— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বাচ্চা চিবিয়ে খাচ্ছে না, অভিভাবকদের কাছ থেকে এই অভিযোগ পাননি এমন শিশুচিকিৎসক বা পুষ্টিবিদ কম। যুক্তি বলছে, একটি বাচ্চা তখনই চিবোবে, যখন শক্ত বা আধা শক্ত খাবার তার মুখে যাবে। তার মস্তিষ্ক তাকে চিবোতে বাধ্য করবে। না হলে খাবারটা সে গিলতে পারবে না। এই ভাবে সে চিবোতে শিখবে। কিন্তু এই শেখার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় বেশ কিছু অভ্যেস, যার সিংহভাগ দায় অভিভাবকের।
কিছু বাচ্চা কেন চিবিয়ে খেতে পারে না
দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু বাচ্চা একটা বয়সের পরেও ভাত, ফল, তরকারি চিবিয়ে খাচ্ছে না। বেগতিক দেখে মায়েরা তাদের সব খাবারই পিষে প্রায় তরল করে দেন, যাতে গিলে খেতে পারে। বাচ্চার না চিবোনো কি কোনও রোগ বা সমস্যা? উত্তরে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি বললেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে এটা রোগ। যাদের মস্তিষ্কে দুরারোগ্য কোনও সমস্যা রয়েছে, তারা চিবিয়ে খেতে পারে না। যেমন সেরিব্রাল পলসি দ্বারা আক্রান্তরা চিবোতে পারে না। এদের মুখে খাবার দিলে তারা গিলতে পারে। অনেকের গিলে খাওয়ারও ক্ষমতা থাকে না। এদের বাদ দিলে স্বাভাবিক সুস্থ বাচ্চা যদি একটা বয়সের পরে না চিবোয়, তা হলে সেটা তাদের বিহেভিয়োরাল বা ফাংশনাল প্রবলেম। ছোটবেলা থেকে অভ্যেস করানো হয়নি।” তবে অভিভাবকেরা সচেতন হলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটাও স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিছু বাচ্চা (৩-৪ বছরের) ভাত-ডাল কিছুতেই চিবোতে চায় না। কিন্তু তাকেই চিপস, কেক, বিস্কুট, চকলেট দেওয়া হলে কামড়ে চিবিয়ে খাচ্ছে।’’
অনেকে মনে করেন দাঁত দেরিতে বেরোনোর জন্য শিশুরা চিবিয়ে খেতে পারে না। ‘‘কিছু শিশুর দাঁত দেরিতে ওঠে এবং তার জন্য কিছু ক্ষেত্রে চিবিয়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাসে বিলম্ব হয়। কিন্তু এটা ঠিক যে, চিবোনোর অভ্যেস যদি একেবারেই তৈরি না হয় তা হলে দাঁত ঠিক সময়ে গজানোর সমস্যা দেখা দিতে পারে। না চিবোনোর ফলে হজমের সমস্যা হয়। কারণ খাবার চিবোনোর ফলে মুখে যে লালা নির্গত হয় তার মধ্যে কিছু এনজ়াইম থাকে, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। না চিবোলে গোটা খাবার পাকস্থলীতে চলে যায়। ফলে পরিপাকে সমস্যা হয়, তখন বাচ্চারা বমি করে দেয়। তাই চিবোনোর অভ্যেস করানোটা জরুরি, না হলে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেবে,’’ বললেন ডা. গিরি।
অভিভাবকদেরই তৈরি করতে হবে অভ্যেস
একদম ছোট বয়স থেকে বাচ্চাদের খাওয়ার ব্যাপারটা মা বা বাড়ির অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে। শুধু পুষ্টিকর খাবার নয়, সে কী ভাবে খাচ্ছে সেটাও খেয়াল রাখা জরুরি। এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরী বললেন, ‘‘ছ’মাসের পর থেকে শরীরের জন্মগত আয়রনের ঘাটতি হতে শুরু করে যদি শিশুটি ঠিক মতো খাবার না পায়। প্রোটিনের অভাবেও অপুষ্টি হতে পারে। তাই ছ’মাস পর্যন্ত মায়ের দুধের পরে সাধারণ খাবার দিতে হবে। প্রথমে লিকুইড, যেমন দুধ, ফলের রস। তার পর ধীরে ধীরে সেমি-সলিড, যেমন খিচুড়ি, সুজি, পায়েস, ডিমের নরম কুসুম, আপেল সিদ্ধ ইত্যাদি। আর একটু বয়স হলে নরম খাবার, ভাত নরম করে ডাল দিয়ে মেখে দেওয়া, চিকেন ও সবজি বেশি করে সিদ্ধ করে নরম করে দেওয়া ইত্যাদি। দু’বছরেই সফট থেকে সলিড খাবে। যেমন ঘরে বাকিরা খায়, সেই খাবারই একটু নরম করে মেখে দিন। দু’বছর বয়স থেকে খাবারের পরিমাণও একটু একটু করে বাড়াতে হবে। এমনকি দু’বছর অবধি বাচ্চাদের কোনও সাপ্লিমেন্ট না দেওয়াই উচিত। যদি দিতেই হয় তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দিন।’’ একটি বাচ্চার চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যেস কী ভাবে তৈরি হবে তা নির্ভর করে মা ও বাকি অভিভাবকদের উপরে। তাই তাঁদের কতগুলি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
মডেল: রোমিত বন্দ্যোপাধ্যায়;
ছবি: অমিত দাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy