ওমিক্রন স্ট্রেনটি আক্রান্তের শরীরে প্রবেশ করলেই অ্যান্টিবডিকে চিনতে পেরে যাচ্ছে
করোনার নতুন স্ট্রেন ওমিক্রন কি বেশি সংক্রামক? এর উপসর্গও কি এক? প্রতিষেধকে কি ওমিক্রন থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে? করোনা ভাইরাসের এই নতুন স্ট্রেন নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে মাথায়। জেনে নেওয়া যাক চিকিৎসকরা কী বলছেন—
ওমিক্রন কি বেশি সংক্রামক?
ডেল্টা স্ট্রেনের সংক্রমণের ভয়াবহতা মাস কয়েক আগেই টের পাওয়া গিয়েছে। ওমিক্রন কি তার চেয়ে বেশি সংক্রামক ও ভয়াবহ? মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘এই স্ট্রেন নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। কারণ স্ট্রেনটা নতুন। এই স্ট্রেনে আক্রান্তদের মধ্যে সিভিয়রিটি দেখা যায়নি। তবে সংক্রমণের হার আগের তুলনায় বেশি। এ রকমই যদি থেকে যায়, তা হলে হয়তো এটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো থেকে যাবে। কিন্তু আরও কিছু দিন এই স্ট্রেনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ
করা জরুরি।’’
অন্য একটি দিকে আলোকপাত করলেন জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘ভাইরাসের মতো যে কোনও ইউনিপার্টিকল বা ইউনিসেলুলার জীবের ক্ষেত্রে বারবার মিউটেশন হওয়া সহজ। তাই একই ভাবে করোনাভাইরাস মিউটেশন করতেই থাকবে। ওমিক্রন স্ট্রেনে মোট ৫০টির মতো মিউটেশন হয়েছে, তার মধ্যে ৩২টি স্পাইক প্রোটিনে, যা ভাইরাসের প্রধান অস্ত্র। তবে এ ক্ষেত্রে এক জনের থেকে আর একজনের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা আগের মতোই থাকছে। সিভিয়রিটিও প্রায় ডেল্টা স্ট্রেনের মতো। কিন্তু রি-ইনফেকশনের সম্ভাবনা এ ক্ষেত্রে অনেক গুণ বেশি। এক বার করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁর আবার এই স্ট্রেনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি প্রতিষেধকের দুটো ডোজ় নিলেও ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমছে না। তবে ওমিক্রন গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এখন। এর গতিবিধি বুঝতে আরও সময় লাগবে।’’
প্রতিষেধক কি কার্যকর?
চিকিৎসকদের মতে, ওমিক্রন স্ট্রেনটি আক্রান্তের শরীরে প্রবেশ করলেই অ্যান্টিবডিকে চিনতে পেরে যাচ্ছে। ফলে যে অ্যান্টিবডি শরীর তৈরি করেছিল, সেটা কাজ করছে না। সেই জন্য প্রতিষেধকের দুটো ডোজ় নেওয়া থাকলেও করোনা নিয়মবিধি মেনে চলতে হবে। তবে নানা স্টাডিতে বিভিন্ন রকমের চিত্র ফুটে উঠছে। ‘‘যেমন অক্সফোর্ডের একটি স্টাডিতে দেখা গিয়েছে, যাঁদের এক বার করোনা হয়েছে ও ভ্যাকসিনেশন সম্পূর্ণ, তাঁদের ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম নয়। কারণ আগের ভ্যাকসিনগুলো ওমিক্রনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারেনি। প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নিলেও ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। আর এক স্টাডিতে দেখা যাচ্ছে, একবার করোনা হলে তাঁর রিইনফেকশনের আশঙ্কা থাকছে। কিছু ভ্যাকসিন সংস্থা দাবি করছে, তৃতীয় ডোজ় নিলে এই স্ট্রেনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা সম্ভব। তবে এটাও ভেবে দেখার বিষয় যে, পুরনো স্ট্রেনের ভ্যাকসিনে তৃতীয় ডোজ় নিলে সুরক্ষা পাওয়া কি সম্ভব? তার জন্য প্রয়োজন নতুন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে নতুন ভ্যাকসিন,’’ জানালেন ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল।
দু’টি নাকি তিনটি ডোজ়ে ভ্যাকসিনেশন সম্পূর্ণ হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে বলে জানিয়েছে ‘সেন্টারস ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’। সংস্থার ডিরেক্টর রোশেল ওয়ালেনস্কির কথায়, ‘‘যত মিউটেশন হবে ভাইরাসটির সঙ্গে লড়তে তত বেশি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। ফলে তা দুটো ডোজ় নিলে তৈরি হবে কি না বলা যায় না। ডোজ় বাড়িয়ে তিনটেও করতে হতে পারে।’’
ওমিক্রনের বিরুদ্ধে প্রতিষেধকের কার্যকারিতা কতটা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন চিকিৎসকেরা। ডা. তালুকদারের কথায়, ‘‘বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ভাবলে, ওমিক্রনের যে জায়গায় মিউটেশন হয়েছে বলা হচ্ছে, আর যে ফর্মুলায় প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে, তাতে ভ্যাকসিন এই স্ট্রেেনর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে কতটা কার্যকর হবে, তা গবেষণাসাপেক্ষ।’’
পরীক্ষা ও রোগনির্ণয়
কোনও ব্যক্তির শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই তাঁকে রিপোর্ট করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো করোনা টেস্ট করালে তা ধরা পড়বে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, রোগীর মধ্যে হয়তো তেমন কোনও উপসর্গ নেই। কিন্তু তবুও রিপোর্ট করা জরুরি। ওমিক্রনের ডায়াগনোসিস কী ভাবে হচ্ছে? ডা. সুবীর মণ্ডল বললেন, ‘‘ওমিক্রনের স্পেসিফিক ডায়াগনোসিস এখনও সব জায়গায় পৌঁছয়নি। এই স্ট্রেন বোঝার জন্য মলিকিউলার ডায়াগনোসিস টেস্ট হয়, এটা খুব দ্রুত করা যায়। কুড়ি মিনিটের মধ্যেই হয়ে যায়। কিন্তু এই টেস্ট এখনও আমাদের দেশে আসেনি। তাই আমরা আগে যে আরটিপিসিআর বা র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতাম, সেটাই করছি। এতে অবশ্য খুব সমস্যাও নেই। কারণ এই স্ট্রেনে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসা পদ্ধতি একই।’’
পরিশেষে এটা স্পষ্ট যে, মাস্ক পরা আর হাত-পা ভাল করে সাবান দিয়ে ধোয়া বা স্যানিটাইজ় করার বিকল্প কিছু নেই। বাচ্চাদের ভ্যাকসিনেকশন এখনও শুরু হয়নি। তাই আগের মতোই মা-বাবাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। শীতের মরসুমে পার্টি, পিকনিক বা জমায়েতে গিয়ে যেন নিজেদের সুরক্ষাকবচ ভেঙে না দিই, সে দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy