—প্রতীকী চিত্র।
মন ভাল নেই, ওজন বাড়ছে চড়চড় করে। এ দিকে, ব্যায়াম করার সময় নেই। স্বাস্থ্যকর খাবার দেখলেও মুখ বেজার... এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ভরসা রাখেন ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ বা ‘টাইম রেস্ট্রিকটিভ ইটিং’-এর উপর। এত দিন পর্যন্ত ধারণা করা হয়েছিল, এই ধরনের খাদ্যাভাসে শরীরের উপকার হয়। সম্প্রতি চিনের শাংহাই জিয়াও তোং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে পর্যবেক্ষণ, যাঁরা এই ধরনের খাদ্য সংযম অভ্যাস করেন তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদ্যন্ত্র ও শিরা-ধমনীর (কার্ডিওভাসকুলার) অসুখ ও তার থেকে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অন্তত ৯১ শতাংশ। আমেরিকার হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের বৈজ্ঞানিক সেশনে সম্প্রতি পেশ করা হয়েছে এই গবেষণাপত্রের অ্যাবস্ট্রাক্ট। গবেষকরা অবশ্য জানিয়েছেন, এটি স্রেফ প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, এখনও গবেষণার বহু ধাপ বাকি। এই ধরনের খাদ্যাভাসের সঙ্গে হৃদ্রোগে মৃত্যুর সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে সেটা সত্যি। তার মানে এই নয় যে এই ডায়েটে থাকা মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। তবে, অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে এই ডায়েট করা প্রয়োজন।
‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ জাতীয় খাদ্যাভাস তথা ডায়েটে খাদ্য সংক্রান্ত তেমন বিধি নিষেধ থাকে না, এ ক্ষেত্রে দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যেই প্রয়োজনীয় খাবার খেয়ে ফেলতে হয়। আর বাকি সময়টা, অর্থাৎ ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা উপোস করে কাটাতে হয়। মোটামুটি এর তিনটি ভাগ রয়েছে, অনেকে সকাল ন’টা থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে প্রয়োজনীয় খাবার খেয়ে নেন, তার পর টানা উপোস। অনেকের ক্ষেত্রে এই সময়টা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ছ’টা কিংবা দুপুর ১২টা থেকে রাত আটটাও হতে পারে। এই প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরি জানালেন, ‘এই ধরনের ডায়েটে দীর্ঘসময় শরীরে খাবার প্রবেশ করছে না। এর ফলে শরীরে জমে থাকা পুষ্টিদ্রব্য ব্যবহার করে শক্তি উৎপন্ন করছে শরীর । সাধারণ কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিন মেটাবলিজ়ম ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে, শরীর ক্যাটাবলিক পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে, পেশীক্ষয় শুরু হচ্ছে। এর পাশাপাশি, রক্তে যথাযথ ভাবে অক্সিজেন পৌঁছছে না, হৃদ্স্পন্দন এর ফলে অনিয়মিত হয়ে পড়ছে। শরীরের পক্ষে এটি বেশ ক্ষতিকারক।’
গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমেরিকার প্রায় ২০ হাজার পূর্ণবয়স্ক মানুষের উপর সমীক্ষাটি চালিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের খাদ্যাভাস, খাবার সময় প্রভৃতি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছিল। পাশাপাশি, ২০০৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আমেরিকায় কত জন মানুষ মারা গিয়েছেন তার তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। তার পরে গবেষণায় পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে, যাঁরা ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ তথা ‘টাইম রেস্ট্রিকটিভ ইটিং’ করেন, সেই সমস্ত মানুষের হৃদ্যন্ত্র ও শিরা-ধমনীর অসুখ থেকে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা (যাঁরা করেন না তাঁদের থেকে) অন্তত ৯১ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। হৃদ্রোগ বা ওই ধরনের অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন এমন মানুষও যদি আট থেকে দশ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় খাবার খেয়ে বাকি সময়টা উপোস করেন, তা হলে তাঁদেরও মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে অন্তত ৬৬ শতাংশ। তবে, এই গবেষণাপত্রটি এখনও কোনও পিয়ার রিভিউড অ্যাকাডেমিক জার্নালে প্রকাশিত হয়নি।
গবেষকদের এক জন ভিক্টর ওয়েনৎসে চোং জানিয়েছেন, সমীক্ষা ও গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেলেও এখনই আশঙ্কার কিছু নেই। গবেষণায় একটি মৃত্যু ও খাদ্যাভাসের সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে, এখনও বহু ধাপ বাকি। তবে, ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ অত্যন্ত সাবধানে করা উচিৎ। দীর্ঘসময় ধরে এই ধরনের খাদ্যাভাস বজায় রাখলে মানবদেহে ‘লিন মাসল মাস’ কমতে থাকে। তার ফলে সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy