ক লাগিয়ে এক ঘণ্টা পরে ধুয়ে নিতে পারে। খুসকির সমস্যায় এই প্যাকে মেথি গুঁড়ো মেশাতে হবে। তা ছাড়া, ডিমের কুসুম চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে, ধুয়ে নিলেও তখনই মসৃণ চিকন চুল মেলে।
নিয়মে নজর
বাইরে বেরোনোর সময় এসপিএফ যুক্ত প্রডাক্ট ব্যবহার করতে শেখান। রাতে শুতে যাওয়ার আগে মুখ পরিষ্কার করে শুতে যাবে। এতে ত্বকের শ্বাস নিতে সুবিধে হবে।
১১ বছর বয়সের আগে স্কিন মাস্ক, হেয়ার প্যাক— কোনও কিছুর দরকার নেই। তেল মালিশ, বেবি ক্রিম, লিপ বাম, চুলে তেল-শ্যাম্পু-ই যথেষ্ট। এই বয়সের ত্বক বা চুল স্বাভাবিক ভাবেই তরুণ ও সুন্দর। কসমেটিকস বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে তা নষ্ট করতে দেবেন না।
অনেক সময়ে হরমোন জনিত কারণে কিশোরীদের মুখে, ঠোঁটের উপরে হালকা রোম বেরোতে দেখা যায়। তা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। মেয়ে থ্রেডিং করতে চাইলে বোঝান, এত তাড়াতাড়ি তা করলে ত্বকে এর প্রভাব পড়বে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধরের পরামর্শ, ১৮ বছর বয়সের আগে ওয়্যাক্সিং ও থ্রেডিং থেকে বিরত থাকা ভাল। ১৪-১৫ বছর বয়স হলে কখনওসখনও হেয়ার রিমুভাল করানো যেতে পারে। নির্দিষ্ট বয়সে এসে থ্রেডিং শুরু করলে রোম ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে।
বাইরে থেকে এলে মুখে হাত দেওয়ার আগে হাতে সাবান
দেওয়ার অভ্যেসটাও রোজনামচায় গেঁথে দিন। মেকআপ নিয়ে আগ্রহ দেখালে উৎসব-অনুষ্ঠানে একটু বিবি ক্রিম, লাইনার, লিপ গ্লস লাগানো শিখিয়ে দিন। বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের মনের নাগাল পাওয়ার একটা উপায়, ওদের চেহারা, সাজগোজ নিয়ে যে আপনিও উৎসাহী, তা জানানো। হঠাৎ সৌন্দর্য সচেতন হয়ে পড়েছে দেখলে, বাধা দেবেন না। বরং সুস্থ উপায়ে ওদের আরও সুন্দর হয়ে উঠতে সাহায্য করুন। কিন্তু তা যেন কখনও সীমা অতিক্রম না করে। দেখবেন, চমৎকার বন্ধুত্ব গড়ে
উঠছে ওদের সঙ্গে। আর অন্য অনেক সমস্যারও সমাধান হয়ে যাচ্ছে চটপট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy