Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বন্ধুত্ব থাক অটুট

চাকুরিরতা বা গৃহবধূ... বন্ধু যেমনই হোক না কেন, বন্ধুত্বে যেন কখনও তার আঁচ না পড়েব্যস্ততা, জীবনযাপনের বদলে যাওয়া অভ্যেস আর খানিক ভুল বোঝাবুঝিতে কোথায় যেন দূরত্ব তৈরি হয়েছে উৎসা-মোহনার। তা হলে কি চাকুরিরতা আর গৃহবধূর বন্ধুত্ব অতটাও সহজ নয়?

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

উৎসা আর মোহনা ছোটবেলার বন্ধু। এক পাড়া, স্কুল, কলেজ... পড়াশোনাও একই সঙ্গে। কিন্তু বাদ সাধল সেই দিন, যখন উৎসা কলেজ পাশ করেই বিয়ের পরে অন্য জায়গায়। আর মোহনা বিয়ে-শ্বশুরবাড়ির পথে না গিয়ে ঝাঁ চকচকে কর্পোরেট অফিসে চাকরিতে ঢুকল। দু’জনের জীবন তো বদলালই, পাশাপাশি দূরত্বও বাড়তে শুরু করল। তাই কোনও কোনও দিন শেষ দুপুরে উপন্যাসের পাতা ওল্টাতে গিয়ে উৎসা ভাবে, বিয়ে না করে চাকরি করলেই বোধহয় ভাল হত। আর অফিসের টার্গেটের নাগপাশে জড়িয়ে পরা মোহনা ধীরে ধীরে বুনতে থাকে একটি স্নেহমাখা সংসারের স্বপ্ন! কিন্তু কেউই মুখ ফুটে বলতে পারে না মনের কথা। ব্যস্ততা, জীবনযাপনের বদলে যাওয়া অভ্যেস আর খানিক ভুল বোঝাবুঝিতে কোথায় যেন দূরত্ব তৈরি হয়েছে উৎসা-মোহনার। তা হলে কি চাকুরিরতা আর গৃহবধূর বন্ধুত্ব অতটাও সহজ নয়? না কি সমস্ত প্রতিকূলতাতেও বন্ধুত্বের রং বদলায় না?

মনোভাবের পরিবর্তন

মনোভাব সম্পর্ক ভাঙতে পারে, আবার গড়তেও। তাই কখনও একপেশে মনোভাব পোষণ করা উচিত নয়। কেউ গৃহবধূ মানেই যে তিনি চাকরি করতে পারতেন না— এমন কিন্তু নয়। সবচেয়ে বড় কথা, ঘর সামলানোর কাজ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অফিসের বাঁধাধরা সময়ের কাজের চেয়েও কঠিন। সারাটা দিন ধরে বাড়ির প্রত্যেকটি সদস্যের দেখভাল, খুঁটিনাটি সামলানো সহজ কথা নয়। সেখানে কারও অধীনে কাজ করতে না হলেও সংসারের জাঁতাকলে অনেকেই নিজের জন্য সামান্যতম সময়টুকুও বার করতে পারেন না। ফলে গৃহবধূ বন্ধুটির জীবনকে কেরিয়ারের ঊর্ধ্বে রেখে বোঝার চেষ্টা করতে পারেন।

অন্য দিকে যিনি সংসার সামলাচ্ছেন, তাঁরও কোনও রকম হীনমন্যতায় ভোগার কারণ নেই। হতেই পারে, তিনি চাইলে নিজেও চাকরি করতে পারেন। আবার যে বন্ধুটি চাকরি করছেন, তিনি অনেকটা এগিয়ে— এমনটা ভাবাও ঠিক নয়। সংসারের নানা কাজের মধ্যে গৃহবধূটি ঠিক যেমন মাঝেমাঝে অসহায়তা, হতাশা বা বিরক্তি বোধ করেন, তেমনটা হয় চাকুরিরতার ক্ষেত্রেও। তাঁকে বাইরের অনেক ঝড়-ঝাপটা সামলাতে হয়। হয়তো ক্ষেত্র আলাদা, কিন্তু সংসার বা অফিস— কোনওটিই সহজ নয়। মোদ্দা কথা, অন্য বন্ধুটির অবস্থা যে আপনার চেয়ে ঢের ভাল... এ ভাবনা কিন্তু খানিকটা ‘ও পারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস’ এই প্রবাদের মতোই।

ফলে দূরত্ব তৈরি হয়েছে মানেই যে বন্ধুটির প্রতি মনোভাব বদলে যাবে, এমনটা নয়। বরং তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। কেরিয়ার বন্ধুত্বের অন্তরায় হতে পারে না।

পারস্পরিক সমঝোতা

চাকরি বা বিয়ের আগে যে বন্ধু জুটিকে প্রায় সর্বত্রই একসঙ্গে দেখা যেত, সেই ছবিটা বদলে যাওয়াই স্বাভাবিক। চাইলেই কেউ বাড়িতে রান্নার ফাঁকে সিনেমা দেখতে যেতে পারেন না কিংবা মিটিং ছেড়ে কফি শপে আড্ডা মারতে পারেন না। এটা বোঝা অত্যন্ত জরুরি। আবার এ-ও হতে পারে যে, বন্ধুটির সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে বা কথা বলতে ইচ্ছে হল। অথচ সে ব্যস্ত নিজের কাজে। সে ক্ষেত্রে সামান্য সংযত থেকে উল্টো দিকের মানুষটির কথা ভাবা শ্রেয়। বরং যে সময়টায় দু’জনেই বিরতি পাবেন, গল্পগুলো না হয় তোলা থাক সে সময়ের জন্যই।

সময় দিন

তা হলে বন্ধুত্বকে বাঁচিয়ে রাখবেন কী ভাবে? সপ্তাহান্তে সময় বার করে দেখা করুন। প্রতি সপ্তাহে না পারলেও এক-দু’সপ্তাহ অন্তর দেখা করতেই পারেন। কোনও সপ্তাহে কেউ বাইরে যেতে না পারলে অন্য জন তাঁর বাড়ি পৌঁছে সারপ্রাইজ় দিন। সারা দিনে যে কোনও সময়ে মেসেজ করে রাখতেই পারেন একে অপরকে। প্রত্যুত্তরের জন্য না হয় একটু অপেক্ষা করতেই হল। গল্প করার সময়ে একে অপরের জীবনের ক্ষোভ, রাগ উগরে তো দেবেনই। তবে পাশাপাশি আলোচনা করুন এমন বিষয় নিয়ে, যা অক্সিজেন জোগাবে আপনাদেরই সম্পর্কে। সিনেমা, বই, নতুন প্রযুক্তি, রূপচর্চা, পোশাকের ট্রেন্ড কিংবা পুরনো স্মৃতি রোমন্থন... দুই কাছের বন্ধুর আড্ডার বিষয়ের অভাব হয় নাকি!

দূরত্বও জরুরি

কথায় বলে, দূরত্বে আসলে বাড়ে সম্পর্কের টান। রোজ দেখা, ঘনঘন ফোনে কথা কিংবা একে অপরের সমস্ত খুঁটিনাটি সম্পর্কে অবগত থাকলে একটা সময়ের পরে বন্ধুত্বও সজীবতা হারায়। তখন দেখা হলে নতুন কিছু ভাগ করে নেওয়ার মতো অবশিষ্ট পড়ে থাকে না। ফলে চাকরি কিংবা ঘরের কাজের মাঝে যেটুকু ব্যস্ততা, তাতে যদি দুই বন্ধুর মধ্যে সাময়িক দূরত্ব তৈরি হয়, সেটা কিন্তু আখেরে ভালই। ফলে পরের বার দেখা করার টান বাড়বে। মনে হবে, কত গল্পই না জমে আছে বলার জন্য!

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের রং যেমন বদলায়, তেমনই বাড়তে থাকে নিজেদের পরিসরও। ফলে কারও বিবাহসূত্রে আত্মীয়ের সংখ্যা বাড়ে, তো চাকরিসূত্রে কারও বন্ধু। তার মাঝেও প্রিয়জনেরা রয়েই যায়। তাই বন্ধুর মনে নিজের জায়গা নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে বরং ব্যক্তিগত সময়টুকু ভাল কাটানোর চেষ্টা করুন। বন্ধুত্ব দৃঢ় হবে আপনা থেকেই।

মডেল: নয়নিকা সরকার, রিয়া বণিক; ছবি: সন্দীপ দাস

মেকআপ: কৌশিক ও রজত

পোশাক: ওয়েস্টসাইড, ক্যামাক স্ট্রিট; লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা ক্লাব, চকগড়িয়া

অন্য বিষয়গুলি:

Friendship Worklife Family
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy