Advertisement
E-Paper

কে পাগল, কী বা প্রলাপ? শিল্পে উঠে এল মনোরোগের সঙ্গে যুদ্ধের গল্প, সাক্ষী রইল শপিং মল

মনোরোগীদের মনের কথা নিয়ে তৈরি হয়েছে শিল্প। সেখানেই তুলে ধরা হয়েছে তাঁদের চিন্তা, ইচ্ছা, একাকিত্ব ও আরও নানা ভাবনার কথা।

মূলত গল্পের প্রদর্শনী। মনোরোগীদের মনের কথা রয়েছে সে শিল্পের পরতে পরতে।

মূলত গল্পের প্রদর্শনী। মনোরোগীদের মনের কথা রয়েছে সে শিল্পের পরতে পরতে। ছবি : সংগৃহীত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৫৪
Share
Save

ব্যস্ত শপিং মল। সন্ধ্যার ভিড়। কেউ সোজা বার্গার খেতে যাবেন ঠিক করেছেন। কেউ পছন্দের ব্র্যান্ডের জামা কিনে চিনা রেস্তরাঁয় ঢুকবেন। কিন্তু এসক্যালেটরের দিকে এগোতে গিয়েই হঠাৎ ধাক্কা দেয় এক গাছ গল্প। সে গাছ সেজেছে মনের কথায়। মনোরোগের কথায়।

মনোরোগীদের ‘পাগল’ বলে ডাকাই অভ্যাস অধিকাংশের। পাগল আর তার প্রলাপ নিয়ে কত যে কথা হয়ে এল যুগ যুগ ধরে! ফলে মনোরোগীর মনের কথা তো প্রলাপই ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু যখন কেউ লেখেন, ‘আমার মায়ের কথা মনে পড়ে, তবু কেউ বাড়িতে ডাকে না’, তখন কি তা প্রলাপ হয়েই থাকতে পারে? তখনও কি তা কাউকে ভাবায় না? ভাবায় অবশ্যই। তাই ব্যস্ত কলকাতার ব্যস্ততম শপিং মলে যখন মনোরোগীদের অভিজ্ঞতা, তাঁদের হাতে লিখিয়ে, তা দিয়ে ইনস্টলেশন তৈরি করেন শিল্পী, তখন ক্ষণিকের জন্য হলেও অধিকাংশেই থমকে দাঁড়ান। মায়ের হাত ছেড়ে শিশু দৌড়ে যায়। অন্য সময়ে যা ক্রিসমাস ট্রি বলে পরিচিত, তা-ই এখন ভরেছে মনের কথায়। ‘ম্যাড স্টোরিস’ বা পাগলের গল্প আগলে রাখে সে গাছ। আর তা দেখেন সমাজের চোখে ‘সুস্থ’ যাঁরা, তাঁরাই। শপিং মল তাঁদের জায়গা। মনোরোগীর জায়গা তো নয়। কিন্তু জৈবিক অনুভূতিগুলি কি খুব আলাদা— সে প্রশ্ন খানিক মুখের সামনে তুলে ধরে শিল্পীর কাজ।

শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে মনোরোগীদের লেখা এক লাইনের গল্প এক জায়গায় করেছেন শিল্পী। তা দিয়েই তৈরি হয়েছে ইনস্টলেশন। তাতে কাগজ, জামা-জিন্‌সের মতো নানা সামগ্রীর উপরে সাজানো রয়েছে মনোরোগীদের ব্যক্তিগত কথা। সবই এক লাইনে।

অধিকাংশ গল্পই একাকিত্বের। কোনওটিতে সন্তানকে না দেখতে পাওয়ার হাহাকার, কোনওটিতে আবার শূন্যতার প্রলেপ। নতুন করে সুখ হাতড়ে বেড়ানোর ইঙ্গিত দেয় কারও কথা।

শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে মনোরোগীদের লেখা এক লাইনের গল্প এক জায়গায় করেছেন শিল্পী। তা দিয়েই তৈরি হয়েছে ইনস্টলেশন।

শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে মনোরোগীদের লেখা এক লাইনের গল্প এক জায়গায় করেছেন শিল্পী। তা দিয়েই তৈরি হয়েছে ইনস্টলেশন। ছবি: সংগৃহীত।

মনোরোগীদের সরিয়ে রাখা হয় সমাজের মূল স্রোত থেকে। ‘পাগল’ মানেই সকলের সঙ্গে বসবাসের অযোগ্য, তাই তো ধরে নেওয়া হয়। বলে দেওয়া হয় তেমনই। কিন্তু সেই ‘পাগল’-এর তো ঘর-বাড়ি আছে, মন আছে, ভাবনা আছে, ইচ্ছা আছে। সে সব কোথায় যায় তখন? সমাজ কি তা জানতে পারে? জানতে চায়ও না। তা-ই জানাচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার শপিং মলের ভিতরে সেজে ওঠা এক প্রদর্শনী।

মূলত গল্পের প্রদর্শনী। মনোরোগীদের মনের কথা রয়েছে সে শিল্পের পরতে পরতে। আর তা সমাজের মূলস্রোতের সামনে তুলে ধরেছেন শিল্পী সুমন্ত্র মুখোপাধ্যায় (সানি) এবং অনিতেশ চক্রবর্তী।

মনোরোগী এবং মনোরোগ থেকে সেরে ওঠার পরেও কোণঠাসা হওয়ার যে অভিজ্ঞতা থাকে, তা সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়াই উদ্দেশ্য এই প্রদর্শনীর। যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে এই কাজ, তাদের তরফে মনো-সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘আমার মতো যে নয়, যে খানিক অন্য রকম, তাঁকে কোণঠাসা করতে পারলে আমার সুবিধে। আমার মতোরাই যখন সংখ্যায় বেশি, তখন অন্য রকমকে বুঝতে চাওয়ার কোনও দায় নেব কেন আমি? একান্তই যদি দায় পড়ে নিতেও হয়, তবে তার সীমাও বেঁধে দেব আমি, আমরা, যাঁরা ক্ষমতার কাছাকাছি। এই অন্য রকমকে প্রান্তিকীকরণের চেষ্টাটা সর্বত্র— বর্ণ, জাত, সম্প্রদায়, ধর্ম, লিঙ্গ, যৌনতা সব ক্ষেত্রেই। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও রয়েছে। ফলে মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসার বন্দোবস্তটা গোটাটাই রোগলক্ষণ ধরে। অসুস্থ মানুষটি ওই লক্ষণগুলোর তলায় চাপা পড়ে যান। কারণ তিনি যা-ই বলছেন, সেগুলো সবই আমার স্বাভাবিকতার দাবির কাছে অস্বাভাবিকতার লক্ষণ হয়ে উঠছে। নিয়ন্ত্রণের গোটা কাঠামোটাই দাঁড়িয়ে থাকে, এই অন্য রকমকে অস্বীকার করা বা স্বীকার করতে বাধ্য হলে, তার সীমা বেঁধে দেওযার প্রক্রিয়ার উপরে।’’ আর সমাজের তরফে সাজিয়ে দেওয়া সেই সীমাকেই অতিক্রম করতে ‘ম্যাড স্টোরিস’-এর আয়োজন।

এ কাজ এক দিনে হয়নি। বহু দিন ধরে চলেছে ব্যবস্থাপনা। প্রথমে হয়েছে মনোরোগী ও মনোরোগ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের কাছ থেকে এক এক লাইনের গল্প সমগ্র। গল্প তো নয়, সবই অভিজ্ঞতা তাঁদের জীবনের। তার পরে তা সাজিয়ে তোলা হয়েছে শিল্পের মাধ্যমে। তবে কি না নিয়ে যাওয়া হয়েছে ব্যস্ত শপিং মলে। যেখানে সুস্থ বলে পরিচিতরা নানা উন্মাদনায় মাতেন। সাধারণত মনোরোগীদের জায়গা থাকে না সে সবে!

সাউথ সিটি মলে এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ৪ তারিখ পর্যন্ত। যে কোনও সময়ে মূল প্রবেশ দ্বার দিয়ে ঢুকে, দু’পা এগোলেই দেখা যাবে অচেনা এক মনোজগতের নানা কথা।

Mental Health

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।