Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
World Autism Awareness Day

অটিজ়ম নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে কি ঘরে ঘরে? বড়রা সতর্ক হলে শিশুদের কতটা সুবিধা হয়?

খুদের নানা অসুবিধা দেখেও অনেকে মনে করতেন, বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। চারদিকে অটিজ়ম নিয়ে এত প্রচারের ফলে কি ছবিটা একটু বদলেছে? ‘বিশ্ব অটিজ়ম দিবস’-এ খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

A Photograph representing Autism

মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যার নাম অটিজ়ম। প্রতীকী ছবি।

সুদীপা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:০০
Share: Save:

রাইমার ছেলের বয়স যখন ৩ বছর, তখন তিনি খেয়াল করলেন, সে কোনও কথাই বলতে পারছে না। অথচ ওর বয়সি অন্য শিশুরা এর মধ্যেই দিব্যি ‘বাবা-মা-দাদা’ ডাকছে। কেউ কেউ তো আবার ছোট ছোট শব্দে বকবকও করে যাচ্ছে অনায়াসে। কিন্তু রাইমার ছেলে কেমন চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। কথা বলা তো দূর। চিন্তার ভাঁজ রাইমার কপালে। এরই মধ্যে কেউ বলেছিল ‘স্পিচ থেরাপি’ করাতে, আবার কেউ ‘হিয়ারিং টেস্ট’ করানোর পরামর্শ দেন। কোনওটিই বাদ দেননি। কিন্তু তাতেও লাভ হল না। শেষে মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান ছেলেকে। আর তখনই জানতে পারেন, তাঁর ছেলে ‘অটিস্টিক স্পেকট্রাম সিনড্রোম’-এর শিকার।

ছবি: সংগৃহীত।

মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যার নাম অটিজ়ম। ২ এপ্রিল ‘বিশ্ব অটিজ়ম দিবস’। সংবাদমাধ্যম হোক কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান— নানা জায়গাতেই এই দিনটি পালন করা হয়। সরকারি, বেসরকারি ক্ষেত্রে আয়োজিত হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কর্মসূচি।

একটা সময় ছিল যখন প্রাথমিক ভাবে বাচ্চার চোখ বা কানের পরীক্ষার কথা বললেই অনেক অভিভাবক তা মানতে পারতেন না। সন্তানের মধ্যে কোনও প্রতিবন্ধকতা আছে, তা মেনে নেওয়া তো পরের কথা। খুদের মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ দেখেও অনেকেই মনে করতেন, বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। চারদিকে অটিজ়ম নিয়ে এত প্রচারের ফলে কি ছবিটা আদৌ বদলেছে?

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ‘প্রদীপ’ নামের একটি স্কুল চালান মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘ দিন ধরে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘আগের তুলনায় অভিভাবকদের মধ্যে অটিজ়ম নিয়ে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। আগে শিশুদের অনেক বড় বয়সে এই সমস্যা ধরা পড়ত। তবে এখন শিশুদের ছোট বয়স থেকেই বাবা-মায়েরা সতর্ক হচ্ছেন। দুই-আড়াই বছর বয়সের শিশুরাও বাবা-মায়েদের হাত ধরে এখন আমাদের স্কুলে আসছে। আগে ৬ থেকে ৭ বছর বয়স পার করে যখন সন্তানের সমস্যা অত্যধিক ভাবে চোখে পড়ত, তখনই অভিভাবকরা সন্তনকে ‘স্পেশ্যাল স্কুল’-এ ভর্তি করানোর কথা ভাবতেন। ছবিটা এখন অনেকটাই বদলেছে। সচেতনতা না বাড়লে এমনটা সম্ভব হত না। কেবল আমাদের মতো সংস্থাই নয়, সরকারি স্তরেও অটিজ়ম নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে অনেক রকম কাজ হচ্ছে। সরকার অটিজ়ম স্ক্রিনিং টুল তৈরি করেছে। আশাকর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলায় জেলায় শিশুদের উপর নজর রাখার জন্য। কোনও শিশুর এ রকম সমস্যা হলে কী ভাবে বাবা-মায়েরা তাঁদের সহায্য করবে, সে বিষয়ে জানাতে আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।’’

যত কম বয়সে শিশুদের এই সমস্যার কথা জানতে পারা যাবে, ততই তাড়াতাড়ি তাদের চিকিৎসা সম্ভব হবে। বাবা-মায়েরা কী ভাবে সতর্ক হবেন? মল্লিকা বলেন, ‘‘শিশুদের বৃদ্ধির একাধিক স্তর থাকে। দৈহিক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বৃদ্ধিও এমনই একটি স্তর। এ সময়ে শিশু মাকে দেখে হাসে, কোনও কিছুর দিকে আকার-ইঙ্গিতে নির্দেশ করে কিংবা শিশুর শব্দস্ফূরণ হয়। অর্থাৎ, সমাজে চলতে শেখার শুরু হয়। এই প্রক্রিয়াটি সঠিক ভাবে সম্পন্ন না হওয়াই অটিজম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডারের লক্ষণ। কারও সঙ্গে মেলামেশা না করা, অনেক খেলনার মাঝেও কেবল একটি খেলনা নিয়ে খেলা, নতুন কিছুতে আগ্রহ না দেখানো, নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া বা একটানা আপন মনে থাকার মতো কিছু লক্ষণ শিশুর মধ্যে দেখলেই সতর্ক হতে হবে। সব অটিস্টিক শিশুর সমস্যা এক রকম হয় না। তাই সমস্যা কতটা রয়েছে, তা বোঝা সবার আগে দরকার। সেই মতো কোন কোন থেরাপি ও ট্রেনিং চলবে, তা নির্ধারণ করি আমরা।’’

অটিস্টিক শিশুদের সাধারণ স্কুলে ভর্তি নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে চর্চা চলে বিস্তর। যে বাবা-মায়েরা খুদে অস্টিস্টিক জেনেও তাকে সাধারণ স্কুলে ভর্তি করাতে চান, তাঁদের সিদ্ধান্ত কি ঠিক? মল্লিকা বলেন, ‘‘সব বাবা-মা চান যাতে তাঁদের সন্তান সাধারণ স্কুলে যেতে পারে। তবে আমি তাঁদের একটা কথাই বলব, আপনি আপনার মানসিক শান্তির জন্য তাকে স্কুলে পাঠাবেন, না কি তার কিসে উপকার হবে তার উপর গুরুত্ব দেবেন? খুদের যদি সেখানে ক্ষতি হয়, তা হলে কি সেটা মানতে পারবেন?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy