তিতির ক্লাস নাইনে উঠেছে। রোজ মা টিউশন ক্লাসে দিতে যান আর বাবা আনতে যান। ব্যাপারটা তিতিরের একদম পছন্দ নয়। সে টিউশন থেকে একা বাড়ি ফিরতে চায়। কিন্ত তার মা-বাবা সে কথা শোনে না। ফলে মতবিরোধ ও মনোমালিন্য।
রূপমের আবার বোর্ডের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে সে ট্রেক করতে যেতে চায়। তার বাবা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে ট্রেকিং শু কেনার জন্য বা ঘুরতে যাওয়ার জন্য টাকা দেবে না। ফলে বাবার সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিয়েছে সে।
সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাও বাড়তে থাকে। সব কিছু একা করতে চায় তারা। মা-বাবাকে সঙ্গী করতে চায় না। কিন্তু বাড়ির বাইরে একা ছাড়তে অনেক অভিভাবকই ইতস্তত করেন। সন্তানের অনিষ্ট আশঙ্কা করে সব সময়ে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই ভাবে কি আদৌ তাদের পাশে থাকা সম্ভব? সন্তানকে একা ছাড়তে শেখাটাও জরুরি। তবে তার আগে অবশ্যই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন।
প্রস্তুতি প্রয়োজন
সন্তান টিনএজের দোড়গোড়ায় পৌঁছনো মাত্রই ওদের মধ্যে স্বাধীন ভাবে চলার প্রবণতা দেখা দেয়। কিন্তু সন্তানকে বহির্জগতে একা ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে আগে থেকেই। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বললেন ‘‘সন্তানকে একটা বয়সের পরে একা ছাড়তেই হবে। এ ক্ষেত্রে দু’রকমের সমস্যা দেখা যায়। কিছু ছেলেমেয়ে নিজেরাই স্বাধীনতা চায়। তারা মা-বাবাকে বলে দেয়, ‘তুমি যাবে না আমার সঙ্গে।’ কিছু সন্তান আবার একটু অন্তর্মুখী হয়। এরা গুটিয়ে থাকে। একা চলার সাহস বা আত্মবিশ্বাস জোগাড় করতে পারে না। দুই ক্ষেত্রেই মা-বাবাকে কিছু পদক্ষেপ করতে হবে।’’
সন্তান ইন্ট্রোভার্ট হলে প্রথমে পাড়ার দোকান থেকে কিছু কিনে আনতে পাঠান। বলে দিন, যাতে সে রাস্তার বাঁ দিক ধরে হাঁটে বা গাড়ি দেখে যেন রাস্তা পার হয়। দিনকতক পাড়ার দোকান পর্যন্ত একা ছাড়ার পরে তাকে আর একটু দূরে একা যাতায়াত করতে দিন। একটা সাইকেল কিনে দিতে পারেন। সাইকেল চালিয়েই কয়েকটা জিনিস কিনে আনতে বা কোনও জামাকাপড় লন্ড্রিতে পৌঁছে দিতে বলতে পারেন।
বড় রাস্তা পার হওয়ার সময়ে সিগন্যাল দেখতে শিখিয়ে দিন। ওর সঙ্গে থাকুন, কিন্তু হাত ধরবেন না। দেখুন সে ঠিকঠাক রাস্তা পার হতে পারছে কি না।
যে সব কোচিং বাড়ি থেকে একটা অটো বা রিকশায় পৌঁছে যাওয়া যায়, সেখানে ওকে একাই অটো বা রিকশায় তুলে দিন।
পায়েল ঘোষ বললেন, ‘‘সন্তান যদি সব ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা দাবি করতে থাকে, তা হলে মা-বাবাকে একটু খোঁজ নিতে হবে। হঠাৎ তার এত একা থাকার প্রয়োজন পড়ছে কেন? সে ক্ষেত্রে যে কোচিংয়ে সে পড়তে যাচ্ছে, সেখানকার স্যরের সঙ্গে, সন্তানের বন্ধুদের মা-বাবার সঙ্গেও কথা বলতে পারেন।
সন্তানের বন্ধু নির্বাচনও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সে কাদের সঙ্গে মিশছে, সে সম্পর্কে মা-বাবার পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার।
এখন অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য রাজ্যে বা বিদেশে চলে যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে বাজার করা, রান্না করা থেকে সব কাজই তাদের একাই সামাল দিতে হয়। তার জন্য গোড়া থেকেই তাকে দায়িত্ব দিতে শুরু করুন। দায়িত্ব নিলে তবেই সে সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। প্রথম প্রথম সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হলে আপনি শুধরে দিতে পারবেন। পরে বহির্জগতে যখন একা চলার সময় আসবে, সে প্রস্তুত হয়ে যাবে।
নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন
স্কুলেই কিন্তু এখন সেক্স এডুকেশনের ক্লাস করানো হয়। আপনি নিজেও বাড়িতে ওর শরীরের প্রাইভেট পার্টস সম্পর্কে বুঝিয়ে দিন। সুরক্ষা ছাড়া শারীরিক সম্পর্কের ফলে যে এসটিডি জাতীয় অসুখ হতে পারে এবং আরও কী কী বিপদ ডেকে আনতে পারে, সে বিষয়েও সন্তানকে অবহিত করুন।
বন্ধুবান্ধুবের সঙ্গে আড্ডায় বা কোনও পার্টিতে সে কত রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে, গল্পের ছলে আলোচনা করুন। আর যে কোনও নেতিবাচক পরিস্থিতিতে সে আপনাকে ফোন করে সাহায্য চাইতে পারে, সেই আশ্বাস দেওয়াও জরুরি। হতে পারে, সন্তান আপনাকে না বলে কোনও জায়গায় গেল। কিন্তু সেখানে বিপদে পড়লে আপনার ভয়ে যেন সে গুটিয়ে না যায়, বরং সকলের আগে যেন সে মা-বাবাকেই ফোন করে, এই বিশ্বাস অভিভাবককেও অর্জন করতে হবে।
বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেলে তার সঙ্গের বন্ধুদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। গন্তব্যের হোটেল বুকিংয়ের দায়িত্ব নিয়ে নিন স্বেচ্ছায় আনন্দ সহকারে। আপনার অংশগ্রহণে সন্তান খুশিও হবে। আপনিও নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।
একা ঘুরতে গেলে বা দূরে কোনও বন্ধুর বাড়ি গেলে ওর সঙ্গে যেন ফোন থাকে। তাতে অভিভাবকদের নাম্বারের সঙ্গে কিছু ইমার্জেন্সি নাম্বার সেভ করে দিন। সে বিপদে পড়ে আপনাকে হয়তো ফোন করছে, এ দিকে তখন আপনি অফিস মিটিংয়ে ব্যস্ত বা ফোনে নেটওয়র্ক নেই। সে সময়ে সে যেন আর একজনের সঙ্গে কথা বলতে পারে, এমন কিছু নাম্বারও যেন ফোনে সেভ করা থাকে।
ছোট থেকেই ওর মধ্যে কিছু কিছু মূল্যবোধ সঞ্চারিত করতে হবে। পরবর্তী কালে সে একা চললেও ভুল পদক্ষেপ করবে না। সন্তানকে আগলে রাখুন, কিন্তু হাত চেপে ধরে নয়। বরং ওর হাতের উপরে হাত রাখুন বন্ধুর মতো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy