সহজে নাকি তাঁকে ধরা যায় না। নিজস্ব চিত্র।
তিনি বলেন, তিনি নাকি পদ্মপাতায় জল। সহজে তাঁকে ধরা যায় না। অথচ তাঁকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের খামতি নেই। ইদানীং পুরুষ এবং মহিলা মহলের চর্চায় তাঁর মসৃণ ত্বকের রহস্য, তাঁর জীবনযাপন। গত ৩ডিসেম্বর পা রেখেছেন ৬৫তে। ত্বকের পরিচর্যা থেকে সানগ্লাসের সংগ্রহ—রবিবারের এক বৃষ্টিস্নাত দুপুরে ‘আনন্দবাজার অনলাইন’-এর কাছে অকপট মদন মিত্র।
জন্মদিন কেমন কাটল?
লাভলি! জন্মদিনে অগুনতি কেক কেটেছি। মানুষের শুভেচ্ছা, ভালবাসা আর ফুলে ভরে ছিলাম গোটাদিন। সারা কলকাতা শহরে বোধহয় সে দিন ফুল আর কেকের আকাল পড়েছিল।
কাজের ব্যস্ততার মাঝেও আপনার কাছে মানুষের আনাগোনা লেগেই আছে। নিজের জন্য আলাদা করে সময় বার করতে পারেন?
আমি যখন কাজ করি না, বিশেষ করে ‘প্রো-পিপল অ্যাক্টিভিটি’র মধ্যে থাকি না,তখন নিজে খুব ভেঙে পড়ি, বিষণ্ণ হয়ে পড়ি... কষ্ট পাই। এমনকি, আমার শরীরেরও তার প্রভাব পড়ে। একই সময়ে আমি যদি প্রচুর কাজের মধ্যে থেকেও কিছু ক্ষণ আলাদা থাকতে পারি, তখন আমি আবার ভীষণ মজা পাই। এই সময়টুকু আমার নিজের সময়। একঘণ্টা চুপ করে ছাদে বসে থাকি,বই পড়ি,গান শুনি কিংবা চুমুক দিই কফির কাপে। কিন্তু একেবারে বিচ্ছিন্ন হতে আমি পছন্দ করিনা।
এত ফিট থাকেন কী করে,ডায়েট করেন নাকি?
কিছুই করি না। শরীরচর্চা বা শরীরের যত্ন নেওয়া আমাদের মতো রাজনৈতিক লোকের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়। সকালে খাই কাঁঠালি কলা, আর একটি ডিম সেদ্ধ। দুপুরে কিছু খাই না। না খেলে আমি ভাল থাকি। বরং সারা দিনে অনেক বার চা-কফি খাই। রাতে খাই তড়কা আর একটা তন্দুরি রুটি। আগে মটনটা খেতে ভালবাসতাম, এখন তাতেও অরুচি।
আর বাইরের সৌন্দর্য? ত্বকের যত্ন নেন কী ভাবে?
আমার মায়ের ত্বক খুব ভাল ছিল। ফলে জিনগত ভাবে আমিও সেটা পেয়েছি। এ ছাড়া সত্যি বলতে,আমি সানস্ক্রিন ছাড়া আর কিছু মাখি না। আগে মাখতাম অ্যানসোলার এসপিএফ ৭০, সেটা আর এখন পাওয়া যায় না। ওই সানস্ক্রিন আমি প্রায় ২০ বছর ব্যবহার করেছি। কলকাতার বহু নায়ক-নায়িকা আমাকে দেখে সেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। তবে দুঃখের বিষয়, এই ক্রিমটা এখন আর অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমি লোটাস ৭০ এসপিএফ-এর সানস্ক্রিন ব্যবহার করি।
আর কিছু করেন না? নিয়মিত পার্লারে যাওয়া হয় নিশ্চয়ই?
(মুচকি হেসে...) পার্লারে গত ২৫ বছরে আমি হাতে গুনে ১০ বার হয়তো গিয়েছি। এ ছাড়া,আমি সেটাফিলের তেল এবং সেটাফিলের সাবান ব্যবহার করি। ডার্মা ফেসওয়াশ ব্যবহার করি। মাঝে মাঝে আহা-গ্লো ফেসওয়াশও। সুযোগ পেলেই আমি রাতে শোয়ার আগে মুখে প্রায় আধবোতল নারকেল তেল মেখে ফেলি।
আপনার একটি আলগা সৌন্দর্য আছে বলছেন?
(সানগ্লাসটা ঠিক করে নিয়ে)বলতে পারেন!
ত্বকের যত্ন নিতে মন ভাল রাখা কি জরুরি?
আমি সেটা মনে করি না। তবে হিংসুটে হলে মন ভাল থাকে। কেউ যদি প্রচণ্ড হিংসুটে হয়, তা হলে তাঁর ত্বকও ভাল থাকবে। তাঁর সৌন্দর্য আরও ফুটবে।
সব পোশাকেই আপনি সাবলীল। তবু নিজে কেমন পোশাক পরতে ভালবাসেন?
স্যুট বেশি পছন্দের। তবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি জিন্স আর ক্যাজুয়াল টি-শার্ট।
আপনার মতো ত্বক পেতে চাইলে কী করতে হবে?
যা যা ক্রিম-ট্রিম মাখার মেখে নিন। তবে ত্বক ও শরীর ভাল রাখতে মানুষের জন্যে কাজ করুন। মানুষ আপনাকে আনন্দে রাখবে। ভাল করে খাওয়া-দাওয়া করুন। জিমে যেতে পারেন। আমি যাই মাঝে মাঝে। সাঁতার কাটতে পারেন।
কেনাকাটা করেন?
না। গত ২০ বছরে বাড়ির লোকেরা আমার জন্য শপিং করেননি। আমি নিজেও করিনি। কারণ,আমার সব জামাকাপড়ই উপহার হিসাবে পাওয়া। তবে আমি একটি জামা এক বারের বেশি পরি না। আমার জুতোও অনেক। আরও একটি জিনিসের কালেকশন আছে— ঘড়ি।
আর সানগ্লাস?
আমার ৭০০-৮০০টা সানগ্লাস আছে। রোজ দু’-তিনটে করে পরি।
মানে চট করে মনস্থির করতে পারেন না মনে হচ্ছে?
একদম ঠিক ধরেছেন।তবে উপকার করার ক্ষেত্রে আমি একদম দোনোমনো করি না। এক কথায় আমি বিচিত্র মানুষ (অট্টহাসি)!
আপনি নাকি জলে থাকতে পছন্দ করেন, কথাটা কি সত্যি?
হ্যাঁ, আমি সমুদ্রস্নান খুব পছন্দ করি। স্থলের এই রুক্ষতার চেয়ে জলের আর্দ্রতা আমার বেশি ভাল লাগে। হট বাথ আমার খুব পছন্দের।(খানিকক্ষণ থেমে...)উষ্ণতা আমার পছন্দের বিষয়।
কী রকম?
এমন মানুষ পছন্দ করি যাঁর মনটা নরম, অথচ উষ্ণতা আছে। আর সেরকম মানুষ আসেনও আমার কাছে অফুরন্ত।
মন খারাপ হলে কী করেন?
মন খারাপ হলে পর পর চারটে ক্যাপুচিনো খেয়ে নিই। তবে কফি খেলে আমি খুব কড়া কফি খাই। বন্ধুও চাই তেমনই কড়া। শুধু আমার হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলালে চলবে না। আমার সঙ্গে তর্কেও যোগ দিতে হবে।
মনে হচ্ছে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্বাসী?
ভীষণ ভাবে! আমি প্রচন্ড হিংসুটেও। তবে আমার হিংসে আসলে অন্য কারও ক্ষতি না করে নিজের চাহিদা পূরণ করা,যাকে বলে ছাপিয়ে যাওয়া। আমি ভীষণ পজেসিভও।
কাকে নিয়ে?
(একটু থেমে) কোনও একজন নয়। আমি বন্ধুত্বে পজেসিভ। প্রেমে তো আরও বেশি পজেসিভ। তবে কোনও প্রিয়জন যদি কোনও ভুল করে ফেলেন এবং তা আমার কাছে স্বীকার করেন, তা হলে ক্ষমা করে দিতে পারি। আমি ক্ষমাশীল প্রেমিক। তবে আমাকে মানাতে হবে। সুযোগ চাইলে আমি দেব। কিন্তু বার বার ভুল করলে ক্ষমা করে দেওয়ার প্রেমিক আমি নই।
প্রেমিক হিসাবে আপনি বেশ কড়া মনে হচ্ছে?
একটু। তবে এখনও পর্যন্ত আমার যত জনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, তাঁদের সকলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। আমি সম্পর্কের ছেদে বিশ্বাস করি না।
কমিটমেন্টে বিশ্বাস করেন?
হ্যাঁ, আমার জীবনে উত্থান এবং পতনের পিছনে একটিই কারণ। আমি সব সময়ে সিঙ্গল কমিটমেন্টে বিশ্বাস করি। ওয়ান পার্টি, ওয়ান ফ্রেন্ড, ওয়ান পার্সোনাল লাইফ, ওয়ান ম্যারেড লাইফ, ওয়ান কমিটমেন্ট। এতে সহজেই জীবনের যাবতীয় দুঃখ দূর হয়ে যায়। তবে এটা বলছি না যে, ভার্সেটাইল হওয়া খারাপ। বহুমুখী হতে অসুবিধা নেই।
প্রেম নিয়ে আপনি তা হলে ভালই চর্চা করেছেন?
(খানিক উদাস হয়ে) যদি উল্টো দিকের মানুষকে এক বার বুঝিয়ে দেন যে,তাঁকে ছাড়া আপনার জীবন অচল, তা হলেই আপনি শেষ!‘গোপন কথাটি রেখো গো গোপনে...’।
আপনার এত মহিলা অনুরাগীকে নিয়ে স্ত্রী কী বলেন?
তা হলে একটা গল্প বলি! আমি এক সময়ে আংটি পরতে ভালবাসতাম। এক আঙুলে তিনটে আংটিও পরেছি। মাঝখানে কয়েক বছর আংটি পরিনি। আবার এই জন্ম দিনে অপ্রত্যাশিত ভাবে উপহার হিসাবে পেলাম আংটি। একটা নয়, জন্ম দিনে দু’টো আংটি পেয়েছি। দু’জন মহিলাই উপহার দিয়েছেন। এই নিয়ে বাড়িতে কাউকে কিছু বলিনি। কারণ তাঁরা জানেন, কোনও মহিলাই দিয়েছেন (হাসি)।
আপনার জীবন বেশ রোমাঞ্চকর!
প্রচণ্ড! যদি বলা হয়, ১৬০-এগাড়ি চালাতে, আমি চালিয়ে দেব। দু’টো ট্রামের মাঝখান দিয়ে আমি অনায়াসে বাইক চালাতে পারব। ৫০০-র নীচে আমি বুলেট চালাই না।
নিজের জন্য একটা ট্যাগলাইন বলতে বলা হলে, কী বলবেন?
আমি ভীষণ দুষ্টু! আমার জীবনের ট্যাগলাইন— ‘আই অ্যাম মোর দ্যান আ কমপ্লিট ম্যান’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy