Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Aranya New store

দক্ষিণাপণের দোতলা থেকে সোজা যোধপুর পার্ক, নতুন ঠিকানা পেল শহরের প্রিয় ‘অরণ্য’

প্রায় ২০ বছর ধরে নিজের ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছেন চন্দনী বসু। রাসবিহারী অ্যাভেনিউয়ের ছোট্ট দোকান থেকে দক্ষিণাপণ হয়ে যোধপুর পার্কে নিজস্ব বিপণি তৈরি করেছে ‘অরণ্য’।

Kolkata’s old boutique Aranya shifts its base from Dokshinapon and finds a new home in Jodhpur park

দক্ষিণাপণকে বিদায় জানিয়ে ‘অরণ্য’ চলে গিয়েছে যোধপুর পার্কের নতুন ঝাঁ-চকচকে শোরুমে। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩ ১৩:০৮
Share: Save:

দক্ষিণাপণের দোতলার কোণের ছোট্ট দোকান থেকেই যাত্রা শুরু। কলকাতার পছন্দসই পোশাক, মানে ভারতীয় কাপড়েই পশ্চিমি পোশাকের চল শুরু হয়েছিল এই বুটিক থেকে। সে সময়ে এমন পোশাকের ভাবনা ছিল অভিনব এবং টাটকা। নতুনত্বের স্বাদ পেতে বার বার এই বুটিকেই ফিরে যেতেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের ভালবাসা থেকেই তিলে তিলে বেড়ে ওঠে ‘অরণ্য’। সেই ভিড় এখনও কমেনি। তবে ‘অরণ্য’ ঠিকানা পাল্টেছে। দক্ষিণাপণকে বিদায় জানিয়ে চলে গিয়েছে যোধপুর পার্কের নতুন ঝাঁ-চকচকে শোরুমে। নিজস্ব বিপণির ভাবনা কবে থেকে? ‘অরণ্য’-জননী চন্দনী বসু জানালেন, তাঁর ইচ্ছেটা অনেক দিনেরই। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে গিয়ে তিনি নানা রকমের বুটিক যখন দেখতেন, তখন ইচ্ছেটা আরও প্রকট হত। ‘‘দক্ষিণাপণ থেকেই আমার ব্র্যান্ডের শুরু। ক্রেতাদের ভালবাসাও ওখান থেকেই পাওয়া। কিন্তু বহু দিন ধরেই মনে হত ওই জায়গাটা ছেড়ে বেরোনোর সময় এসে গিয়েছে। ওখানে আমার বিক্রি ভাল হত। কিন্তু অনেক ধরনের জিনিস রাখলেও মনের মতো করে সাজানোর অবকাশ ছিল না। পুদুচেরি বা ফোর্ট কোচির মতো জায়গায় একটা ছোট্ট দোকানও যে ভাবে সাজানো হয়, দেখলে অবাক লাগে। আমার যে হেতু অন্দরসজ্জার দিকে ঝোঁক আছে বরাবরই, তাই জামাকাপড় শুধু আয়না দেওয়া তাকে তুলে রাখতে আর ইচ্ছে করছিল না।’’

Kolkata’s old boutique Aranya

শাড়ি, দোপাট্টা, ব্লাউ়জ, পশ্চিমি পোশাক সবই রয়েছে ‘অরণ্য’-এ। — নিজস্ব চিত্র।

অন্দরসজ্জা নিয়ে চন্দনীর নাড়াচাড়া বহু দিনের। তাই শোরুমের জায়গা হাতে পেয়েই কাজ শুরু করে দিতে পেরেছিলেন। মাত্র পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সবটা পাল্টে নতুন ভাবে সাজিয়েছিলন সাধের ‘অরণ্য বাড়ি’কে। এবং দোকানটা সত্যিই বাড়ির মতো। ধবধবে সাদা দেওয়ালে ইটের রুক্ষতা নরম আলোয় স্নিগ্ধ হয়ে যায়। বিশাল বড় জানলা দিয়ে নজরে পড়ে মোজাইক টাইলসের মেঝে। ক্রেতারা যাতে ঢুকেই একটি শান্ত পরিবেশে নিজের মতো কেনাকাটা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করেছেন চন্দনী। তিনি বললেন, ‘‘দক্ষিণাপণে আগে কোনও ট্রায়াল রুমের ব্যাপার ছিল না। আমিই প্রথম শুরু করি। আমি সব সময়ে চেষ্টা করি ক্রেতাদের তাড়া না দিতে। একটি পোশাক পরে, আয়নায় দেখে, ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে বাকিদের দেখিয়ে যদি কেউ কোনও পোশাক কিনতে চান, তা হলে তাঁকে সেই সময়টুকু দেওয়া উচিত।’’

Kolkata’s old boutique Aranya

রুপোর গয়না এবং ঘর সাজানোর নানা রকম সামগ্রীও পাবেন এখানে। — নিজস্ব চিত্র।

প্রায় ২০ বছর ধরে নিজের ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছেন চন্দনী। রাসবিহারী অ্যাভেনিউয়ের ছোট্ট দোকান থেকে দক্ষিণাপণ হয়ে যোধপুর পার্ক পর্যন্ত পৌঁছতে কি একটু বেশি দেরি করে ফেলল ‘অরণ্য’? চন্দনীর কথায়, ‘‘হয়তো আরও আগে নিজস্ব বিপণি খুলে ফেলা উচিত ছিল। কিন্তু আমার কোনও তাড়া ছিল না। কে কী করছে, সে দিকে আমি কখনওই তাকাইনি। শুধু নিজের কাজটা করে গিয়েছি। জানি, আমার পরে শুরু করে এখন অনেকে নানা রকম বুটিক খুলেছেন। কিন্তু আমার প্রতিযোগিতা শুধু নিজের সঙ্গে। আমি কাজটা এতটাই ভালবাসি যে, যখন দোকানে থাকি না, তখনও কোনও না কোনও ভাবনা মাথায় চলতে থাকে। দক্ষিণাপণের দোতলায় আমি যে ডিজাইনগুলো বানাতাম, খুব তাড়াতাড়ি দেখতাম সেগুলো এক তলায় পৌঁছে গিয়েছে! কিন্তু আমি সে সব নিয়ে কখনও ভাবিনি। সে কারণেই আমি ফেসবুকে কোনও দিন নিজের পেজ থেকে কোনও রকম পোস্ট করিনি, যেখানে আমার ডিজাইন কে টুকল, তা নিয়ে কোনও অভিযোগ রয়েছে। আমি শুধু দেখি, আমার নকশাগুলো যেন আগের মতো না হয়ে যায়। প্রত্যেক মরসুমে আমি যেন নতুন কিছু তৈরি করতে পারি।’’

‘অরণ্য’ যখন তৈরি হচ্ছে, সে সময়ে হ্যান্ডলুম কাপড়ের পশ্চিমি পোশাক বিশেষ দেখা যেত না। কিন্তু এখন অলি-গলিতে এমন বুটিক চোখে পড়ে। আবার ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-হোয়াট‌স্‌অ্যাপও ছেয়ে গিয়েছে অনলাইন বুটিকের ক্যাটালগে। চন্দনী অবশ্য পুরনোপন্থী। তাই ওয়েবসাইট এখনও খুলে উঠতে পারেননি। বরং তিনি চান, তাঁর ক্রেতারা দোকানে আসুন, পোশাক নেড়েচেড়ে দেখুন, বুঝুন যে হাতে বোনা কাপড় সব সময়ে এক রকম হয় না, ভেজিটেব্‌ল ডাইয়ের মতো প্রাকৃতিক রং প্রত্যেক ৬ মিটারে একটু করে বদলে যায়, সুতির কাপড়ও সুতোর হিসাবে মোটা-পাতলা হয়। এই খুঁটিনাটিগুলি তিনি অনলাইন ক্রেতাদের বোঝাতে পারবেন না। তাই এখনও ওয়েবসাইট খোলার চেয়ে বিপণি শুরু করাতেই ভরসা রাখেন বেশি।

নতুন পোশাকশিল্পীরা এখন প্রচারের আলোয় থাকতে পছন্দ করেন। খ্যাতনামীদের পোশাক পরিয়ে সেই ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করাটা কাজের অঙ্গ হিসাবেই দেখেন। ‘অরণ্য’-পোশাকে স্বচ্ছন্দ শহরের বহু খ্যাতনামী। কিন্তু চন্দনী সেই ছবি খুব একটা সমাজমাধ্যমে দেন না। দ্রুত খ্যাতি তাঁর লক্ষ্য নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে যাঁরা আমার পোশাক পরেন, তাঁরা সকলেই আমার বন্ধু। ভালবেসে তাঁরা আমার দোকানে এসে পোশাক কিনে পরছেন। আমি যদি সারা ক্ষণ তাঁদের ছবি চেয়ে বিব্রত করি, তা হলে সেটা ঠিক হবে না। তা ছাড়া, আমি মনে করি না, কোনও খ্যাতনামী আমার পোশাক পরেছেন মানেই আমার ক্রেতারা এসে সেই একই পোশাক কিনবেন। তাঁরা সকলেই যথেষ্ট বুদ্ধিমান। কোন পোশাকে তাঁদের ভাল লাগবে, সে বিবেচনা তাঁরা করতে পারেন। আমি আমার ক্রেতাদের সম্মান করি।’’

গত দুই দশক ধরে শহরবাসীদের সাজাচ্ছে ‘অরণ্য’। নতুন ঠিকানাতেও শাড়ি, দোপাট্টা, ব্লাউ়জ, পশ্চিমি পোশাক সবই রয়েছে। ছেলেদের ফুরফুরে শার্টের সংগ্রহও নজরকাড়া। সঙ্গে অবশ্য রুপোর গয়না এবং ঘর সাজানোর নানা রকম সামগ্রীও রয়েছে। চন্দনীর কথায়, ‘‘কলকাতা এখন অনেক বেশি সাজসচেতন। আমার কাছে অবশ্য লোকে আসে বেড়াতে যাওয়ার আগে। অনেকেই হয়তো কিছু পোশাক এখানে স্বচ্ছন্দে পরতে পারেন না। কিন্তু ছুটিতে থাকলে দিব্যি পরে ফেলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Boutique Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy