কোন ধরনের রোগীর শরীরে গিয়ে ক্ষতি করতে পারে আইভারমেক্টিন, তা না জানতে পারা পর্যন্ত এটি ব্যবহার করতে নিষেধই করছে ‘হু’। ফাইল চিত্র
জটায়ু থাকলে বলতেন, ‘‘হাইলি সাসপিশাস!’’ কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, আঠারো-ঊর্ধ্ব করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেক্টিন দেওয়া হোক। আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, করোনা সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে আইভারমেক্টিন দেওয়া অনুচিত! ব্যাপারটা কী? করোনা-আক্রান্তেরা কী করবেন? আইভারমেক্টিন খাবেন? নাকি খাবেন না?
আইভারমেক্টিন কি সত্যিই করোনা সংক্রমণের তীব্রতা কমায়? সম্প্রতি গোয়া সরকারের এক পদক্ষেপের পর দেশজুড়ে ঘুরছে এই প্রশ্ন। গোয়ায় ১৮ বছরের উপর সকলকে ওই ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। কিন্তু ‘হু’ ইতিমধ্যেই আইভারমেক্টিন ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছে। তাদের বক্তব্য, ওই ওষুধ সকলের জন্য সমান ভাবে কাজ করছে না। ওই ওষুধের কুপ্রভাবের বেশ কিছু উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হু-এর এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, যাঁদের কোমর্বিডিটি থাকে, তাঁদের সকলের শরীরে এক ভাবে কাজ করছে না আইভারমেক্টিন। কর্নাটকে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গেও এমন দু’টি ঘটনা নজরে এসেছে। এখনও গবেষণা চলছে এটা জানতে যে, কোন ধরনের রোগীর শরীরে গিয়ে ক্ষতি করতে পারে ওই ওষুধ। তা না জানতে পারা পর্যন্ত এটি ব্যবহার করতে নিষেধই করছে ‘হু’। ওই চিকিৎসকের আরও বক্তব্য, ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে এমনিতেই ওষুধ কম পাওয়া যায়। ফলে ‘হু’-র চিকিৎসকদের পরামর্শ, মাত্র একটি ওষুধের উপরে ভরসা করে ক্ষতি না হয়ে যায়, সে দিকে নজর দিতে হবে! তাঁদের ধারণা, ‘‘করোনা থেকে সেরে ওঠার পর যে অতিরিক্ত দুর্বলতা থাকছে কারও কারও, তা-ও আইভারমেক্টিনের কারণেই।’’
বস্তুত, যে কোনও ওষুধেরই যে ভাবে বিলেত-আমেরিকায় পরিসংখ্যানবিদদের দিয়ে কঠোর পরীক্ষা করানো হয়, এ দেশে তা হয় না। আইভারমেক্টিনেরও হয়নি। সেই কারণেই ‘হু’ এই ওষুধটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু ওষুধ দেওয়ার বিষয়ে কলকাতার চিকিৎসকদের একটি অংশ বরাবর দরাজহস্ত (অনেকের মতে, তাঁরা বেশি বেশি ওষুধ দিতে পছন্দ করেন)। রাজ্যের চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেক্টিন ব্যবহৃত হচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরেই। এমনকি, প্রতিষেধক টিকা আসার আগে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের একটি অংশ ওই ওষুধ খেয়ে কাজ করেছেন দিনের পর দিন।
তবে পাশাপাশিই ওই চিকিৎসকরা বলছেন, ওই ওষুধের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই থাকবে না, তেমনও নয়। বরং করোনা প্রতিরোধের চেষ্টায় ইচ্ছামতো আইভারমেক্টিন ব্যবহার নিয়ে সংশয় রয়েছে কারও কারও মনে। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, টিকা আসার আগে আইভারমেক্টিন তিনিও খেয়েছেন। তবে তা সত্ত্বেও করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন। তবে তাঁর বক্তব্য, আইসিএমআর কোভিড চিকিৎসার জন্য যে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, তাতে আইভারমেক্টিনের উল্লেখ রয়েছে। তার উপরে নির্ভর করেই কোভিড রোগীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ আইভারমেক্টিন দেওয়া হচ্ছে। অরুণাংশু জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে সকলেই চেষ্টা করছেন যে কোনও উপায়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলার। সে কারণেই আইভারমেক্টিনের ব্যবহার।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, আইভারমেক্টিন করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে তীব্রতা খানিকটা কমাতে পারে। তাই এ রাজ্যে বহু করোনা রোগীকে আইভারমেক্টিন দেওয়া হচ্ছে। এই ধারণা থেকে যে, সংক্রমণ আটকাতে না পারলেও তাতে অতিরিক্ত ক্ষতি হবে না। সংক্রমিত হওয়ার আগেও অনেকে খাচ্ছেন আইভারমেক্টিন। মূলত সংক্রমণের থেকে নিজেকে বাঁচাতে। তবে তাঁদের ডো়জ আলাদা বলে জানান তিনি।
তবে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক তাপস রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, যে কোনও রোগীকেই এক ওষুধ দেওয়া যাবে, সেটা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আইভারমেক্টিন যে আদৌ করোনা রোগীদের সুস্থ করে তুলতে সক্ষম, এমন প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া, রোগীর শারীরিক অবস্থার কথা না যাচাই করে কোনও ওষুধই দেওয়া যায় না। আইভারমেক্টিনের মতো ওষুধ তো নয়ই। যে কোনও ওষুধ অতিরিক্ত ব্যবহারের আগে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তা এখনও জানা যায়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy