হেঁশেলের আর কোনও উপাদানই বাকি নেই। পেটে না পুরে, ত্বকে মেখে রূপচর্চার প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু কোনটি কার্যকর, আর কোনটি নয়, তা নিয়ে ধোঁয়াশার শেষ নেই। বিশেষত, সমাজমাধ্যমের রমরমার যুগে একাধিক তত্ত্ব ঘোরাফেরা করে চারপাশে। তার ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হাতেগোনা মানুষ।
আলু, পেঁয়াজ, টমেটো, আদা, রসুন, সবই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এ সবের উপকারিতা যে অঢেল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ঠিক যেমন আদা। পেটের সমস্যা হোক বা বদহজম, ব্লাড সুগারের মাত্রাবৃদ্ধি হোক বা দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, সবেতেই কার্যকরী এটি। খাদ্যাতালিকায় আদা থাকলে, তাতে ত্বকেরও ডজন ডজন উপকারিতা। কিন্তু যদি কাঁচা আদা মুখে মাখা হয়, তাতে কি ত্বকের উপকার হবে? ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই কাঁচা আদা মুখে ঘষেন, এর কার্যকারিতা কতখানি?

ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে আদার একাধিক উপকারিতা। ছবি: সংগৃহীত।
উত্তর দিচ্ছেন দিল্লির চর্মরোগ চিকিৎসক গুলহিমা অরোরা। তিনি বলছেন, ‘‘ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে আদা অবশ্যই কার্যকর। তবে কেবল পরোক্ষ ভাবে। ব্রণের মতো চর্মরোগের মোকাবিলা করার ক্ষমতা একা একটি মশলার নেই। পুরোপুরি নির্মূল করতে পারে না। সঙ্গে অন্যান্য উপায় এবং ওষুধের প্রয়োজন।’’
চেন্নাইয়ের চর্মরোগ চিকিৎসক সরণ্যা বি বলেন, ‘‘মুখে কাঁচা আদা ঘষলে ব্রণ দূর হয় না। অন্তত এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও মেলেনি। যদিও এর প্রদাহ-বিরোধী এবং অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু সরাসরি মুখে মাখলে উল্টে ত্বকে জ্বালা হতে পারে।’’ একমত গুলহিমা অরোরাও। তিনি বলেন, ‘‘কাঁচা আদা আসলে ক্ষার-যুক্ত। তার ফলে ত্বকের পিএইচ পরিবর্তন করতে পারে। ব্রণ কমানোর বদলে বাড়িয়েও দিতে পারে। কাঁচা আদা সরাসরি মুখে লাগালে জ্বালা, অ্যালার্জি, অতিরিক্ত শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়।’’
তবে ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে আদার একাধিক উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু বাহ্যিক ব্যবহারের চেয়ে আদা খেলে বেশি উপকার বলেই দাবি চিকিৎসকদের।
আদা কি তা হলে আদৌ ব্রণ দূর করতে সাহায্য করতে পারে?
মুখে মেখে নয়, সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে আদা খেলে অবশ্যই ব্রণের উৎপাত কমাতে সাহায্য করতে পারে। আদা দেওয়া চা খেলে শরীরের ভিতর থেকে প্রদাহ কমতে পারে। আদা হজম এবং অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এটিই সরাসরি ত্বকের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলস্বরূপ ত্বকের উন্নতি হয়। কিন্তু ব্রণ নির্মূল করতে পারে না, কেবল কমাতে সাহায্য করে। তবে গুলহিমার মতে, কাঁচা আদার বদলে গ্লিসারিন বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পাতলা করে নিয়ে মুখে মাখা যায়। আদা দিয়ে তৈরি ফেস মাস্ক এবং স্ক্রাব-ও নিরাপদ বলে দাবি চিকিৎসকদের।