অনেক অভিভাবক নিজেরাই সন্তানের ঘর বা পড়ার জায়গা গুছিয়ে দেন। এতে কিন্তু ওদের গোছানোর অভ্যেস তৈরি হয় না। তাই সন্তানের ঘর গোছানোর দায়িত্ব দিতে হবে তাকেই। সঙ্গে বরং আপনিও থাকুন বন্ধুর মতোই।
ছোট থেকেই যদি শিশুটি নিজের ঘর পরিষ্কার রাখতে শেখে, তাতে ক্ষতি কী? বরং এই কাজটি করার মধ্য দিয়েই সব কিছু গুছিয়ে রাখার মানসিকতা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে দায়িত্ববোধ এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। শিশুদের দিয়ে কোনও কাজ করানোটা অবশ্য প্রথমেই খুব সহজ হবে না। তবে একটু বুদ্ধি করে কাজের প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ বাড়াতে পারেন অভিভাবকেরাই।
আগ্রহ বাড়ানোর উপায়
• প্রথমেই মনে রাখতে হবে, জোর করে বাচ্চাদের দিয়ে কোনও কাজ করানো উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীতই হবে।
• বয়সে ছোট হলেও বাচ্চাদের আলাদা ব্যক্তিত্ব থাকে, মতামত থাকে। তাদের সেই ব্যক্তিত্বকে সম্মান করতে হবে।
• সন্তানের মন বুঝে সেই অনুযায়ী তাকে কাজ করিয়ে নিতে হবে। ভালবাসা এবং উৎসাহ পেলে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
• প্রথম প্রথম যেমন ভাবেই নিজের ঘর বা পড়ার জায়গা বাচ্চারা গোছানোর চেষ্টা করুক না কেন, প্রশংসা করুন। ভুল ধরতে গেলে কাজের প্রতি উৎসাহ হারাবে।
• সকলের সামনে বাচ্চার নিন্দে বা সমালোচনা করবেন না। এতেও ওর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরতে পারে। কথাবার্তায়, আচার-আচরণে বরং ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে ওকে উৎসাহিত করুন।
• নিজে বাড়ির কাজ করার সময়ে বাচ্চার সাহায্য নিন। তাকেও ছোটখাটো কাজে নিযুক্ত করুন।
• সন্তান যখন নিজের ঘর গোছাবে, সঙ্গে থাকতে হবে অভিভাবককেও। তাকে সাহায্য করার জন্য। তবে ঘর গোছানোর সময়ে নিজের মতামত না দিয়ে, সন্তানের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
• পরিবারের সকলকেই কিছু কিছু কাজের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে। এতে বাচ্চা দেখে দেখেই শিখবে, নিজের কাজ কী ভাবে নিজে করতে হয়। একই সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার অভ্যেসও তৈরি হবে।
• বাচ্চারা সব সময় খেলাচ্ছলে কাজ করতে পছন্দ করে। তাকে দিয়ে কোনও কাজ করানোর আগে সেটা মাথায় রাখুন।
• বাড়ির সকলের মধ্যে সব কিছু সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার অভ্যেস থাকলে, ছোট থেকে বাচ্চারও সেই অভ্যেসই তৈরি হয়। নিজেরা এলোমেলো হয়ে থাকলে, বাচ্চার মধ্যেও সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখার প্রবণতা কম তৈরি হয়।
নিজের ঘর, নিজের রাজত্ব
অনেক বাচ্চারই আলাদা ঘর থাকে। অথবা আলাদা বিছানা থাকে। বাচ্চার ঘর ও বিছানাটা যদি তার পছন্দ মতো হয়, তবে বাচ্চার মধ্যেই তাগিদ তৈরি হয় তা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার। বাড়ির খুদে সদস্যের বিছানা, বালিশ কিংবা তার ঘরের আসবাব নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার পছন্দকেই প্রাধান্য দিতে হবে। ঘুম থেকে ওঠার পরে মা-বাবা যদি নিজেদের বালিশটা নিজেরা গোছায়, তাঁদের দেখে শিশুও নিজের বালিশটা নিজে গুছিয়ে রাখতে শিখবে। নিজের খেলনার জিনিস, জামাকাপড় সবটাই নিজের হাতে গুছিয়ে রাখা শেখাতে হবে। তবে বাচ্চাকে একা না ছেড়ে দিয়ে মা-বাবা বা বাড়ির অন্য অভিভাবকদের সঙ্গে থাকতে হবে।
বাড়িতে বাচ্চা থাকা মানেই খেলনাও থাকবেই। সেইগুলি যত্রতত্র ফেলে না রেখে এক জায়গায় গুছিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। শুরু থেকেই বাচ্চারা যদি দেখে, তার খেলনাগুলি নির্দিষ্ট একটা জায়গায় গোছানো রয়েছে, তবে সেও খেলার পর সেখানেই খেলনাগুলি গুছিয়ে রাখবে। যদি কখনও সেই কাজ করতে ভুলে যায়, সে ক্ষেত্রে নিজে কাজটি করবেন না। সন্তানকে ডেকে এনে, তাকেই খেলনাগুলি গুছিয়ে রাখতে বলুন। শিশুটি নিজের হাতে কোনও জিনিস তৈরি করলে, সেটি সুন্দর করে তার ঘরেই সাজিয়ে রাখুন। মনে রাখতে হবে, বাচ্চাদের ঘরে সব জিনিসই যেন তার নাগালের মধ্যেই থাকে।
পড়ি লিখি যতনে
অনেক সময়েই বাচ্চাদের নিজেদের ঘর না থাকলেও পড়ার জন্য আলাদা একটা ঘর থাকে। নিদেনপক্ষে আলাদা একটা জায়গা, পড়ার টেবিল— এইগুলি তো থাকেই। সেই জায়গাটাও সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি। পড়ার ঘর বা জায়গাটি যদি সুন্দর ভাবে গোছানো থাকে, তবে বাচ্চাদেরও পড়ায় মন বসে। এবং পড়তে বসার বিষয়ে আগ্রহও বাড়ে। আর নিজের পড়ার টেবিল যদি তারা নিজেরাই গুছিয়ে রাখে, সে ক্ষেত্রে বই খাতার সঙ্গেও একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পড়ার বই, লেখার খাতা আলাদা আলাদা করে গুছিয়ে রাখতে হবে। পেন-পেনসিল-ইরেজ়ার-ৈসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীও নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে শেখান সন্তানকে। ছোট থেকেই বাচ্চাদের মধ্যে এই অভ্যেসগুলি তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রতিযোগিতার যুগে আত্মনির্ভরশীল হওয়াটা খুবই দরকার। আর সেই অভ্যেসটা তৈরি হোক ছোট থেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy