Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Interior Design

শখ যখন যুদ্ধজয়ের অস্ত্র

সব বাড়িরই একটা গল্প থাকে। সেই গল্পই প্রাণ সঞ্চার করে চার দেওয়ালের কাঠামোয়। যেমন, কারও বাড়ি বলে তাঁর জীবনের চড়াই-উতরাইয়ের কাহিনি...সব বাড়িরই একটা গল্প থাকে। সেই গল্পই প্রাণ সঞ্চার করে চার দেওয়ালের কাঠামোয়। যেমন, কারও বাড়ি বলে তাঁর জীবনের চড়াই-উতরাইয়ের কাহিনি...

পারমিতা সাহা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০২:০৮
Share: Save:

প্রত্যেক অন্দরসজ্জার পিছনেই কোনও না কোনও ভাবনা, ভাল লাগা কাজ করে। সব কিছু একটু গুছিয়ে রাখা, সুন্দর দেখানো... অদিতি চক্রবর্তীর ক্ষেত্রে ভাল লাগা তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে জীবনের একটা যুদ্ধ জয়ের অস্ত্রও যেন হয়ে উঠেছিল এই ইন্টিরিয়র। তাঁর বিশ্বাস, ঘরের পরিবেশ যদি প্রাণবন্ত রাখা যায়, তা হলে মনে ইতিবাচক চিন্তা ভিড় করে বেশি। এখানে অদিতির যুদ্ধ জয়ের কথা কেন বললাম, তা বোঝা যাবে তাঁর অন্দরে পৌঁছলে...

বেহালার সখেরবাজারে সাড়ে সাতশো স্কোয়ারফুটের ফ্ল্যাট চক্রবর্তী দম্পত্তির। গিন্নি ফ্যাশন ডিজ়াইনার, কর্তা চাকরি করেন। কাঠের আসবাব, পিতলের সামগ্রী আর সবুজের প্রাণবন্ত ছোঁয়ায় সদা হাস্যময় তাঁদের ছোট ফ্ল্যাট। কাঠের আসবাবে কালো পালিশ অন্দরে এনেছে সাবেক স্পর্শ। অদিতির কাছে কাঠ হচ্ছে এমন একটা মাধ্যম, যেখানে স্বপ্নটাকে সফল করা যায়, যদি একজন ভাল কারিগর পাওয়া যায়। ‘‘পুরনো সব কিছুই আমার ভীষণ প্রিয়। রংচটা জিনিস, কাঠের আসবাব, কাঁসা-পিতলের পাত্র... এ সব দিয়েই সাজানো আমার ঘর। অধিকাংশ বাড়িতেই কাঁসা বা পিতলের জিনিস ও বাসন ব্যবহার করা হয় না। পড়েই থাকে। আমি সেগুলো দিয়েই ঘর সাজাই বহু বছর ধরে। পুরনো পানের ডাবর, ঘটি, হাঁড়ি, কলসি... যা বাড়িতে ছিল আর বিয়েতেও যা পেয়েছিলাম, সবের ভিতরেই গাছ রাখি। বটানির স্টুডেন্ট হওয়ায় গাছের প্রতি ভীষণ টান। তাই আমার বাড়ির সব জায়গায় অনেক গাছ। এ ছাড়া পাথরের জিনিসও খুব পছন্দের। কাস্ট আয়রনের কিছু জিনিস ব্যবহার করেছি, যা বহু বছর আগে কালেক্ট করেছিলাম। তা ছাড়া গত সাত বছর ধরে আমি দুর্গাপুজোয় থিমশিল্পী হিসেবে কাজ করছি। পুরস্কারও পেয়েছি। সব সময় চেষ্টা করি একটু অন্য রকম জিনিস কিনতে। হাতে তৈরি জিনিস, যার একটা এথনিক ভ্যালু রয়েছে,’’ বললেন অদিতি।

যখন এই ফ্ল্যাট কেনা হয়, তখন এখানে কোনও ব্যালকনি ছিল না। কিন্তু বারান্দা না থাকলে কি বাড়ির শোভা খোলে? সেই ভাবনা থেকেই ড্রয়িংরুমের জানালাটাকে ভেঙে একেবারে নীচ পর্যন্ত নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে বারান্দাকে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। এ বাড়ির প্রত্যেক জানালায় গাছ-বিলাস। অদিতির কথায়, ‘‘খুব দামি জিনিস দিয়ে ঘর সাজালেও, সেখানে যদি সবুজের স্পর্শ না থাকে, তা হলে সেটা খুব অসম্পূর্ণ মনে হয় আমার। সবুজের একটা ইতিবাচক সত্তা আছে। সেটা ভীষণ ভাবে অনুভব করতে পারি। জীবনে অনেক অন্ধকার দিক দেখেছি। তখন আমি কিছুই ছিলাম না। যা কিছু করতে পেরেছি সবই আমাদের ছেলে পাবলোর জন্মের পরে। যদিও ও স্পেশ্যাল চাইল্ড। ওর জন্যই এখানে ফ্ল্যাট কিনে আসা। আইআইসিপি (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সেরিব্রাল পলসি) আমার বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে নয়। এই ধরনের বাচ্চাদের আচরণ গত অনেক সমস্যা হয়। যদিও পাবলো নিজে কিছুই করতে পারে না, কিন্তু ও সব সময় খুব আনন্দে থাকে। তাই বিশ্বাস করি, ঘরের পরিবেশে প্রাণ থাকলে পজ়িটিভ এনার্জি কাজ করে।’’

অদিতির কাছে তাঁদের তেরো বছরের সন্তান পাবলো আশীর্বাদস্বরূপ। বিয়ের পর চুঁচুড়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকাকালীন নিজের জন্য এক সাধারণ গৃহবধূর জীবনই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সব বদলে যায় ছেলের জন্মের পর থেকে। শুরু হয় নিজেকে নতুন করে চেনার লড়াই। ‘‘ও হওয়ার পর দুঃসহ ডিপ্রেশন কুরে কুরে খেত আমাকে। সন্তানের জন্মের দিন থেকে যুদ্ধটা করেছি আমি, আমার স্বামী আর আমার মা-বাবা। আর কেউ আমাদের পাশে ছিল না। অবসাদ থেকে বেরোনোর জন্য শখগুলোকে নতুন ভাবে বাঁচিয়ে তুলেছিলাম। চেষ্টা করেছি একটা জায়গায় পৌঁছতে। তখন ভাবিনি, এ রকম একটা দিন আসতে পারে। এখন ডিজ়াইনার হিসেবে কাজ করছি। প্রচুর নতুন ডিজ়াইন করি। পুজোয় থিম শিল্পী হিসেবে কাজ করি। আমার ভাল লাগার জায়গা অনেক। ঘর সাজাতে ভীষণ ভালবাসি, গাছ লাগাতেও, ওড়িশি নাচ খুব প্রিয়... চেষ্টা করি এই ভাল লাগাগুলো নিয়ে থাকতে, যাতে ছেলেকে ভাল রাখতে পারি,’’ বললেন পাবলোর মা অদিতি।

তাই এ বাড়ির অন্দর শুধুই সাজসজ্জা নয়, ইন্টিরিয়রের মধ্য দিয়ে শখে ভর করে একটা মানুষের কঠিন সময় পেরোনোর কাহিনি। অদিতির আরও কিছু শখ রয়েছে। যেমন অকশন হাউস থেকে একটা পুরনো পালঙ্ক কেনার। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘তাতে ভূত থাকলেও ক্ষতি নেই, ইতিহাস তো থাকবে।’’ ফ্ল্যাটের দেওয়ালে এখনও রং করা হয়নি। সাদা রং তাঁর পছন্দ। ইচ্ছে, ছবি এঁকে দেওয়াল ভরিয়ে দেওয়ার... এই সব স্বপ্ন নিয়েই বাঁচেন অদিতি। আর তাঁর স্বপ্নের অদৃশ্য কারিগর না বলতে পারা কথার মধ্য দিয়েই মাকে অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকে...

অন্য বিষয়গুলি:

Interior Design Home Decor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy