Advertisement
E-Paper

সম্মোহনের গুজবে বিপন্ন জীবন, ভুয়ো খবর ছড়ানো থামবে কবে

ইন্টারনেটের বিপদ’ সংক্রান্ত মাইক্রোসফটের একটি রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, ভারতের ৫৪ শতাংশ মানুষই গুজবের শিকার। বিশ্বে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫৫
Share
Save

ঘটনা ১: শিশুদের মাঝেমধ্যেই বিস্কুট, লজেন্স কিনে দিতেন এক মহিলা। সেই থেকেই সন্দেহ। পর পর দু’টি শিশু নিখোঁজ হওয়ায় শিশু চোর সন্দেহে তাঁকেই মারধর করে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা। জ্বলন্ত শরীরে খালে ঝাঁপ দেন মহিলা। এক মাস পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, ওই মহিলা নন, শিশু চুরি করেছিল অন্য একটি দল।

ঘটনা ২: শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের এক আয়ার ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সমাজমাধ্যমে। প্রসূতি বিভাগে কাজ করার সুবাদে তিনি নাকি প্রায়ই বাচ্চা বদলে দেন। সদ্যোজাত সন্তানকে দেখে পছন্দ না হওয়ায়, শিশু বদলে দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে মারতে শুরু করেন এক ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার। শেষে পুলিশ ওই আয়াকে উদ্ধার করে। তাঁর বিরুদ্ধে শিশু বদলের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

গুজবের জেরে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ার এমন উদাহরণ রয়েছে প্রচুর। কখনও ছেলেধরা, কখনও কিডনি পাচারকারী, কখনও আবার নিছক সন্দেহের বশে গুজব ছড়ানোকে কেন্দ্র করে হিংসার ঘটনায় প্রাণহানিও হয়েছে। ‘ইন্টারনেটের বিপদ’ সংক্রান্ত মাইক্রোসফটের একটি রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, ভারতের ৫৪ শতাংশ মানুষই গুজবের শিকার। বিশ্বে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশ। সারা বিশ্বে যেখানে ৫৭ শতাংশ মানুষ ভুয়ো খবরের শিকার, সেখানে ভারতের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৬৪ শতাংশ। এই সুযোগেই বাংলাদেশে সিঁদুর পরা এক মহিলার রক্তাক্ত ছবি ধূলাগড় কিংবা বসিরহাটের বলে প্রচার করা হয়। ভোজপুরী ছবি ‘অওরত খিলোনা নেহি’-তে এক তরুণীর আঁচল ধরে টানাটানির দৃশ্যের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে বাংলার ‘মা-বোনেদের বস্ত্রহরণ-কাহিনি’ ফাঁদা হয়। তবে এই সব কিছুকেই যেন ছাপিয়ে গিয়েছে হাওড়ার বাসিন্দা এক ব্যক্তির পরিস্থিতি।

পুলিশি সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তির নাম সঞ্জয় আগরওয়াল। গত শনিবার ফুলবাগান এলাকায় তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর করা হয়। বছর চুয়ান্নর ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চোখ দিয়ে মহিলাদের সম্মোহন (হিপনোটাইজ়) করেন। তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ বুঝতে পারে, বিষয়টি আরও গভীর। মাসখানেক ধরে তাঁর ছবি ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, সঞ্জয় মূলত মহিলাদের কোনও ঠিকানা দেখিয়ে কী ভাবে সেখানে যাবেন, জিজ্ঞাসা করেন। তাঁর চোখের দিকে তাকালেই নাকি সম্মোহনের শিকার হন মহিলারা। পিছু পিছুহাঁটেন তাঁরা। এর পরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে সর্বস্ব লুট করেন সঞ্জয়। ধর্ষণও করেন।

তদন্তে নেমে পুলিশ সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে পুরনো কোনও অপরাধের রেকর্ড পায়নি। খোঁজ করে দেখা যায়, কলকাতায় তো বটেই, আশপাশের কোনও জেলাতেই কোনও থানায় জিনিসপত্র লুট হওয়ার বা এই ভাবে ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ জমা পড়েনি। জানা যায়, বছর পনেরো আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় সঞ্জয়ের। সঞ্জয় মায়ের সঙ্গে খিদিরপুর এলাকায় থাকতেন। লকডাউনে তাঁর মশলার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময়েই মায়ের মৃত্যুর পরে অবসাদে ভুগতে শুরু করেন তিনি। হাওড়ায় দাদার পরিবারে নিয়ে গিয়ে তাঁকে রাখা হলেও সঞ্জয় প্রায়ই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতেন। রাস্তায় ঠিকানা খুঁজতে দেখে বেশ কয়েক বার পুলিশও তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত করা কলকাতা পুলিশের ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশনের (ইএসডি) ডিসি প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘‘এটা গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। ২০২২ সালেও এমন সম্মোহনের তত্ত্ব লোকে বিশ্বাস করেন এবং সেই মতো কাজ করেন, ভাবতেও অবাক লাগে।"

মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বললেন, ‘‘ভুয়ো খবরের বিষয়ে সতর্ক করতে এত সচেতনতার প্রচার চলছে, কিন্তু কারও যে চেতনা হচ্ছে না, এই ঘটনা তার প্রমাণ। সমাজমাধ্যমের উপরে সেন্সরশিপ প্রয়োজন কি না, সেটা এই কারণেই ভাবা দরকার।’’ সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘এটা এক প্রকার র‌্যাগিং। আইনের পথে কড়া হাতে এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ করা প্রয়োজন।’’ কলকাতা পুলিশের কর্তারা বলছেন, ‘‘হিংসা ছড়ানোর মতলবে ভুয়ো খবর প্রচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নির্দিষ্ট ধারায় পাঁচ বছরের জেল হতে পারে। এই ঘটনায় এই দিকটি কড়া ভাবেদেখা হবে।’’

সঞ্জয় এখন দাদার বাড়িতে থাকতে পারছেন না। ভয়ে বেরোতে পারেন না বাড়ি থেকেও। উত্তর কলকাতার গোপন আস্তানা থেকে, কোথায় রয়েছেন তা প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘‘লোকে বলছে আমি নাকি চোখ দিয়ে কিছু করি। কী করি, তা জানি না। কারও কোনও রকম ক্ষতি করেছি বলে তো জানা নেই। তবু ক্ষমা চাইছি। দয়া করে আমাকে বাঁচতে দিন।’’

Rumours Fake News internet Lynching Mob Violence

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।