নিয়ম মেনে চিকিৎসা চললে পোড়ার ঘা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে না। ছবি: শাটারস্টক।
নিয়ম মেনে বাজি পোড়ালে ও আগুন সম্পর্কে সতর্ক থাকলে সচরাচর খুব বেশি পুড়ে যাওয়ার ঘটনার কথা শোনা যায় না৷ তবু যদি শরীরের ৫ ভাগের এক ভাগও পোড়ে, শিশুদের ক্ষেত্রে ১০ ভাগের এক ভাগ, তা হলে কিন্তু বিপদ আছে৷ এ ছাড়া মুখ, হাত, যৌনাঙ্গ বা রেক্টামের কাছাকাছি পুড়লে, কিংবা শ্বাসের সঙ্গে প্রচুর গরম ধোঁয়া ঢুকে নাকের লোম পুড়ে গেলে বা কাশির সঙ্গে কালো কফ বেরতে থাকলে শ্বাসনালী পোড়ার আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
পোড়ার চিকিৎসা
যতটাই পুড়ুক আর যেখানেই পুড়ুক, পোড়া অংশ বরফ ঠান্ডা জলে রাখুন। প্রথম ৪৮ ঘণ্টা পোড়া অংশ দিয়ে জল বেড়িয়ে যেতে থাকে বলে বেশি পুড়লে জলশূন্যতা হতে পারে৷ রিঙ্গার ল্যাকটেট দ্রবণ শিরার মধ্যে দিয়ে দিলে এ বিপদ কমে৷ প্লাস্টিক সার্জন সৌরভ দাশগুপ্তের মতে, ‘‘অত্যধিক পুড়ে গেলে বা খুব স্পর্শকাতর স্থান ঝলসে গেলে কখনওই বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানো উচিত নয়। প্রথম অবস্থায় বোঝা না গেলেও ঘা শুকনোর সময় এতে ঝুঁকি বাড়ে। তবে হাসপাতালে যেতে দেরি হবে মনে হলে অভিজ্ঞ ডাক্তার বা নার্সকে ডেকে বাড়িতে স্যালাইন চালানোর ব্যবস্থা করুন৷ ক্যাথেটার পরালেও বিপদ কিছুটা কমে৷ শ্বাসনালী পুড়ে গেলে ৩–৪ দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হতে পারে৷ তখন ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে রেখে চিকিৎসা করতে হয়৷ ৭–৮ দিন পর থেকে ঘায়ে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে৷ সে জন্য অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধ দেওয়ার সঙ্গে রোগীকে অন্যদের থেকে আলাদা করে পরিষ্কার ভাবে রাখাও দরকার৷’’
চিকিৎসকদের মতে, হাসপাতালে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে নিয়মিত ড্রেসিং করা হয়৷ নষ্ট চামড়া কেটে নরমাল স্যালাইনে ঘা ধোওয়া হয়৷ রোগীকে বাথটবে শুইয়ে নরমাল স্যালাইন এবং অ্যান্টিসেপ্টিক লোশনে ডুবিয়ে ধুয়ে নিলে সবচেয়ে ভাল৷ রোগী হাঁটতে পারলে শাওয়ারে ধুয়ে তার পর সাধারণ স্যালাইনেও ধুয়ে দেওয়া হয়৷ এর পর অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগিয়ে, জীবাণুমুক্ত ভেজলিন গজ চাপা দেওয়া হয়৷ তার উপর বিছানো হয় তুলোর প্যাড৷ তারপর ব্যান্ডেজ৷
আরও পড়ুন: বাজির ধোঁয়ায় লুকিয়ে ফুসফুসের বিপদ, কী ভাবে বাঁচবেন
সাধারণত এক দিন অন্তর ড্রেসিং হয়৷ কম পুড়লে ২–৩ সপ্তাহে ঘা শুকোতে শুরু করে৷ ঘায়ে কোলাজেন শিট বিছিয়ে দিলে আরও তাড়াতাড়ি শুকোয়৷ সংক্রমণের আশঙ্কা ও ব্যথা কমে যায়৷ ড্রেসিংও লাগে ৪–৫ দিন পর পর৷ খেতে হয় হাই প্রোটিন ডায়েট৷
অস্ত্রোপচার পরবর্তী নিয়ম–কানুন মেনে চললে স্কিন গ্রাফটিংয়ের পর ছ’মাসে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়৷
স্কিন গ্রাফটিং
২–৩ সপ্তাহ ড্রেসিং করেও ঘা শুকোতে শুরু না করলে এই চিকিৎসা পদ্ধতির শরণ নিতে হয়। স্কিন গ্রাফট বসাতে হয়৷ শরীরে গ্রাফট বসাতে থাই থেকে মাঝামাঝি ঘনত্বের চামড়া নিয়ে টেনে তাকে দ্বিগুণ বা তিনগুণ করে ঘায়ের উপর বিছিয়ে সেলাই করে দেওয়া হয়৷ মুখের কোনও জায়গা পুড়লে কানের পিছন বা গলার নীচের চামড়া বসানো হয়৷ বেশি পুড়লে নেওয়া হয় থাই বা বুকের চামড়া৷
সপ্তাহ দু’য়েক পর থেকে কমপ্রেশন গারমেন্ট পরে থাকতে হয় দিনে অন্তত ১৮–২০ ঘণ্টা৷ মুখে স্কিন গ্রাফট করা হলে পরতে হয় মুখোশ৷ অস্ত্রোপচার পরবর্তী নিয়ম–কানুন মেনে চললে ছ’মাসে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ বছর দু’য়েকে পুরোটাই স্বাভাবিক৷
ঘা শুকোনোর সময় আশপাশের চামড়া–মাংসপেশিতে টান ধরে সেই অংশ কুঁচকে যেতে পারে৷ বেঁকে যেতে পারে অঙ্গও৷ এই বিপদ এড়াতে ড্রেসিংয়ের সময় ঘায়ের কাছাকাছি সন্ধিতে, যেমন গলা, বাহুমূল, কনুই, কব্জি, আঙুল, কুঁচকি, হাঁটুর পিছন ইত্যাদি অংশে স্প্লিন্ট পরিয়ে দিতে হয়৷ গলায় পরানো হয় কলার বা প্লাস্টার অব প্যারিসের কাস্টিং, যাতে বুক–পিঠ–হাতের উপরের অংশের পোড়া শুকোনোর সময় গলা বেঁকে না যায়৷ হাতের উপরের অংশ পুড়লে প্লাস্টার অব প্যারিসের স্ল্যাবের উপর কনুই বেঁধে হাত সোজা করে রাখা হয়৷ বাহুমূলও স্প্লিন্টে বেঁধে শরীরের সঙ্গে ৯০ ডিগ্রি কোণে রাখা হয়৷ আঙুল রাখা হয় গ্লাস হোল্ডিং পজিশনে৷ পা পুড়লে হাঁটুর পিছনে স্ল্যাব দেওয়া হয়৷ দিনে দু’–তিন বার স্ল্যাব বা স্প্লিন্ট খুলে ফিজিওথেরাপি করতে হয়৷ স্কিন গ্রাফটিংয়ের পরও এই একই নিয়ম মেনে চলতে হয়।
আরও পড়ুন: ঘরে শ্যামাপোকার উৎপাত বাড়ছে? এই সব উপায়েই মিলবে সমাধান
শরীরের কোনও অংশ বেঁকে গেলে সেই অংশ কেটে মাংসপেশির টান ছাড়িয়ে দেওয়ার পর খোলা ঘায়ে স্কিন গ্রাফটিং করা হয়৷ সঙ্গে কমপ্রেশন গারমেন্ট, স্প্লিন্ট এবং অঙ্গটির কার্যকারিতা ঠিক রাখতে ফিজিওথেরাপি চালিয়ে যেতে হয়৷ ছ’-আট মাসেই ফল মেলে হাতেনাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy