সামাজিক দূরত্ব— কেবল এই শব্দটাই এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষকে অতিমারি করোনার হাত থেকে বাঁচাতে পারে, এমনটাই মত চিকিৎসদের। পরিস্থিতির গুরুত্বের কথা বুঝতে পারছেন অনেকেই (যদিও ব্যতিক্রমের সংখ্যাটাও যথেষ্ট)। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ প্রথমেই বেছে নিচ্ছেন ব্যক্তিগত যানবাহনকে। তাই আনলক পর্ব শুরু হতে, মোটরবাইকের বিক্রি বেড়েছে। বিক্রি বেড়েছে সাইকেলেরও।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যাতায়াতের ক্ষেত্রে গণ-পরিবহণ এড়িয়ে চললে সংক্রমণের সম্ভাবনাও কিছুটা কমতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সাইকেল হয়ে উঠতে পারে আপনার যাতায়াতের নিত্যসঙ্গী। বিনিয়োগ এককালীন। মেনটেন্যান্সের খরচও যৎসামান্য। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যবহারে শারীরচর্চার বন্দোবস্ত। এক কথায়, লাভজনক প্যাকেজ! তাই করোনা-কালে অনেকেই ঝুঁকছেন সাইকেলের দিকে। তবে সাইকেল কেনার সময়ে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সাইকেলটি আপনি কোন রাস্তায় চালাবেন এবং কী প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন, সেই নিরিখে বাছতে হবে মডেল।
ধরা যাক, আপনি বাড়ির আশপাশের ছোটখাটো কাজ কিংবা রোজ বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার কাজে সাইকেল ব্যবহার করতে চান, তা হলে ‘কমফর্ট বাইক’ কেনার কথা ভেবে দেখতে পারেন। এই ধরনের সাইকেলে চালকের বসার আসনের চেয়ে হ্যান্ডল-বারটি লাগানো থাকে কিছুটা উঁচুতে। ফলে চালানোর সময়ে সামনের দিকে ঝুঁকতে হয় না। বরং মেরুদণ্ড সোজা রেখেই চালানো যায়। আবার যদি আপনি পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় সাইকেল চালাতে ভালবাসেন। সে ক্ষেত্রে ‘মাউন্টেন বাইক’ হতে পারে সেরা পছন্দ। এর বিশেষত্ব হল— এই ধরনের সাইকেলের চাকা হয় বেশ চওড়া। ফলে সাইকেল পাহাড়ি রাস্তায় সহজেই মাটি আঁকড়ে চলতে পারে। পাশাপাশি, এগুলিতে ‘শক অ্যাবজ়র্বার’ও লাগানো থাকে, যাতে দুর্গম রাস্তায় চালানোর সময়ে ঝাঁকুনি কম হয়।
অনেকেই সকাল এবং সন্ধেয় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। আশপাশের রাস্তায় কিছুক্ষণ চালিয়ে, তাঁরা আবার বাড়ি ফিরে যান। এতে যেমন সুন্দর সময় কাটে, পাশাপাশি হয়ে যায় শারীরচর্চাও। এই ধরনের প্রয়োজনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতারা ‘রোড বাইক’ কিনে থাকেন। বসার আসনের তুলনায় হ্যান্ডল-বার নীচে থাকায়, কিছুটা ঝুঁকে চালাতে হয় এই সাইকেল। চালানোর সময় হাওয়ার বাধা কম আসায়, সাইকেলের গতি বাড়ানো যায় দ্রুত। আর এই সাইকেলগুলির চাকা সরু হওয়ায়, রাস্তার ‘রেজ়িস্ট্যান্স’ আসে কম। এ ছাড়াও রয়েছে ‘ট্র্যাক বাইক’। মডেলের নাম শুনেই স্পষ্ট, এই ধরনের সাইকেল বিশেষ ভাবে প্রতিযোগিতায় ব্যবহারের জন্যই তৈরি। মূলত, এই কয়েকটি ধরনের সাইকেলই বাজারে সহজে আপনি পেয়ে যাবেন।
কেনার আগে মাথায় রাখবেন
• কী প্রয়োজনে সাইকেল কিনছেন, সেটা প্রথমেই ঠিক করে নিন। সেটিকে পণ্য পরিবহণের কাজে লাগাবেন নাকি দৈনন্দিন বাড়ি থেকে অফিস যাতায়াতের সঙ্গী বানাতে চাইছেন? না কি সাইকেলটি শারীরচর্চার উপকরণ মাত্র? সেটা আগে ঠিক করা জরুরি। প্রতিটি প্রয়োজনের জন্য আলাদা আলাদা ধরনের সাইকেল বাজারে রয়েছে।
• আপনি যদি আধুনিক সাইকেল কেনেন, তা হলে কেনা হয়ে গেলেও নিয়মিত সাইকেলের দোকানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। কারণ, আধুনিক সাইকেলের জটিল মেকানিজ্ম আপনার পাড়ার সাইকেলের দোকানি না-ও জানতে পারেন।
• কেনার সময়ে কখনওই প্ররোচনার ফাঁদে পা দেবেন না। তা সে প্রিয় বন্ধু হোক কিংবা দোকানের সেল্সম্যান। বেশি লাভের মোহে অনেক ক্ষেত্রেই দোকানদারেরা যে মডেল আপনার প্রয়োজন নেই, সেই সাইকেলও ‘গছিয়ে’ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
• আপনি যদি সমতল এলাকায় সাইকেল চালাতে চান, তা হলে গিয়ারহীন সাইকেল কেনার চেষ্টা করুন। গিয়ারওয়ালা সাইকেল মূলত চড়াই-উতরাই রাস্তায় কিংবা প্রতিযোগিতায় চালানোর জন্যই তৈরি। তাই পাহাড়ি এলাকা ছাড়া গিয়ার দেওয়া সাইকেল না কেনাই ভাল। সাধারণ সাইকেল পেয়ে যাবেন পাঁচ-ছয় হাজারের মধ্যে। আর গিয়ার দেওয়া সাইকেলের দাম শুরু মোটামুটি আট-দশ হাজার থেকে।
• তবে আপনি যদি একান্তই গিয়ারওয়ালা সাইকেল কিনতে চান, তা হলে গিয়ার কী ভাবে কাজ করে— সেটা জেনে নিন। প্রয়োজনে যে দোকান থেকে কিনছেন, সেখানকার মেকানিকের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। আবার ইউটিউব ঘেঁটেও বিষয়টা দেখতে পারেন। গিয়ার বদলের ভুলে সাইকেলের চেন যদি কোনও কারণে পড়ে যায়, তা হলে বিপদে পড়বেন। তাই চেন পড়লে কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবেন, সেটা জেনে রাখা দরকার।
• নিজের উচ্চতার সঙ্গে মানানসই উঁচু সাইকেল কিনুন। মোদ্দা কথাটা হল, সাইকেলের সিটে বসে আপনি যেন ভাল ভাবে মাটিতে পা পেয়ে যান, সেটা মাথায় রাখুন।
সাইকেলের দাম মূলত নির্ভর করে তার ফ্রেম, চাকা এবং ব্রেকের গুণগত মানের উপরে। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এবং বিভিন্ন দামের সাইকেল রয়েছে। তাই নিজের বাজেট অনুসারে অপশন পেতে অসুবিধে হবে না। ভাল ব্র্যান্ডের গিয়ার ছাড়া সাইকেল সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার এবং গিয়ারওয়ালা সাইকেল নয় থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতিতে কলকাতার পার্ক স্ট্রিট, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের মতো ব্যস্ত রাস্তা এবং উড়ালপুল ছাড়া বিকল্প রাস্তায় সাইকেলের চলাচলে আইনি কড়াকড়িতেও শিথিলতা এনেছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ।
করোনা পরিস্থিতিতে সাইকেলের বিক্রি যে বেড়েছে, সে কথা মানছেন সাইকেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। কলকাতার বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের উপরে এক সাইকেলের দোকানের ম্যানেজার বলছিলেন, ‘‘বিক্রি বেড়েছে। তবে আগের মাসে এর চেয়েও বেশি বিক্রি হয়েছিল। যাঁদের সাইকেল কেনার ছিল, তাঁরা অনেকে ইতিমধ্যেই কিনে ফেলেছেন।’’ গিয়ারওয়ালা আধুনিক, না কি চিরাচরিত মডেল— কোন ধরনের সাইকেলের বিক্রি বেশি? তিনি বলছিলেন, ‘‘এই দোকান থেকে পুরনো বাঁকা হ্যান্ডলের সাইকেলের বিক্রিই বেশি হয়েছে।’’ বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটেই অন্য একটি দোকানে পৌঁছে দেখা গেল, সেখানেও ক্রেতার ভিড়। সে দোকানের কর্মীর কথায়, ‘‘সাধারণত স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারাই গিয়ার দেওয়া সাইকেল কিনছেন।’’
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সাইকেল এখন বিশ্বস্ত সঙ্গী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy