টেপ ওয়র্ম ডায়েট। ছবি—শাটারস্টক।
ডায়েট করে ওজন কমছে না? নাকি খেতে এত ভালবাসেন যে ডায়েটিং করতেই পারেন না? তা হলে অপেরা গায়িকা মারিয়া ক্যালাসের পদ্ধতি মেনে চলুন। প্রথমে খান টেপওয়ার্ম বা ফিতাকৃমির ডিমে ভরা পিল। ডিম ফুটে কৃমি জন্মে গেলেই ব্যাস। সময়ের সঙ্গে কৃমি বড় হবে, কখনও প্রায় ২০–৩০ ফুট লম্বা হবে। অন্ত্রের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শরীরের সব খাবার ও পুষ্টি শোষণ করে সে পুষ্ট হবে আর যা খুশি, যত খুশি খাওয়া সত্ত্বেও পুষ্টির অভাবে হাড় জিরজিরে হবেন আপনি।
অত রোগা হতে চান না? তাহলে ওজন মাপমতো হওয়ার পর ডাক্তারের কাছে গিয়ে কৃমি মারার ওষুধ খেয়ে নেবেন। তবে কৃমি মরে গেলে কিন্তু খাওয়া কমাতে হবে। না হলে ওজন আবার বাড়তে শুরু করবে।
বিপদ হবে কি না? অবশ্যই হতে পারে। সে রকম হলে প্রাণও চলে যেতে পারে।
প্রাণঘাতী কৃমি
• ওজন কমবে, অপুষ্টি–দুর্বলতা হবে, হতে পারে ডায়েরিয়া, পেটব্যথা, গা–বমি, জ্বর। জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে কথায় কথায়। আর ফিতাকৃমিতে অ্যালার্জি থাকলে তো হয়েই গেল। প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে যেতে পারে।
• কৃমি হলে কিছু মানুষের কার্বোহাইড্রেট আসক্তি এত বাড়ে যে কৃমি সে সব খেয়ে খেয়ে শেষ করতে পারে না। ফলে ওজন বাড়ে। সঙ্গে তৈরি হয় অতিভোজনের বদভ্যাস।
• কৃমি অন্ত্রে থেকে গেলে তবু যা হোক, কিন্তু বাইল ডাক্ট, প্যানক্রিয়াটিক ডাক্ট, অ্যাপেনডিক্স বা ব্রেনে চলে গেলে ঘোর বিপদ। নির্দিষ্ট প্রত্যঙ্গের কাজে ব্যাঘাত হয়। কখনও ব্যাঘাত হয় ফুসফুস–লিভারের কাজে। বিপদ বাড়ে। নিউরোসিস্টিসারকোসিস অর্থাৎ কৃমি সংক্রমণের জের ব্রেনে পৌঁছোলে স্মৃতি ও দৃষ্টিশক্তির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। হতে পারে খিঁচুনি। এমনকী মৃত্যুও। এ রকম পরিস্থিতিতে শুধু কৃমি মারার ওষুধ খেয়ে কাজ হয় না। প্রদাহ বা খিঁচুনি কমানোর ওষুধ দিতে হয়। ব্রেন ফুলে গেলে মাথায় জমা জল বার করতে হয়। সিস্ট হলে করতে হয় অপারেশন। অর্থাৎ বিপদের শেষ নেই।
• বিপদ আছে আরও। এইসব পিলের দাম খুব বেশি। এফডিএ অ্যাপ্রুভও নয়। কাজেই ওই ওষুধে যদি জ্যান্ত কৃমির ডিম না থাকে, তা হলে ওজন খাওয়াসত্ত্বেও হু হু করে ওজন বাড়তে থাকে। নালিশ করার জায়গা নেই।
‘কাজেই ডায়েটের ইতিহাস যত উৎসাহব্যাঞ্জকই হোক না কেন, এ থেকে দূরে থাকাই ভাল।’ জানালেন পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল।
আরও পড়ুন : বদ্ধ ঘরে বসে কাজ, ব্যথা বেদনার পৌষমাস, কিন্তু বাঁচবেন কী করে?
ডায়েটের ইতিহাস
ভিক্টোরিয়ান যুগে প্রথম শুরু হয় এই ডায়েট। কারণ তখন সৌন্দর্য মানে ছিল টিবি রোগীর মতো ফ্যাকাশে, হাড় জিরজিরে চেহারা। মনমতো ফিগার পাওয়ার জন্য কী না করতেন মহিলারা। কোমর সরু রাখার তাগিদে টাইট করসেট পরে কোমরের হাড় ও আভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গের গঠন পাল্টে ফেলতেন। কেউ খেতেন ফিতাকৃমির ডিম। কেউ করতেন অন্যকিছু। যুগ পাল্টেছে, পাল্টেছে সৌন্দর্যের ধারণা, তার সঙ্গে এসেছে আরও নতুন পাগলামির ঢেউ। তবে টেপওয়ার্ম ডায়েটের বাজার খুব একটা পড়েনি কখনও।
বিংশ শতাব্দীতেও এর ব্যাপক রমরমা ছিল। অপেরা গায়িকা মারিয়া ক্যালাসের ডুবন্ত কেরিয়ার চাঙা করতে এই ডায়েটই প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল বলে মনে করেন অনেকে। বাড়তি ওজনের হাত ধরে তাঁর গলার স্বর যখন ভারী হয়ে যাচ্ছিল, চলতে–ফিরতে কষ্ট হচ্ছিল, খারাপ হচ্ছিল স্বাস্থ্য, আর সবচেয়ে বড় কথা, একের পর এক প্রযোজক বাতিল করছিলেন তাঁকে, সবার অলক্ষ্যে একবছরে ৪৫কেজি ওজন কমিয়ে আবার মঞ্চে ফিরে আসেন তিনি। সবার মনে তখন একই প্রশ্ন, কীভাবে এই অসাধ্য–সাধন হল? কিন্তু তিনি মুখ খোলেননি।
কিছু দিন পর জানা যায় তিনি ফিতাকৃমির চিকিৎসা করাচ্ছেন, তখন সবাই ধরে নেন, তাহলে তিনি রোগা হয়েছেন টেপওয়ার্ম ডায়েট খেয়েই। কারণ তখনএই ডায়েটের বাজার খুব গরম ছিল। এই ঘটনার পর তার আরও রমরমা হয়। মেক্সিকোর এ মাথা থেকে ও মাথা ১৫০০ ডলারের বিনিময়ে বিকোতে শুরু পিল, যার ভেতর বসে আছে জ্যান্ত কৃমির ডিম।
আরও খবর : মাঝে মধ্যেই রাত জাগেন? বিপদ এড়াতে এই নিয়মগুলো মেনে চলুন
অনেকের মতে এখনও নাকি হংকং–এর বিভিন্ন জায়গায় এর প্রচলন আছে। ‘ইজি টু সোয়ালো’, ‘স্যনিটাইজ্ড টেপওয়ার্ম’, ‘ওয়েপন্স অ্যাগেন্স্ট ফ্যাট’, ‘দা এনিমি দ্যাট ইজ শর্টেনিং ইওর লাইফ’ ইত্যাদি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে রমরম করে চলেছে তার ব্যবসা। তবে পুষ্টি–ইতিহাস বিশারদ সুজান তাঁর ‘হান্ড্রেড ইয়ার্স ডায়েট, আমেরিকাস ভোরেসাস অ্যাপেটাইট ফর লুজিং ওয়েট’ বইতে জানিয়েছেন, আজকাল আর এর ক্রেজ নেই খুব একটা।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রেল অ্যান্ড প্রিভেনশনের বিজ্ঞানীদেরও তাই মত। তাঁরা জানিয়েছেন, ফিতাকৃমি সংক্রমণের নতুন যে সব কেস আসছে, তার বেশিরভাগের মূলে আছে আধসেদ্ধ গরু বা শুয়োরের মাংস খাওয়া। ওজন কমানোর জন্য আর বেশি মানুষ এ সব করছেন না।
খুব ভালো খবরই বলতে হবে একে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy