সামান্য সর্দি, কাশি, জ্বরে ক’টা দিন ভুগলেও যেন বিরক্ত লাগে। বিভিন্ন কারণে সার্জারির মধ্য দিয়েও যেতে হয় অনেক রোগীকে। সার্জারির পরে চিকিৎসকও কিছু দিনের বিশ্রাম লিখে দেন। আবার পক্স, পায়ের হাড় ভাঙার মতো সমস্যাতেও বাড়িতে বন্দি হয়ে থাকতে হয় দিনের পর দিন। এ দিকে বাড়িতে বসে বসে মেজাজের বারোটা। যে কোনও অসুখের এই রিকভারি পিরিয়ডটা কাটিয়ে ওঠাও কিন্তু একটা চ্যালেঞ্জ।
মিউজ়িক থেরাপি
গান হোক বা কোনও ইনস্ট্রুমেন্টাল মিউজ়িক... সুরের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। আর সুফলও অনেক। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ভাল মিউজ়িক শুনলে হার্ট রেট ইমপ্রুভ করে, মস্তিষ্কের স্টিমুলেশন ভাল হয়, টেনশনও কমে। ফলে ক্লান্তি কেটে যায়। মানসিক ভাবে একজন রোগী অনেকটাই সজীব হয়ে ওঠেন। চিকিৎসা চলাকালীন পাশাপাশি চলতে পারে মিউজ়িক থেরাপি। কিছু ক্ষেত্রে আবার রোগীকে লাইভ মিউজ়িক শোনানো হয়। এই ধরনের থেরাপি নাকি অনেক বেশি সহায়ক।
বন্দি নয়
অসুখ করলে বাড়িতে বন্দি হয়ে কিছু দিন তো কাটাতেই হয়। চার দেওয়ালের মধ্যে দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে শরীর-মন আরও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবে চলাফেরা বন্ধ না হলে, দিনে এক বার কারও সঙ্গে বাইরে থেকে কিছুক্ষণের জন্য একটু ঘুরে আসতে পারেন। রাস্তায় বেরোনোর উপায় না থাকলে অন্তত বাড়ির বারান্দায় গিয়ে বসুন। সামনের সবুজ গাছ বা রাস্তায় মানুষজনকে দেখলেও মন ভাল হয়ে যায়। যে ঘরে থাকবেন, সকালে সেই ঘরের জানালাটাও খুলে রাখুন। বাইরের রোদ-হাওয়া আসতে দিন। রোগীর ঘরের গুমোট ভাব কেটে যাবে।
রোগীর জন্য
নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া এবং ঘুম জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সে ক’টা দিন পথ্য মেনে চলুন আত্মীয় বা স্বজনবান্ধবকে নিজের সমস্যার কথা বারেবারে বলার চেষ্টা করবেন না। যে আপনার ব্যাপারে সচেতন সে নিজেই যত্ন নেবে অসুখের দিনগুলি বিমর্ষ হয়ে না কাটিয়ে বই পড়া, সিনেমা দেখা, ঘুমানো... নিজের মতো করে যতটা পারবেন, সময় কাটিয়ে নিন। চেষ্টা করুন, ছুটির মেজাজে দিন কাটাতে। এতে সময় কাটবে তাড়াতাড়ি
পেন্টিং, রিডিং
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার ফলে অনেক সময়ে অফিস-কলেজ বন্ধ থাকে। আবার সারা দিন বাড়িতে বসেও সময় কাটতে চায় না। তখন রং-তুলি, কাগজ, কলম টেনে নিয়ে আঁকতে বসে যেতে পারেন। কিংবা ভাল বইও পড়ে ফেলতে পারেন। গল্পের বই হোক বা কাজের বই... যা ইচ্ছে নিয়ে বসে পড়ুন। একটানা পড়ে ক্লান্ত হয়ে গেলে কাউকে ডেকে পড়ে শোনাতে বলতে পারেন।
গল্প-গুজব
মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি ভাবের আদানপ্রদান। ফলে কথা না বলে বা না শুনে মানুষ থাকতে পারে না। তাই ফোনে হোক বা সামনাসামনি রোগীর সঙ্গে গল্প করুন। তবে তা যেন নিখাদ গল্পই হয়। রোগবালাই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। বরং আপনাদের দু’জনের পছন্দের কোনও কমন বিষয়ে আড্ডা চালিয়ে যেতে পারেন।
খাবার
এমন অনেক খাবার আছে, যা পলকে মুড ভাল করে দেয়। চকলেট, কফি, বিভিন্ন হার্বসও মেজাজ ভাল রাখে। তবে অসুখ অনুসারে অনেক খাবারে নিষেধও থাকে। তাই নিজের শরীর বুঝে দিনে এক বার পছন্দের কোনও খাবার খেতে পারেন। কিন্তু নানা অসুখে বিভিন্ন খাবার বন্ধ থাকে। তাই কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিশ্রাম
অসুখ সারাতে এটি সবচেয়ে বেশি জরুরি। অনেক সময়েই বই পড়া বা টিভি দেখার মতোও শারীরিক অবস্থা থাকে না। সে সময়ে বিশ্রাম নেওয়াই ভাল। ঘুমিয়ে নিলে শরীর বিশ্রামও পাবে, সুস্থও হবে তাড়াতাড়ি। মানসিক ভাবেও বিশ্রাম প্রয়োজন। তাই জেগে থাকলেও নিজের অসুখ নিয়ে চিন্তা করবেন না। কবে সারবে? কবে বেরোবেন? এ সব যত ভাববেন, ততই মানসিক ভাবে ব্যস্ত হয়ে উঠবেন। ফলে বিরক্তি বাড়বে। তাই যথাসম্ভব অসুখের বাইরে অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগ দিন।
পাজ়ল, ইনডোর গেমস
কাগজে নানা ধরনের ক্রসওয়ার্ড, সুদোকু, হিতোরি ইত্যাদি নানা ব্রেনগেম থাকে। সেগুলি খেললে সময় তো কাটবেই, মাথাও খেলবে ভাল। সঙ্গী পেলে দাবা, লুডো ইত্যাদি বোর্ডগেম নিয়েও বসে পড়তে পারেন। সেলাই, উল বোনা, সিনেমা দেখা... অনেক ভাবেই সময় কাটাতে পারেন। শরীরের অবস্থা কেমন, সেই অনুসারে বেছে নিন আপনার মন ভাল রাখার দাওয়াই।
বাচ্চাদের জন্য বিশেষ যত্ন
অনেক সময়েই দেখা যায়, শিশুরা দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে। সে সময়ে তাদের তেমন কিছু করারও থাকে না। ফলে তারা খুবই বিরক্ত বোধ করে, যা তার আচরণেও ফুটে ওঠে। তখন কিন্তু মা-বাবাকে দায়িত্ব নিতে হবে সন্তানের মন ভাল রাখার। ওকে নানা রকমের গল্প বলতে পারেন। ওর প্রিয় চরিত্র বা মজার, রহস্য-রোমাঞ্চে ভরপুর গল্পই হয়ে উঠতে পারে মন ভাল করার ওষুধ।
সঙ্গসুধা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সঙ্গ। যে কোনও অসুখেই কেউ সঙ্গে থাকলে শক্তি পাওয়া যায়। তাই বন্ধুর মতো সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করুন তাঁকে।
অসুখ যা-ই হোক না কেন, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য যেমন ওষুধ প্রয়োজন, তেমনই দরকার প্রিয়জনের সাহচর্য। তা হলেই কেটে যায় অসুখী সময়।
মডেল: পারিজাত চক্রবর্তী; ছবি: দেবর্ষি সরকার; লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা কনক্লেভ, চকগড়িয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy