Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
corona Negative

দ্বিতীয় বার করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কতটা? রোগ ফেরার ভয় কাদের বেশি?

করোনা রোগী সেরে গেলেও পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। রোগ যাতে 'রিল্যাপ্স' না করে তার দিকে নজর রাখতে হবে।

ফল নেগেটিভ আসলেও বহু দিন সতর্কতা মেনে চলতে হবে। ছবি: শাটারস্টক

ফল নেগেটিভ আসলেও বহু দিন সতর্কতা মেনে চলতে হবে। ছবি: শাটারস্টক

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২০ ১২:৩১
Share: Save:

ফিরে ফিরে আসছে কোভিড। চিনে সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশের শরীরে নতুন করে রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই শতাধিক মানুষ নতুন করে আক্রান্ত। খবর এসেছে জাপান, ইরান থেকেও। এমনকি, আমাদের দেশেও দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। ফলে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের কপালে যেমন চিন্তার ভাঁজ, অস্বস্তি ও আতঙ্কে সাধারণ মানুষও। একাধিকবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও কেন এত তড়িঘড়ি ফের রোগে পড়া!

রোগ কেন ফিরছে

সংক্রামক রোগের চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী জানিয়েছেন, “‘মূলত দু’টি কারণে এ রকম হতে পারে— হয় রোগটা আবার হল, নয়তো ভাইরাস নিজেকে পাল্টে নতুনরূপে দেখা দিল। ধরুন কারও ম্যালেরিয়া হয়েছে। চিকিৎসায় সেরে গেলেন। আবার কিছু দিন পর একই রোগে পড়লেন। তাঁকে কিন্তু নতুন করে মশা কামড়ায়নি। তা হলে রোগ হল কী করে? আসলে রোগের শিকড় শরীরেই ছিল।''

আরও পড়ুন: কোন কোন ধরনের টেস্ট করা হয় কোভিডে, কারা করাবেন?​

তিনি বলেন, ''ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে পরজীবী লিভারে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। রোগ সেরে যাওয়ার ৩-৬ মাস বাদে সুযোগ বুঝে আবার রক্তে এসে রোগের সৃষ্টি করে। অর্থাৎ রোগ রিল্যাপস করে বা ফিরে আসে। ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় ক্ষেত্রে ঘটনাটা একটু অন্য ভাবে ঘটে। চিকিৎসা চলাকালীন যখন ওষুধে জীবাণুতে লড়াই হয়, জীবাণুরা চেষ্টা করে নিজেদের মিউটেট করে ওষুধকে হারাতে। কিছু জীবাণু তা করেও ফেলে। ফলে রক্তে এরা বেঁচে থাকে। প্রথম বার রোগ সারার ২-৩ সপ্তাহ পর আবার ফিরে আসে একটু বাড়াবাড়ি রূপে। কোভিডের কোনও ওষুধ নেই। ফলে ভাইরাস শরীরে ঢুকলে তার সঙ্গে লড়াই করে শরীরের অ্যান্টিবডি। প্রথম লড়াইয়ে ভাইরাস দমে গেলেও নিঃশেষ হয় না। তখন হয়তো ভাইরাস ও অ্যান্টিবডি থেকে যায় পাশাপাশি। যখন সময়ের সঙ্গে অ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে, ফের মাথাচাড়া দেয় ভাইরাস। রোগ ফিরে আসে। আর যদি অ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়তে লড়তে ভাইরাস মিউটেট করে যায়, তা হলে যারা নিজেদের পাল্টাতে পারল না তারা মরে গিয়ে রোগ তখনকার মতো সারলেও পরিবর্তিত ভাইরাসগুলি আবার সময়ের সঙ্গে বংশবৃদ্ধি করে এবং রোগ হিসেবে ফিরে আসে। কী কারণে রোগ ফিরে এল তা সঠিক ভাবে জানতে হলে রোগীর শরীর থেকে ভাইরাস নিয়ে তার জেনেটিক ম্যাপিং করতে হবে। প্রথম বার রোগে পড়ার পর জিনের চরিত্র যা ছিল, দ্বিতীয় বার তা পাল্টে গেলে বুঝতে হবে ভাইরাস মিউটেট করার জন্য রোগ হচ্ছে। আর এক থাকা মানে সম্ভবত বিপত্তি ঘটেছে অ্যান্টিবডি কমে যাওয়ার জন্য।”

আরও পড়ুন: প্রায় উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গের করোনা আক্রান্তরা কী করবেন?

কাদের রোগ ফিরবে, কাদের নয়

অমিতাভ নন্দীর মতে, অত নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যায় না এখনও। তবে মনে হয়, যাঁদের সংক্রমণ হালকা হয় ও উপসর্গ দেখা দিতে কিছুটা সময় পার হয়ে যায়, তাঁদের দ্বিতীয় বার রোগে পড়ার আশঙ্কা কম। কারণ ওই অত দিন ধরে ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে লড়তে প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তারাই কাজ করে রক্ষাকবচ হিসেবে। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে এই সুবিধে পাওয়া যায় না সব সময়।

আরও পড়ুন: আসল এন৯৫ চিনবেন কী করে? সংশয় হলে কী করবেন?​

রোগ সারার কত দিন পর স্বাভাবিক জীবন

অমিতাভবাবুর মতে, “রোগসেরে যাওয়ার দু’টি রূপ, (১) উপসর্গ কমে রোগী তরতাজা হয়ে গেলেন, (২) ভাইরাস নির্মূল হল। শরীর যত ক্ষণ না ভাইরাসমুক্ত হচ্ছে, আশঙ্কা থেকেই যায় যে আবার রোগে পড়তে পারেন বা রোগ ছড়াতে পারেন। তবে আবার বলছি, নিশ্চিত করে বলার সময় এখনও আসেনি। আসলে এই রোগের কোনও ওষুধ নেই বলেই সমস্যা হচ্ছে। অ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়াইয়ে ভাইরাসের মাত্রা কমে, কিন্তু সব সময় নির্মূল হয় না।

রোগ ফেরার কারণ জানতে রোগীর শরীর থেকে ভাইরাস নিয়ে জেনেটিক ম্যাপিং করতে হবে। ছবি: শাটারস্টক

কোন পরীক্ষায় জানা যাবে?

আরটিপিসিআর পরীক্ষা করলে জানা যায় শরীরে ভাইরাস আছে কি নেই। কিন্তু এই পরীক্ষা শেষ কথা বলবে সেটাও নয়। কাজেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসামাত্র মেলামেশা করা ঠিক নয়। অন্তত দু’তিন মাস কড়া নজরদারিতে থাকতে হবে। ঘন ঘন টেস্ট করাতে হবে। তবে বলা যাবে তিনি স্বাভাবিক জীবনে কবে নাগাদ ফিরতে পারবেন।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২

• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১

• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy