Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Weather

শীতকাল কি এসেই গেল! বাতাসে হিমেল ভাব কি ঋতুবদলের বার্তাবাহক, না কি দু’দিনের অতিথি?

ইদানীং ভোরের দিকে নেমে যাচ্ছে তাপমাত্রা। পাখা কমাতে হচ্ছে। বাতাসে একটু রুখসুখু। ভারী পোশাক পরতে কষ্ট কম। শীত কি তবে এসেই গেল?

কলকাতায় শীত পড়া নিয়ে আহ্লাদের শেষ থাকে না। আর হবে না-ই বা কেন? এ শহর তো সে ভাবে শীতকাল দেখেও না।

কলকাতায় শীত পড়া নিয়ে আহ্লাদের শেষ থাকে না। আর হবে না-ই বা কেন? এ শহর তো সে ভাবে শীতকাল দেখেও না। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২ ১৮:৪২
Share: Save:

বাতাসে শিরেশিরে ভাব। ঘুম থেকে উঠেই যেন টান ধরছে হাত-পায়ের চামড়ায়। মধ্যরাতে ঘুমের মাঝেই হাত চলে যাচ্ছে শীতাতপনিয়ন্ত্রক যন্ত্রের রিমোটে। বন্ধ হচ্ছে এসি। বেখেয়ালেই সুতির বদলে আলমারি থেকে সাধের সিল্কের শাড়ি নামাচ্ছেন পাড়ার বৌদি।

শীতকাল কি তবে এসেই গেল সুপর্ণা?

কলকাতায় শীত পড়া নিয়ে আহ্লাদের শেষ থাকে না। আর হবে না-ই বা কেন? এ শহর তো সে ভাবে শীতকাল দেখেও না। বড়দিনে শীতপোশাক গায়ে তুলতে পারলে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন শহরবাসী। সেই শহরে কি না পুজো যেতে না যেতেই শীতের আগমন! এ তো উৎসবেরই মতো!

বাতাস এ সময়ে আর গ্রীষ্ম-বর্ষার মতো ভারী থাকে না।

বাতাস এ সময়ে আর গ্রীষ্ম-বর্ষার মতো ভারী থাকে না। ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু সত্যিই শীত আসছে কি? লেপ-কম্বল নামিয়ে রোদে দেওয়ার সময় এসেছে তবে?

সে উৎসাহে জল ঢালছেন আবহাওয়াবিদেরা। তাঁরা বলছেন, এত তাড়ার কিছু নেই। সবে তো ৩০-এর কোঠায় নেমেছে তাপমাত্রা। এখনও শীত আসতে ঢের দেরি। পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলের প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সবে তো বর্ষা বিদায় নিচ্ছে। এখনই শীতের আসা নেই। তবে কি এই ফুরফুরে মৌসম শুধু দু’দিনের মেহমান? সঞ্জীবের বক্তব্য, ‘‘এ হল বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময়। শীতের শুরু নয়। প্রতি বছর বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময়ে তাপমাত্রা খানিকটা পড়ে। এখনও সেটাই হচ্ছে।’’

কিন্তু প্রতি বার কি পুজোর পরেই এমন শীত-শীত ভাব আসে? তা তো নয়! সঞ্জীব বলছেন, তাপমাত্রার সঙ্গে পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর কথায়, ‘‘পুজো এক-এক বছর এক-একটা সময়ে আসে। তবে অক্টোবর মাসের মাঝের সময়টা এমনই হয়।’’ বর্ষা বিদায় নিচ্ছে। এখন ধীরে ধীরে উত্তুরে হাওয়ার তেজ বাড়তে পারে।

প্রতি বছর বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময়ে তাপমাত্রা খানিকটা পড়ে।

প্রতি বছর বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময়ে তাপমাত্রা খানিকটা পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

তা হলে কি বলা যায়, শীত না এলেও ফুরফুরে সময় এসে গিয়েছে? আর প্যাচপেচে ঘাম, বিরক্তিকর গরম থাকবে না? সুন্দর সময় এসে গিয়েছে?

বছর বছর গরমে রেকর্ড তৈরি করে কলকাতা। এ বছরও বাদ পড়েনি। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়েছে পারদ। তার পরেই টানা বৃষ্টি হওয়ায় চলাফেরায় সমস্যা হয়েছে অনেক দিন। পুজোর ক’দিনও ভ্যাপসা গরম আর ঘামে বিরক্ত হয়েছেন অনেকে। তাই এ সময়টা খানিক স্বস্তির আশ্বাস দিচ্ছে। সত্তরের সুকুমারী গুপ্তের সে কালের কথা মনে পড়ছে এ সব দেখে। বলছিলেন, ‘‘আমাদের ছোটবেলায় পুজোর পর থেকেই বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব থাকত। কালীপুজোর রাতে অনেক সময়ে গায়ে গরম জামা দিতে হত।’’ ভাইফোঁটার পর থেকে টানা কিছু দিন হেমন্তকাল তখন স্পষ্ট উপভোগ করা যেত। বেশ মনে আছে সুকুমারীর।

রবি ঠাকুরের গান-কবিতা হোক বা গ্রামবাংলার নবান্ন উৎসবের উদ্‌যাপন, সবের মধ্যেই বর্ষাবিদায়ের পর হেমন্তের উদ্‌যাপনের আভাস রয়েছে। এখন কি তবে সেই সময় ফিরে এল? তবে এ সময়টিকে আলাদা ভাবে দেখার কিছু নেই। এখন ক’টা দিন তাপমাত্রা একটু কম বলে এমন মনে হচ্ছে মাত্র, বক্তব্য আলিপুর হাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ গণেশকুমার দাসের। তাঁর কথায়, ‘‘এমনও ভেবে নেওয়ার কারণ নেই যে, তাপমাত্রা আর বাড়বে না। বাড়তেই পারে। বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময়ে দিন কয়েক তাপমাত্রা নামে। এখন তেমনটাই হচ্ছে।’’

কলকাতায় অবশ্য কখনওই এত তাড়াতাড়ি শীতকাল আসে না। বাংলায় শীতের আগমন ঘটতেও বেশ দেরি আছে। মনে করালেন আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণায় যুক্ত শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অধিকর্তা দীপায়ন দে। নভেম্বরের মাঝামাঝির আগে শীতের আভাস মেলার আশা নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বর্ষা বিদায় নিতে শুরু করলেই হাওয়ায় আর্দ্রতা কমে। তাই সকালের দিকে চামড়ায় টান ধরছে। একটু শীত শীত করছে। বাতাস এ সময়ে আর গ্রীষ্ম-বর্ষার মতো ভারী থাকে না। জলের পরিমাণ কমে। সেটাই হচ্ছে। একটু ফুরফুরে ভাব এসেছে মাত্র। তাই অনেকের মনে হচ্ছে শীতকাল এল বলে।’’ কিন্তু শীতের কথা ভেবে আনন্দিত হওয়ার চেয়ে এ সময়ে আরও বেশি সাবধান হওয়া দরকার বলে মনে করেন দীপায়ন। তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‘শীত আসার আগের এই সময়টা দেখতে যত ফুরফুরে, তত সুখের কিন্তু নয়। হাওয়ায় আর্দ্রতা কমতেই বাড়তে শুরু করে ধূলিকণা। দূষণ বাড়ে। তার থেকে সর্দি-কাশি, জ্বরের মতো রোগভোগ লেগেই থাকে।’’ ফলে শরীর সম্পর্কে সাবধান হতে হবে।

তবে আবহাওয়াবিদরা যা-ই বলুন, কবি থাকলে একটা কথা বলতেনই— শীতকাল আসুক বা না-ই আসুক, জ্বরের চিন্তা থাকুক, বা না-ই থাকুক, সময়টা ফুরফুরে!

অন্য বিষয়গুলি:

Weather Winter Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy