পাশে থাকুন সহানুভূতির সঙ্গে। ছবি:শাটারস্টক
বয়স্ক মানুষদের ভাল রাখার দায়িত্ব সবার এবং তার জন্য প্রয়োজন ওঁদের সহযোগিতা। আজ ‘আন্তর্জাতিক বার্ধক্য দিবস’-এর মূল লক্ষ্য বিশ্বের সব বয়স্ক মানুষদের ভাল থাকতে সাহায্য করা। সাম্প্রতিক কোভিড অতিমারিতে ইউরোপ আমেরিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশি বয়সের মানুষের মৃত্যুহার অনেক বেশি ছিল ঠিকই, তবু বয়স্ক মানুষদের সংখ্যা কমে গিয়েছে এমনটা বলা যায় না।
‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টস’-এর ২০১৯ সালে এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ২০৫০ সালে বিশ্বের প্রতি ১১ জন মানুষের মধ্যে ১ জন থাকবেন ৬৫ ঊত্তীর্ণ। ২০১৮ সালে বিশ্বের ইতিহাসে এমন প্রথম ঘটল, ৫ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের তুলনায় ৬৫ ঊত্তীর্ণ বয়স্কদের সংখ্যা অনেক বেশি। ১৯৯০ সালে রাষ্ট্র সঙ্ঘের কর্তারা প্রবীণ নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও মন ভাল রাখার উদ্যোগ নেন। পরের বছর ১৯৯১ সালের ১ অক্টোবর প্রথম ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর এন্ডারলি পিপল’ পালন শুরু হয়। মানুষের গড় আয়ু থেকে অনেক বেড়েছে।
এ দিকে তাঁদের উত্তরপুরুষরা জীবিকার প্রয়োজনে হয় অন্যত্র বসবাস করে অথবা ভয়ানক ব্যস্ত। অন্য দিকে বাড়ির বয়স্ক মানুষেরা অশক্ত শরীর ও আর্থিক অস্বচ্ছলতা নিয়ে দিনযাপন করেন। এঁদের পাশে থাকার ডাক দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্ধক্য দিবসে প্রবীণ নাগরিকদের ভাল থাকতে পরামর্শ দিলেন বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ কৌশিক মজুমদার।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে নখ নিয়ে এই বিষয়গুলি মানতেই হবে
বেশি বয়সের সব থেকে বড় সমস্যা নিঃসঙ্গতা। একা থাকা, বার্ধক্যজনিত অসুখ, সব মিলেমিশে হতাশ লাগা অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে এই কোভিড অতিমারি পরিস্থিতিতে একাকীত্ব অনেক বেড়েছে। কৌশিকবাবুর মত, এক মাত্র লক্ষ্য কোভিড-১৯ ভাইরাস আটকে দেওয়া। এ জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। বাড়ির গৃহপরিচারিকাদের জন্যও নিয়ম জারি করা দরকার। পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার পাশাপাশি মুখে মাস্ক পরে কাজ-কর্ম করার উপর জোর দিতে হবে।
আরও পড়ুন:কোভিডের উপসর্গে জ্বরের দোসর হাত-পা ব্যথা? কী খেয়াল রাখতেই হবে?
এ ছাড়া কোনও ক্রনিক শারীরিক অসুস্থতার জন্য চেক-আপ দরকার।
যে কোনও কারণে সর্দি, জ্বর, কাশি বা বুকে চাপ ধরা ভাব লাগলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শে কোভিড টেস্ট করানো আবশ্যক, পরামর্শ কৌশিকবাবুর। একই সঙ্গে মন ভাল রাখার উপরে জোর দেওয়া দরকার। জীবন-সায়াহ্নে এসে দায়ভারহীন জীবনযাপন করতে গিয়ে অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা যদি ভেবে নেন তিনি বাতিলের দলে, মনের কষ্ট বাড়বে বই কমবে না। কিন্তু যদি মনে করেন, আজীবন কাজ করার পর অবসর সময়ে চুটিয়ে আনন্দ উপভোগ করবেন তাহলে খুশিতে জীবন কাটাতে পারবেন।
শারীরিক অসুখের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে মনের সমস্যার কাউন্সেলিং ও ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। ফাইল ছবি।
বিশ্বের জনগণনার উপর এক আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে পৌঁছবে। তখন এর অর্ধেক সংখ্যকই হবেন প্রবীণ নাগরিক।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্কদের রোগভোগের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। শারীরিক সমস্যায় জেরবার হয়ে তাঁরা মানসিকভাবেও দুর্বল আর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই কয়েকটি ক্ষেত্রে শারীরিক অসুখের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে মনের সমস্যার কাউন্সেলিং ও ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:নিউ নর্মালে সম্পর্ক ভাল রাখতে কী করবেন, কী করবেন না
বৃদ্ধ বয়সে ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বেশি। এর সঙ্গে থাকতে পারে হাইপারটেনশন, অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওআর্থারাইটিস, হাঁপানি কারও আবার সিওপিডি, ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স-সহ আরও কত কী!
এক জন প্রবীণ নাগরিক যখন অসুখ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান, তখন অন্য রোগগুলির কথাও মাথায় রাখতে হয়। বেশি বয়সে কয়েকটি রোগ উৎসর্গ ছাড়াও হতে পারে।
সাধারণ ভাবে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বুকে ব্যথা বা চাপ ধরা ভাব, নিঃশ্বাসের কষ্ট আর দরদরিয়ে ঘাম। এক জন বয়স্ক মানুষের এসব লক্ষণ ছাড়াও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যেমন হঠাৎ পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। হতে পারে এটা হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ, জানালেন ক্রিটিক্যাল কেয়ারের বিশেষজ্ঞ পুষ্পিতা মণ্ডল।
আরও পড়ুন:খুসকির সমস্যায় জেরবার, সমাধানে এই বিষয়গুলি মানছেন তো?
বেশি বয়সে হঠাৎ অসংলগ্ন কথাবার্তা বা অদ্ভুত আচরণ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, জানালেন পুষ্পিতা মণ্ডল। এ রকম হলে সোডিয়াম-পটাসিয়ামের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার কথা ভাবতে হয়। আবার প্রস্রাবের সংক্রমণ হলেও আচরণ বদলে যেতে পারে। ছোটখাট অসুখেও বয়স্কদের বেশি জটিলতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণ জ্বর হলে কম বয়সে তা নিয়ে বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
জ্বর বা মূত্রনালী সংক্রমণ থেকে একজন বয়স্ক মানুষের সেপ্টিসিমিয়া ও মাল্টি-অর্গ্যান ফেলিওরের সম্ভাবনা বাড়ে। বেশি বয়সে ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার মতো সমস্যার সঙ্গে অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ, পার্কিনসনস ডিজিজ, ক্যানসার, ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক-সহ সব ধরনের রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
বেশি বয়সে কোনও সমস্যাকে ফেলে রাখা ঠিক নয় বলে পরামর্শ পুষ্পিতা দেবীর। প্রবীণ নাগরিকদের আরও একটা বড় সমস্যা ইনকন্টিনেন্স অর্থাৎ অজান্তে মল-মূত্র ত্যাগ। এ ক্ষেত্রে বাড়ির অন্যদের মুখঝামটা ও বকাবকিতে বয়স্করা মুষড়ে পড়েন।
সঠিক চিকিৎসার সাহায্যে এই সমস্যা দূর করা যায়। একটা কথা ভুললে চলবে না, ভাল থাকার জন্যে নিয়ম করে শরীরচর্চা করা দরকার। কমজোরি পেশিকে স্বাভাবিক করার জন্যে নিয়ম করে আসন ও প্রাণায়াম-জাতীয় শ্বাসের ব্যায়াম করা দরকার। আন্তর্জাতিক বার্ধক্য দিবস শুভ হোক, পরের প্রজন্ম সঙ্গে থাকুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy