তাতেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে জ্বর নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘শুধু জ্বর নয়। শিশুর খাবারের অনীহা, পেটের সমস্যা, শরীরে র্যাশ বেরোনোর মতো সমস্যাও কিন্তু গরমের জন্যই হচ্ছে।’’
আয়োজন: পথে বেরিয়ে একটু স্বস্তি পেতে জলপান এক শিশুর। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পছন্দের খাবারটাও মুখে তুলতে অনীহা বাড়ির খুদে সদস্যের। একটুতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে সে। সঙ্গে শুরু পেটের সমস্যা। কয়েক দিন ধরে এমন চলতে থাকায় শেষে চিকিৎসকের কাছে যেতেই জানা গেল, তাপপ্রবাহের শিকার ওই শিশু। শুধু বড়রাই নন, তীব্র গরম মানিয়ে নিতে পারছে না শিশু-শরীরও। তাই চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ভ্যাপসা গরমে সাবধানে রাখতে হবে খুদেদেরও। সামান্য সমস্যা দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি, বন্ধ রাখতে হবে তাদের স্কুলে যাওয়াও।
তীব্র দহনজ্বালা মেটাতে কবে আসবে কালবৈশাখী, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কিন্তু এই গরমে বড়দের মতো প্রাণ ওষ্ঠাগত শিশুদেরও। অতিমারির কারণে গত দু’বছরের গ্রীষ্মকাল বাড়িতেই কেটেছে তাদের। এ বছর থেকে ফের পুরোদমে চালু হয়েছে স্কুল, গৃহশিক্ষকদের কাছে পড়তে যাওয়া-সহ অন্যান্য কার্যক্রম। আর তার সঙ্গে তাপপ্রবাহ মিলে অধিকাংশ শিশুই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শেষ কয়েক দিনে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বেড়েছে। সঙ্গে থাকছে সর্দি-সহ পাতলা পায়খানা এবং অন্য সমস্যাও। সব থেকে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে ডিহাইড্রেশন (শরীরে জলের পরিমাণ কমে যাওয়া)।
শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিটি শিশুকে এখন প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়াতে হবে, তরল জাতীয় খাবারেও জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, উচ্চ মাত্রায় প্রোটিনযুক্ত খাবার যেন বেশি না দেওয়া হয়। কারণ ওই খাবারের কারণে কিডনির উপরে চাপ পড়বে, তাতে শরীরে বেশি জলের প্রয়োজন হবে।’’ যদিও অধিকাংশ শিশুই জল খেতে চায় না, তাই বাড়ির লোক গ্লুকোজ়, ফলের রস দিতে থাকেন তাকে। কিন্তু সেটা ঠিক পন্থা নয় বলেই জানাচ্ছেন শিশুরোগ চিকিৎসকেরা। ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’-এর জাতীয় স্তরের সহ-সভাপতি চিকিৎসক অতনু ভদ্রের কথায়, ‘‘গরমে ঘাম হয়ে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম বেরিয়ে যায়। সেই ঘাটতি পূরণ করতে হলে ওআরএস বা নুন-চিনির জল বেশি খেতে হবে। গ্লুকোজ়ে নুন থাকে না। ফলে সেটি শিশুর পছন্দের হলেও কার্যকরী নয়।’’
স্কুলে টিফিনের সময়ে রোদে খেলে, ঘেমেনেয়ে ক্লাসে ঢোকে বহু শিশুই। বর্তমান পরিস্থিতিতে টিফিনের সময়ে রোদে খেলাধুলো বন্ধ রাখা প্রয়োজন বলেই মত অপূর্ববাবুর। একই কথা বলছেন অতনুও— ‘‘বেলা ১২টা থেকে চড়া রোদ উঠছে। তার আগে সাড়ে ১০টার মধ্যে শিশুদের স্কুল শেষ হওয়া প্রয়োজন। আর শারীরশিক্ষার ক্লাস অনেক জায়গায় চালু হয়েছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।’’ তীব্র গরমে খেলাধুলো, স্কুলবাসে যাতায়াত বা তার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার কারণে শিশুদের সহজেই ডিহাইড্রেশন হচ্ছে বলে জানিয়ে শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, ‘‘তীব্র গরমে ঘাম হচ্ছে, আর তার পরেই এসি বা পাখার নীচে চলে যাওয়ায় তাপমাত্রার তারতম্য হচ্ছে। সেটা শরীর সহজে নিতে পারছে না। তাই সাধারণ তাপমাত্রায় কিছুক্ষণ জিরিয়ে তবেই ঠান্ডা ঘরে ঢোকা উচিত।’’ আর এসিতে ঘর মারাত্মক ঠান্ডা না করে শরীরের সঙ্গে মানানসই রাখা উচিত বলেও জানাচ্ছেন তিনি।
গত কয়েক দিনে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের প্রায় সকলেরই শরীরে তীব্র তাপমাত্রা থাকছে বলে জানাচ্ছেন শিশুরোগ চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী। জ্বর ১০২-১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। তা থাকছে টানা তিন-চার দিন। কোনও শিশুর আচমকা অজ্ঞান হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা যাচ্ছে। সদ্যোজাতদের মধ্যে জন্ডিসের প্রবণতাও বাড়ছে। তীব্র গরমে তাদের শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মস্তিষ্কে যে হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থি রয়েছে, তীব্র গরমে সেটি ঠিক মতো কাজ করে না। তাতেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে জ্বর নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘শুধু জ্বর নয়। শিশুর খাবারের অনীহা, পেটের সমস্যা, শরীরে র্যাশ বেরোনোর মতো সমস্যাও কিন্তু গরমের জন্যই হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy