সপ্তাহে দুদিন পূর্ণ লকডাউন। সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙবে কি? ফাইল ছবি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে রাজ্য সরকার এখন থেকে সপ্তাহে দু’দিন সম্পূর্ণ লকডাউন-এর কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে সংক্রমণ রুখে দেওয়া কি সম্ভব? সংক্রমণে লাগাম পরাতে আদৌ কি কার্যকর হবে এই পদক্ষেপ? চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ বলছেন এতে ভালই হবে। অবশ্য একাংশের চিকিৎসক সন্দিহান। কী বলছেন তাঁরা?
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের পক্ষে কৌশিক লাহিড়ী জানালেন, এপিডেমিওলজি বা মহামারি সংক্রান্ত বিজ্ঞান অনুযায়ী কখনও সম্পূর্ণ লকডাউন, কখনও সপ্তাহে দু তিন দিন বা একদিন লকডাউন করে সংক্রমণ আটকানোর মডেল বইয়ে আছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই নিয়ম জারি করে সংক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশে এক জন মানুষ একাধিক ব্যক্তিকে সংক্রমিত করছেন এই হার ১.২, বললেন কৌশিক। সংক্রমণের এই হার একের নিচে নামিয়ে আনলে কোভিড ছড়িয়ে পড়া কিছুটা কমবে।
কৌশিকের আশঙ্কা, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষে পৌঁছে যাওয়ার পথে, যেটাকে পিক বলে। তারপর হয়তো বা সংক্রমণের হার কমবে। এর মধ্যে একটাই আশার কথা যে ইউরোপ আমেরিকার থেকে আমাদের দেশে মৃত্যু হার তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। তবে সতর্ক হতে হবে আম জনতাকে। নাকের নিচে মাস্ক পরে করোনার বিস্তার আটকানোর যাবে না, সঠিক পদ্ধতিতে মাস্ক পরে এবং মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রেখে এই অতিমারিকে জব্দ করার পরামর্শ সব চিকিৎসকদের। মাস্ক পরুন, অকারণে বাড়ির বাইরে যাবেন না, নিজের ভাল নিজেকেই বুঝতে হবে।
প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশায় শনি রবিবার সম্পূর্ণ লক ডাউন করে কোভিড ১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া অনেকটা আটকে দেওয়া গেছে বলে দাবি। সেই পথে চলে গোষ্ঠী সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে চাইছেন রাজ্য সরকার। এই ভাবে কি অত্যন্ত সংক্রামক নভেল করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায়? মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বললেন, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। তাই সপ্তাহে দু’দিন সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করে চেষ্টা করা হচ্ছে সংক্রমণ ঠেকানোর। এটি ট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতি। কতটা সফল হবে তা এখনি বলা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু রাজ্যে, এ বার থেকে সপ্তাহে দু’দিন পূর্ণ লকডাউন
পালমোনলজিস্ট অশোক সেনগুপ্ত সপ্তাহে দুদিন লকডাউন করার ভাবনার মধ্যে কোনও যৌক্তিকতা খুঁজে পেলেন না। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে সপ্তাহে একদিন বা দুদিন লকডাউন পালন করা হয়েছে বা এই মডেল প্রয়োগ করে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা গেছে তার কোনও নিদর্শনই নেই। সপ্তাহের অন্যান্য দিন বাসে, ট্রামে, বাজারে জনসমাগম দূরত্ব বিধির কোনও বালাই নেই মাঝখানে দুটো দিন লক ডাউন সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই অশোকবাবুর কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে। সরকারের বিশেষজ্ঞ দলের এই ব্যাপারে একটা বিবৃতি দেওয়া উচিৎ ছিল। কোনও ম্যাথেমেটিকাল মডেল কিংবা বিশ্বের অন্য কোনও দেশ এই নিয়মে লক ডাউন করে সফল হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে চিকিৎসকদেরও প্রশ্ন আছে। কিসের ভিত্তিতে সপ্তাহে দুদিন সব বন্ধ রাখা হবে তার বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা জানার অধিকার মানুষের আছে বলে দাবি করলেন পালমোনোলজিস্ট অশোক সেনগুপ্ত। সাধারণ মানুষের মনেও এই প্রশ্ন উঠছে যে করোনা আক্রমণ কি সপ্তাহের দুদিনেই সীমাবদ্ধ থাকে! এর উত্তর তো কারও জানা নেই। শাসক পক্ষের কোনও সিদ্ধান্ত নেবার পেছনে নিশ্চয়ই কোনও ভিত্তি আছে, তা জানার অধিকার চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষের আছে বলে মনে করেন অশোকবাবু।
আরও পড়ুন:দেশে মোট আক্রান্ত ১১ লক্ষ ৫৫ হাজার, মৃত্যু ছাড়াল ২৮ হাজার
গোষ্ঠী সংক্রমণের ব্যাপারে বলতে গিয়ে উনি জানালেন, ব্যাপারটা ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে। অত্যন্ত চেনা অফিসের সহকর্মী, পাড়ার দোকানি কিংবা গৃহ সহায়িকা এমনকি নিজের বাড়ির মানুষটির নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আছে কি না, আমরা কেউই জানি না। গোষ্ঠী সংক্রমণ হলে ধরে নিতে হবে প্রত্যেকেই সংক্রমিত। সোজা কথায় বলতে গেলে সবাইকেই সন্দেহের তালিকায় রাখা উচিৎ। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ উপসর্গহীন থাকেন। কিন্তু যদি কারও ডায়াবিটিস, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, ক্যানসার বা হার্টের অসুখ থাকে এবং তাঁর শরীরে যদি কোভিড ১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়, তাহলে সেই মানুষটির গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। আরও মারাত্মক ব্যাপার হল অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা পাওয়া।
চিকিৎসকদের একাংশের মত, লকডাউন ট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতি। ফাইল ছবি।
কলকাতা-সহ নানা জেলায় যে সব সরকারি বেসরকারি কোভিড হাসপাতাল আছে এবং যেখানে প্রকৃত চিকিৎসা হয়, সেখানে ভর্তি হওয়া একপ্রকার অসম্ভব, আশঙ্কা প্রকাশ করলেন অশোকবাবু। কেননা কোথাওই শয্যা ফাঁকা নেই। গুরুতর অসুস্থ হলেও চিকিৎসা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই নিজেদের সাবধান হতে হবে।
আরও পড়ুন: কোন মাস্ক পরবেন? ক’দিন পরবেন? কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে মহামারি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। বাঁচতে গেলে নিজেদের ভাল বুঝতে হবে। নাক, মুখ ঢাকা মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক না করলে রোগের বিস্তার ঠেকানো অসম্ভব। একই সঙ্গে মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্যানিটাইজ করা ও একাধিক বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া উচিত। সেন্ট্রালি এয়ার কন্ডিশন অফিস থেকে রোগ ছড়ানো আটকাতে ভাইরাস ফিল্টার লাগানো দরকার। অফিসে বসে কাজ করার সময়ও মাস্ক পরে থাকা বাধ্যতামূলক বললেন অশোকবাবু। রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর আর এক উপায় প্রচুর টেস্ট এবং আইসোলেশন তাও এখনও পর্যন্ত করা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy