প্রেমিক-প্রেমিকাদের মন টেলিগ্রাম-মুখী
হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ছে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপের প্রতি ঝোঁক। প্রেমিক-প্রমিকাদের কাছেও কি আকর্ষণ বাড়ছে অন্য অ্যাপগুলোর? অনেকেই এমনটা বলছেন।
কলেজপড়ুয়া সুকন্যা সেনের সঙ্গে তাঁরই সহপাঠীর গত এক বছরের প্রেমের সম্পর্ক। হোয়াটসঅ্যাপ তাঁদের প্রেম কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল? সুকন্যার কথায়, ‘‘লকডাউনের পর থেকে দেখা সাক্ষাৎ কমে গিয়েছে। ফলে ভিডিয়ো কলই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো কলে কথা বলতাম। পাশাপাশি টেলিগ্রামেও ভিডিয়ো কল করেছি। কিন্তু হালে হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি পলিসি পাল্টানোর জন্য বিরক্ত লাগছিল। এখন টেলিগ্রামই বেশি ব্যবহার করছি।’’ সুকন্যা এবং তাঁর প্রেমিকের মতোই আরও বহু যুগলই একান্ত কথোপকথনের জন্য বেছে নিচ্ছেন টেলিগ্রাম।
টেলিগ্রাম কোথায় কোথায় আলাদা হোয়াটসঅ্যাপের থেকে? কী বলছেন ব্যবহারকারীরা?
একসঙ্গে সিনেমা: হোয়াটসঅ্যাপে সর্বাধিক ১০০ এমবি মাপের ফাইল পাঠানো যায়। সেখানে টেলিগ্রামে দু’জিবি পর্যন্ত ফাইল পাঠানো যায় অন্যকে। টেলিগ্রামের মাধ্যমে দীর্ঘ দিন বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছেন বেসরকারি কোম্পানির কর্মী পুষ্পল সরকার। পুষ্পলের মতে, ‘‘লকডাউনে সিনেমা হল বন্ধ। দু’জনে একসঙ্গে সিনেমা দেখার কথা ভাবতাম। কম্পিউটার চালিয়ে স্ক্রিন শেয়ার করে দেখাই যেত। কিন্তু সব সময় সেটার ইচ্ছে করে না।’’ তাই পুষ্পল এবং তাঁর বান্ধবী বেছে নিয়েছেন টেলিগ্রাম। ‘‘দু’জনে একসঙ্গে ‘ওয়ান-টু-থ্রি-স্টার্ট’ বলে নিজের নিজের ফোন থেকে একই সিনেমার ফাইলটা চালিয়ে নিতাম। মনে হত, দু’জনে একসঙ্গে বসেই সিনেমা দেখছি। পাশাপাশি কিছু বলার থাকলে টেলিগ্রামে লিখেও দিতে পারতাম’’, মত তাঁর।
সময় মতো মেসেজ: হোয়াটসঅ্যাপে আগে থেকে ঠিক করে রেখে, পরে নির্দিষ্ট সময়ে মেসেজ পাঠানোর উপায় নেই। টেলিগ্রামে তা আছে। বিজ্ঞাপনসংস্থায় কর্মরত রণিতা চৌধুরী যেমন বলছেন, ‘‘আমার বয়ফ্রেন্ড এখন ইউরোপে। ওর সঙ্গে আমার সাড়ে তিন ঘণ্টার পার্থক্য। কোনও দিন যদি চাই, ও ঘুম থেকে উঠে আমার একটা ভাল মেসেজ পাক, তার উপায় হোয়াটসঅ্যাপে নেই। আমি ওই সময়টা অফিসের ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। ফলে সব সময় ওর ভোরে হোয়াটসঅ্যাপ করা হয়ে ওঠে না। তাই টেলিগ্রামই পছন্দ।’’ আগে থেকে লিখে, বয়ফ্রেন্ডের ঘুম ভাঙার সময়ে মেসেজ শিডিউল করে রাখেন রণিতা। নিজের অফিসের ব্যস্ত সময়েও সেই মেসেজ ঠিক পৌঁছে যায় তাঁর বয়ফ্রেন্ডের কাছে।
ছোটবেলার প্রেম: ফোন নম্বর না থাকলে হোয়াটসঅ্যাপে কাউকে পাওয়া যায় না। টেলিগ্রামে তা নয়। এর সুবিধা পেয়েছেন শুভ্র চট্টোপাধ্যায়। ছোটবেলায় শুভ্র যে পাড়ায় থাকতেন, সেই পাড়ারই এক মেয়ের প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ ছিল। কিন্তু নামটুকু বাদ দিয়ে আর কিছুই মনে ছিল না। তার ১৫ বছর পরে একদিন কী মনে করে, টেলিগ্রামের গ্লোবাল সার্চে সেই নাম দিয়ে খুঁজতেই পেয়ে গেলেন সেই ছোটবেলার প্রেমের সন্ধান। ছবি দেখেই চিনলেন তাঁকে। ‘‘আমাদের প্রেমটা টেলিগ্রামেই শুরু। নামটা দিয়ে সার্চ করতেই ওই নামে যাঁরা যাঁরা আছেন, তাঁদের সবার ছবি দেখতে পেলাম। আমি যাকে খুঁজছিলাম, তাকেও পেয়ে গেলাম। তারপর পিং করলাম। ব্যস, কথা শুরু!’’ বলছেন শুভ্র।
তবে এর একটা খারাপ দিকও আছে। মধুরিমা হালদার যেমন বলছেন। ‘‘আমার নাম সার্চ করে অনেকেই টেলিগ্রামে প্রোফাইলটা দেখতে পায়। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন অর্ধচেনা বা অচেনা মানুষ পিং করেন। হয়তো কখনও রাস্তায় বা পার্টিতে আলাপ হয়েছিল। খুব অবাক হয়ে যেতাম, কী করে খুঁজে পাচ্ছেন ভেবে! তারপর ইউজার নেম থেকে নিজের নামটা মুছে অন্য নাম রেখেছি। এর পর থেকে শান্তি’’, বলছেন মধুরিমা।
ভালয়-মন্দয় মানুষ। তেমনই ভালয়-মন্দয় অ্যাপও। তবে সেই মন্দ এবং ভালর মধ্যে থেকেই বহু প্রেমিক-প্রেমিকাই এখন হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে টেলিগ্রাম-মুখী। প্লেস্টোর বা অ্যাপস্টোর থেকে সহজে ডাউনলোড করে নিলেই হল। তারপরেই শুরু হয়ে যাবে ভালবাসার কথা।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপে ভয়! ‘দল’ বদলে দলে দলে সিগন্যাল আর টেলিগ্রামে
আরও পড়ুন: হাঁটাহাঁটির অভ্যাসকে মজাদার বানাবেন কী ভাবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy