—প্রতীকী চিত্র।
গ্লাস অর্ধেক খালি নয়। বরং অর্ধেক ভর্তি। মঙ্গলবার সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এমনটাই মনে করছেন কলকাতার বহু সমাজকর্মী।
বহু দিন ধরেই সমলিঙ্গে বিবাহের অধিকার নিয়ে এ দেশে চলছে লড়াই। দেশের শীর্ষ আদালতে মঙ্গলবার ছিল সে মামলার শুনানি। অনেকের আশা ছিল, পুজোর আগেই আসবে ঐতিহাসিক সেই দিন। এ দেশেও স্বীকৃত হবে সমপ্রেমিকদের ঘর বাঁধার আকাঙ্ক্ষা। সমলিঙ্গে বিয়ের পক্ষে রায় অবশ্য দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কমিটিকে পদক্ষেপ করতে বলেছে শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ। আইনসভার হাতেই বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তা শুনে হতাশ নন সমলিঙ্গ বিয়ের অধিকার নিয়ে লড়াই করা এ শহরের সমাজকর্মীরা। বরং কয়েক ধাপ যে এগোনো গেল, সে কথাই ভাবছেন তাঁরা।
কলকাতার সমাজকর্মী মীনাক্ষী সান্যাল মালবিকা এই মামলার ১০ আবেদনকারীর মধ্যে এক জন। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় মঙ্গলবারের শুনানির সময়ে জানিয়েছেন, সমলিঙ্গ সম্পর্কের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। তার মাধ্যমে ওই সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষিত করা হবে। সেই প্রেক্ষিতে মালবিকা বলেন, ‘‘যৌনতার নিরিখে প্রান্তিক যাঁরা, তাঁরা কখনওই কোনও অধিকার কম কষ্টে অর্জন করতে পারেননি। তাই এমন আশাও করি না যে, একবারে হঠাৎ পথটা মসৃণ হয়ে যাবে। কিন্তু এই রায় খানিকটা আশা দেখাচ্ছে তো বটেই। আমরা যে আবেদন জানিয়েছিলাম, তা যে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে, সে কথা অন্তত বুঝতে পারা গিয়েছে প্রধান বিচারপতির কথায়।’’
কলকাতার মীনাক্ষি ছাড়া দিল্লির ঋতুপর্ণা বরা, বরোদার মায়া শর্মা আর মুম্বইয়ের চয়নিকা শাহ ছিলেন এই মামলার আবেদনকারী। এ ছাড়াও নাম প্রকাশ না-করে আরও ছ’জন এই পিটিশন জমা দিয়েছেন। মালবিকা জানান, সেই আবেদনে শুধু বিয়ের অধিকার নয়, বরং যৌন ভাবে প্রান্তিকদের সামাজিক হেনস্থা বন্ধ হওয়ার আর্জি জানানো হয়েছিল। সে কথা মঙ্গলবার উঠে এসেছে প্রধান বিচারপতির কথায়। প্রধান বিচারপতি জানান, এই সম্প্রদায়ের কাউকে তাঁদের যৌন পরিচয় জানার জন্য থানায় তলব করা যাবে না। তাঁরা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলে, তাঁদের সেখানে জোর করে ফেরানো যাবে না। এই সম্প্রদায়ের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করার আগে পুলিশকে প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। সমলিঙ্গে বিবাহ নিয়ে রায় ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা প্রত্যেকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’’ তা শুনে আশাবাদী মালবিকা।
যৌনতার নিরিখে প্রান্তিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন কলকাতার আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত। সুপ্রিম কোর্টের কথায় কিছুটা আশার আলো দেখছেন তিনিও। আনন্দবাজার অনলাইনকে কৌশিক বলেন, ‘‘বিয়েটাই তো সব নয়। অধিকারের নানা ধাপ থাকে। বিয়ের অধিকার না-পেলেও যে সব অধিকারের কথা উল্লেখ করল সুপ্রিম কোর্ট, তা অনেকটাই স্বস্তির।’’ কৌশিকের বক্তব্য, লড়াইটা কিছুটা হলেও এগিয়ে গেল আদালতের এই রায়ের পরে।
সমকামী সম্পর্কের অধিকার নিয়ে নিয়মিত কাজ করেন চলচ্চিত্রকার দেবলীনা। মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে এই রায়ের ইতিবাচক দিকটিই দেখব আজ। কারণ, অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কথা আজ বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।’’ তার মধ্যে একটি বিশেষ কথায় জোর দিচ্ছেন দেবলীনা। রায় পড়ে শোনাতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি কোনও অনড়, অটল বিষয় নয়। বিবাহে বিবর্তন আসে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত স্তরে যে কোনও কাজকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত নয়। বিবাহ বর্তমানে যে স্বীকৃতি পেয়েছে, আইন না থাকলে তা সম্ভব হত না।’’ সমকামকে ‘শহুরে বিষয় নয়’ বলেও উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি। সবটা শুনে দেবলীনার মনে হয়, দেশের শীর্ষ আদালত বর্তমান পরিস্থিতিকে অনেকটাই ভাল ভাবে বিবেচনা করে দেখেছে। দেবলীনা বলেন, ‘‘কোর্ট বলল, কুইয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক ব্যাপার। যে মুহূর্তে ‘স্বাভাবিক’ কথাটি উচ্চারণ করলেন, তাতেই অনেকটা এগোনো গেল। কারণ, সব সময়ে একে অস্বাভাবিক বলেই উল্লেখ করা হয়ে থাকে সমাজে। বহু বছর ধরে ‘অস্বাভাবিক’ শব্দটা আমরা বহন করে চলেছি। ফলে আদালতের তরফে এই শব্দচয়নগুলোই বিশেষ গুরুত্বের।’’ ওই আসনে বসে যখন এমন ‘নিষিদ্ধ’ ভাবনাগুলি সমাজের সামনে তুলে ধরা হয়, তার ধার বেড়ে যায় বলেই মত দেবলীনার।
পোশাকশিল্পী অভিষেক রায় বহু দিনের সঙ্গী চৈতন্য শর্মার সঙ্গে মালাবদল করে ধুমধাম করে ঘর বাঁধার আসর আয়োজন করেছিলেন কলকাতায়। সমলিঙ্গের বিয়ের অধিকার নিয়ে মঙ্গলবার রায় ঘোষণার পর আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘বিয়ের অধিকার না-পেলেও সমলিঙ্গের সম্পর্ক স্বীকৃতি পেল আজ। সেটাও কম কথা নয়। সুপ্রিম কোর্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছে এ বিষয়ে। রূপান্তরকামীদের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছে, সমকামী যুগল কী ভাবে সন্তান দত্তক নিতে পারবে, সে ভাবনা উঠে এসেছে।’’ এ সব নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে শীর্ষ আদালতে, তা আশার আলো দেখাচ্ছে অভিষেককে। ফলে সমকামী বিয়ের অধিকার না-এলেও, অনেকটা পথ যে এগোনো গিয়েছে, তা বলছে এ শহর। যদিও এখনও অনেক পথ চলার বাকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy