Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Life Style

কন্টিনেন্টাল স্বাদের সঙ্গেই ঝরিয়ে ফেলুন পেট-কোমরের অবাঞ্ছিত মেদ

আমিষ প্রোটিনে আছে উপকারী ও অপকারী দু–রকম চর্বিই৷ অপকারী চর্বি ছেঁটে ফেলে স্বাস্থ্যকর লিন প্রোটিন, যেমন, মাছ, বিফ–পর্ক–চিকেনের কিছু অংশ, ডিমের সাদা খান৷ নিরামিষ প্রোটিনে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে৷ কাজেই সয়াবিন, বিন–ডাল–ছোলা–রাজ, ডাব্লড টোনড দুধ ও এই দুধে বানানো খাবার খান৷ ক্যালোরি বেশি বলে তৈলাক্ত মাছ–মাংস, ডিমের কুসুম, হোল মিল্ক ও এই দুধের চিজ, দই, ছানা, আইসক্রিম, দুধের সর ব্রাত্য এই ডায়েটে৷

ঠিকঠাক হলে কন্টিনেন্টাল খাবারও কমাতে পারে মেদ।

ঠিকঠাক হলে কন্টিনেন্টাল খাবারও কমাতে পারে মেদ।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ১৮:৫৫
Share: Save:

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আর্থার অ্যাগাস্টনের হাতে তৈরি এই কন্টিনেন্টাল ডায়েট যদি খেতে পারেন, পেট–কোমরের মেদ কমবে দ্রুত, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা থাকবে কমের দিকে, ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বা প্রকোপ কমবে৷ কমবে হৃদরোগের আশঙ্কা৷ তবে ভারতীয় তথা বাঙালি খাবার ছাড়া মুখে না রুচলে খাবারের একটু এদিক ওদিক করে নিতে হতে পারে৷

কী আছে ডায়েটে :

আছে ভাল কার্বোহাইড্রেট–ফ্যাট ও লিন প্রোটিন৷ কোনটা কীভাবে খাবেন দেখে নিন৷

• ভাল কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইসিমিক ইনডেক্স কম থাকে৷ অর্থাৎ খেলে রক্তে সুগার ধীরে ধীরে বাড়ে ও পেট বেশিক্ষণ ভরা থাকে৷ কমে ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের আশঙ্কা৷ কাজেই সাদা ভাত, ময়দা, সাধারণ পাস্তা–নুডলস, মিষ্টি, ফলের রসের বদলে খান শাক–সবজি–ফল, আটার রুটি, ব্রাউন রাইস, হোল গ্রেইন ব্রেড–পাস্তা–নুডলস, প্রাকৃতিক ওটস৷

ট্রান্স ফ্যাট বারণ৷ ফলে মার্জারিন, বনস্পতির সঙ্গে বাদ যাবে প্রসেসড খাবার, যেমন, হাফ–কুকড ফুড, কেক, পেস্ট্রি, চিকেন নাগেট, প্যাটিস, বেকন, সসেজ, এমনকী বেশ কিছু বিস্কুটও৷

• অল্প করে ভাল ফ্যাট খান৷ যেমন, এক টেবিল চামচ বাদাম/বীজ, অলিভ–ক্যানোলা–ফ্ল্যাক্স্ বা ওয়ালনাট অয়েল, এক এক দিন এক একটা বা মিলিয়ে–মিশিয়ে৷ সারা দিনে ৩ চা–চামচের বেশি নয়৷ ঘি–মাখন স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভরপুর৷ অতএব তাতে নিষেধাজ্ঞা৷

• আমিষ প্রোটিনে আছে উপকারী ও অপকারী দু–রকম চর্বিই৷ অপকারী চর্বি ছেঁটে ফেলে স্বাস্থ্যকর লিন প্রোটিন, যেমন, মাছ, বিফ–পর্ক–চিকেনের কিছু অংশ, ডিমের সাদা খান৷ নিরামিষ প্রোটিনে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে৷ কাজেই সয়াবিন, বিন–ডাল–ছোলা–রাজ, ডাব্লড টোনড দুধ ও এই দুধে বানানো খাবার খান৷ ক্যালোরি বেশি বলে তৈলাক্ত মাছ–মাংস, ডিমের কুসুম, হোল মিল্ক ও এই দুধের চিজ, দই, ছানা, আইসক্রিম, দুধের সর ব্রাত্য এই ডায়েটে৷

• জিরে, ধনে, লংকা, গোলমরিচ, গরম মশলা, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, সর্ষে, ভিনিগার, সোয়া বা চিলি সস, রেগুলার মেয়োনিজ ব্যবহার করুন৷ চিনি, ঘি, মাখন বাদ৷

• খাওয়ার পর মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে এক টুকরো ডার্ক চকোলেট বা মাঝেমধ্যে মাখনতোলা দুধ ও সুগার–ফ্রি দিয়ে বানানো পুডিং বা পায়েস এক চামচ খেতে পারেন৷ ময়দা, ঘি, মাখন, চিনি দিয়ে বানানো কিছু চলবে না৷ লো–ফ্যাট দুধের সঙ্গে অল্প কলা বা আম মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খান৷ দু–এক টুকরো কালোজাম, স্ট্রবেরি, আপেল, আনারস, পেপে দিয়ে বানানো স্যালাড বা কাস্টার্ড খেতে পারেন৷ ফলের রস বা শুকনো ফল চলবে না৷

• মিষ্টি পানীয় নয়, জিরো ক্যালোরি হলেও নয়৷ চিনি ছাড়া কফি দিনে এক–আধ কাপ বড়জোর ৷ ডাবল টোনড দুধ মিশিয়ে নিলে ক্ষতি নেই৷

ডায়েটিং ও ব্যায়াম , ধাপে ধাপে:

ডায়েট শুরু করার আগে মন্দ কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে শরীরকে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া হয়৷ তারপর শুরু হয় আসল ডায়েট৷

ধাপ ১ : দু–সপ্তাহ থেকে দু–মাসের মতো সময় নিয়ে স্টার্চি খাবার, যেমন, ভাত, রুটি, নুডলস, পাস্তা, চিড়ে, মুড়ি, খই আলু, রাঙা আলু, বিট, ভুট্টা, স্কোয়াশ, ফল একটু একটু করে কমিয়ে, এক সময় বন্ধ করা হয়৷ বারণ হয় মিষ্টি, ভাজা, ফলের রস, মদ৷ খেতে হয় কম চর্বির মাছ, চামড়া ছাড়ানো দেশি মুরগির মাংস, রেডমিটের যে অংশে চর্বি কম থাকে সে রকম মাংস, সয়াবিন ও সয়াবিনজাত দুধ–দই, ডাবলড টোনড দুধ ও এই দুধের দই–ছানা, অ্যাভোক্যাডো, বাদাম, বীজ, সব রকম শাক, কম ক্যালোরির সবজি ইত্যাদি৷

ধাপ ২ : প্রতি সপ্তাহে একটি করে ভাল কার্বোহাইড্রেট অল্প করে দেওয়া হয়৷ প্রথম সপ্তাহে ফাইবারযুক্ত কম মিষ্টি ফল দিলে দ্বিতীয় সপ্তাহে দেওয়া হয় লো–গ্লাইসিমিক ইনডেক্সের একটা সিরিয়াল, তৃতীয় সপ্তাহে আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড বা ভাতের মধ্যে একটা, চতুর্থ সপ্তাহ আরেকটি ফল, পঞ্চম সপ্তাহে সিরিয়াল৷ দুপুরে ও রাত্রে কম করে দু–কাপ সবজি, প্রোটিন ও সারা দিনে দুধের দু–তিনটে পদ খেতে হয়৷ মোটামুটি ৬ সপ্তাহ চলে এই ধাপ৷

আর্থারের মতে ফল খান দুপুরে বা রাতে খাওয়ার পর৷ সকালে খেলে আরও বেশি খাওয়ার ইচ্ছে হতে পারে৷ সকালে প্রাকৃতিক ওটস খেলে সঙ্গে একটা প্রোটিন খান৷

ষষ্ঠ সপ্তাহের শুরুতে এসে দিনে তিনটে ফল ও তিন রকম সিরিয়াল খেতে হয়৷ ইচ্ছে হলে একটি সিরিয়ালের বদলে ফাইবারসমৃদ্ধ শাক–সবজি খেতে পারেন৷

ধাপ ৩ : ধাপ ২–এর ষষ্ঠতম সপ্তাহের মতো খাবার খেয়ে যেতে হয়৷ দিনে ২০০০ ক্যালোরির মতো৷ তার মধ্যে কার্বোহাইড্রেট ২৮ শতাংশ, অর্থাৎ ১৪০ গ্রাম৷ সাধারন সুষম ডায়েটে যেখানে ৪৫–৬৫ শতাংশ বা ২২৫–৩২৫ গ্রাম খাওয়া হয়৷ ফাইবারযুক্ত শাক–সবজি–ফল থাকে পর্যাপ্ত৷ মন্দ ফ্যাট ঝেড়ে ফেলে প্লেট সাজাতে হয় ভাল ফ্যাট ও লিন প্রোটিনে৷

মাঝেমধ্যে এক–আধ দিন ভুলভাল খেয়ে নিলেও সমস্যা নেই৷ কারণ এত সব নিয়ম মেনে চলতে চলতে পেট ছোট হয়ে যায়৷ ফলে খুব বেশি খাওয়া সম্ভব হয় না৷

• সপ্তাহে ৫–৬ দিন ৩০–৪৫ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম করতে হয়৷ জোর কদমে হাঁটা জগিং, সাঁতার, সাইক্লিং–এর সঙ্গে হালকা ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে ক্যালোরি ঝড়ার পাশপাশি বিপাক ক্রিয়ার হার বাড়ে বলে চট করে চর্বি জমতে পারে না৷ যোগা–প্রাণায়ামও অল্পস্বল্প করা দরকার৷

আরও পড়ুন: পাখির মল থেকে ময়ালের মালিশ, রূপচর্চার আজব উপায়

আরও পড়ুন: বাড়ছে মেদ? ওজন ঝরিয়ে ফেলুন এই প্রোটিন ডায়েটে

স্যাম্পেল মেনু চার্ট :

ডায়েটের একটা উদাহরণ দেওয়া হল৷ আগে যেমন বলা হয়েছে, খুব ধীরেসুস্থে শরীরকে সইয়ে নিয়ে তবে এই পর্যায়ে আসবেন৷ রাতারাতি শুরু করে দিলে কিটোসিস হবে৷ ক্লান্তি, গা–বমি, মাথাব্যথায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে যাবেন৷ কখনও জলশূন্যতাও হতে পারে৷ তার ধকলে সব বরবাদ হয়ে যেতে পারে৷

কার্ব খুব কম খেলে এনার্জি আসে ফ্যাট ভেঙে, কিটোন নামের রাসায়নিক জমতে শুরু করে শরীরে৷ যাকে বলে কিটোসিস৷ চূড়ান্ত ফিটনেস না থাকলে যার ধকল সামলানো কঠিন৷

স্টার্চি খাবার ও অপকারী ফ্যাট বাদ দেওয়ার পর যা খেতে হবে তার নমুনা দেওয়া হল৷ ক্যালোরি মোটামুটি ঠিক রেখে খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী একটু রদবদল করে নেবেন৷ দরকার হলে সাউথ বিচ ডায়েট কুক বুক বা পুষ্টিবিদের সাহায্য নিতে পারেন৷

প্রাতরাশ : দু–তিনটে ডিমের সাদা অংশ দিয়ে ওমলেট বানান৷ তাতে পেঁয়াজ, লংকা, চিকেন, পালং, মাশরুম, গাজর, হ্যাম, ধনে পাতা, স্মোকড স্যালমন ইত্যাদি মিশিয়ে নিন৷ সাধারন ওমলেটের সঙ্গে স্মোকড স্যামন খেতে পারেন৷ পালং, হ্যাম ও ডিম বেক করেও খেতে পারেন৷ সঙ্গে খান চিনি ছাড়া চা বা কফি৷

দুপুরে ও রাতে : দুপুরে কাঁচা বা সেদ্ধ সবজি, সেদ্ধ চিকেন বা কুচো চিংড়ি দিয়ে স্যালাড বানান৷ লেবুর রস, ধনেপাতা, গোলমরিচ দিন৷ সঙ্গে খান ক্লিয়ার স্যুপ বা ঘরে বানানো ঠান্ডা চা৷ রাতে তিন আউন্স অর্থাৎ একটা তাসের মাপে মাছ/চিকেন বা পর্ক নিয়ে গ্রিল করে খান৷ সঙ্গে গ্রীল্ড সবজি, স্যালাড৷ ইচ্ছে হলে ডিনার ও লাঞ্চ বদলা–বদলি করে নিতে পারেন৷ ডেজার্ট হিসেবে ছোট এক টুকরো চিজ কেক বা কাস্টার্ড বা এক টুকরো ডার্ক চকলেট খান৷

টুকটাক : সকালে–বিকেলে খিদে পেলে রোস্টেড টার্কি বা ছোলা খান৷

অন্য বিষয়গুলি:

LifeStyle LowCurbContinentalFood ContinentalFood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy