রেণু খাতুনের সে হাতটিই কব্জি থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে, যেটি তাঁর কাজের প্রধান হাত। নিজস্ব চিত্র
রেণু খাতুনের সে হাতটিই কব্জি থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে, যেটি তাঁর কাজের প্রধান হাত। ডান হাত। বিষয়টি নেহাত ‘কাকতালীয় নয়’ বলে মনে করছেন মনস্তত্ত্ববিদ এবং সমাজতাত্ত্বিকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে ক্ষমতাহীন করার অভ্যাস চিরকালীন। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের ঘটনায় তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। যদি স্রেফ আক্রোশের জেরে এ ‘হামলা’ হত, তবে রেণুর বাঁ হাত বা শরীরের অন্য কোনও অংশেরও ক্ষতি করা হতে পারত।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রশান্ত রায়ের কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে মেয়েটির সে হাতটি-ই কাটা হয়েছে, যেটি তাঁর কাজ করার প্রধান হাত। নারী স্বাবলম্বী হলে পুরুষের ওজন কমবে, এমন ধারণা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অনেকেই। আঁতুড় আর রান্নাঘর, এই দু’জায়গায় মেয়েদের আটকে রাখতে পারলে, তাঁরা আর কাজ করার চ্যালেঞ্জ নেবেন না— এমন বিশ্বাস অনেকের। সে বিশ্বাস থেকেই কিছু পরিস্থিতি জন্মায়, যার জেরে এমন ঘটনা।’’
সমাজকর্মী তথা কলেজ শিক্ষিকা শাশ্বতী ঘোষ মনে করেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে মেয়েটি শুধু বাইরের কাজ করতে যেতে পারবেন না, তা নয়। তিনি বাড়ির কোনও কাজও ঠিকঠাক করতে পারবেন না। অভিযুক্ত কোনও অপরাধমূলক কাজে যুক্ত ছিল কি না, তা দেখা উচিত।’’ আবার কেতুগ্রামের ঘটনায় অভিযুক্ত রেণুর স্বামী শের মহম্মদ ‘সাইকোসিসে’ আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন, মনে করছেন এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’র অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুজিত সরখেল। তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের লোকেরা মাঝেমধ্যে এমন কিছু বিশ্বাস করে ফেলেন, যার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। সে বিশ্বাস থেকে এমন কিছু ঘটনা এঁরা ঘটিয়ে ফেলেন, যা অকল্পনীয়।’’
নার্সের চাকরি পাওয়া রেণু তাঁকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন, এই আশঙ্কা থেকে তাঁর স্বামী এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। এমন আশঙ্কা থেকে কি স্বামী স্ত্রী-র উপরে ‘হামলা’ করতে পারেন? সুজিতবাবু বলেন, ‘‘এ সব রোগীর নিজের বিশ্বাস এতটাই দৃঢ় হয় যে, তাঁরা মনে করেন, তাঁরা যা বিশ্বাস করেন, তা-ই ঘটতে চলেছে। তা থেকে অকল্পনীয় ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’’
কেন ঘটে এমন ঘটনা? প্রশান্তবাবুর কথায়, ‘‘শুধু সমাজে নারীর অবস্থান নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে দায় এড়িয়ে গেলে হবে না। এর সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে নারীশিক্ষা প্রসারের বিষয়টিও। দেখা গিয়েছে, শিল্পোন্নত দেশে এ ধরনের ঘটনা তুলনায় কম। কারণ, সেখানে নারীশিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতিতে বেশি জোর দেওয়া হয়।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy