Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Vitamin D Deficiency

ভাল থাকতে ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি-র অভাবে কী কী উপসর্গ দেখা দেয়? কী ভাবেই বা পূরণ হবে এই ভিটামিনের চাহিদা? জেনে নিন।

An image of Vitamin Capsules

—প্রতীকী চিত্র।

ঊর্মি নাথ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪৯
Share: Save:

হঠাৎ গোটা শরীরে ব্যথা, প্রবল চুল পড়া, খিটখিটে মেজাজ, সারাক্ষণ বিষণ্ণতা— শারীরিক ও মানসিক এমন পরিবর্তনে আশঙ্কা হতে পারে, এগুলো হয়তো জটিল রোগের সঙ্কেত! ভিটামিন ডি-র অভাবেও কিন্তু এমনটা হতে পারে! চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিড পর্বের পরে বেড়েছে ভিটামিন ডি-র অভাবজনিত সমস্যা। হাড়, ত্বক, চুল, নখ, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদি শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য ভিটামিন ডি-র মাত্রা ঠিক থাকা জরুরি। সূর্যালোকের অভাব ভিটামিন ডি-র ঘাটতির অন্যতম কারণ। তবে এই অভাব পূরণে শুধু রোদ পোহালেই হবে না, খেতে হবে সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট, মেনে চলতে হবে ঠিক ডায়েট।

—প্রতীকী চিত্র।

ভিটামিন ডি-র ঘাটতির সঙ্কেত

শরীরে ভিটামিন ডি-র স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি মিলিলিটারে ২০ থেকে ২৫ ন্যানোগ্রাম। আবার ৫০ থেকে ৮০ ন্যানোগ্রাম বেশ বেশি। বোন পেন, স্কিন এগজ়িমা, অতিরিক্ত চুল পড়া, ক্লান্তি, অবসাদ ইত্যাদি ভিটামিন ডি-র অভাবের সঙ্কেত। তবে এগুলো প্রাণদায়ী নয়, কিন্তু রোজকার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিন ভিটামিন ডি-র অভাব নানা জটিল রোগের জন্ম দেয়। ‘‘হাড়ে, পিঠে, কোমরে, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হলে সচেতন হবেন। বিশেষত বয়স্করা। বাতের জন্য বা অন্য অসুখের জন্যও হাড়ে ব্যথা হতে পারে। কিন্তু ভিটামিন ডি-র অভাবেও বোন পেন হবে। হাড়ে ব্যথা হয় কারণ ক্যালশিয়াম ও ফসফরাসকে হাড়ের মধ্যে ঢুকতে ভিটামিন ডি সাহায্য করে। এই ভিটামিনের অভাবে ক্যালশিয়াম তৈরিতে বাধা পড়ে,’’ বললেন ডা. সুবীর মণ্ডল। ভিটামিন ডি সরাসরি ত্বকের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। তাই এই ভিটামিনের ঘাটতি হলে ত্বক জানান দেয়। এ ব্যাপারে ত্বকবিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপন ধর বললেন, ‘‘অ্যাটোপিক এগজ়িমার চিকিৎসায় ভিটামিন ডি প্রয়োগ করে বেশ সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। এমনকী আর্টিকেরিয়া বা আমবাতের চিকিৎসাতেও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ভাল কাজ করছে। হঠাৎ করে গোছা গোছা চুল পড়তে শুরু করলে সজাগ হবেন। অনেকেই এটাকে অ্যালোপেশিয়া ভাবেন। কিন্তু হঠাৎ করে অ্যালোপেশিয়া হতে পারে না। এটা ভিটামিন ডি-র অভাবে হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ভাল কাজ করে। ত্বকের সমস্যা নিয়ে এলে রক্ত পরীক্ষার মধ্যে অবশ্যই ভিটামিন ডি পরীক্ষা করতে দিই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকে এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট প্রয়োগে তা ঠিকও হয়েছে।’’

মহিলাদের গর্ভাবস্থায় সচেতন থাকতে হবে ভিটামিন ডি-র মাত্রা নিয়ে। ‘‘ডাক্তারি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ভিটামিন ডি-র অভাবে গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, প্রি-প্রেগন্যান্সি লেবার, অবসাদের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ভিটামিন ডি-র অভাবে মায়ের বোন হেলথের সমস্যা হলে তা সন্তানের মধ্যেও সঞ্চারিত হতে পারে। তাই গর্ভধারণের আগে মহিলারা ভিটামিন ডি-র মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন,’’ বললেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত।

এই ভিটামিনের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। ফলে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যাঁদের ঘনঘন সর্দি কাশি, অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাঁদের ভিটামিন ডি-র মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভাল। ‘‘অনেকের নখ ভঙ্গুর হয়। প্রাথমিক ভাবে মনে হতে পারে আয়রনের অভাব, কিন্তু এরও অন্যতম কারণ ভিটামিন ডি-র অভাব,’’ বললেন ডা. ধর। ভিটামিন ডি শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। তাই এর অভাবে অল্প কায়িক শ্রমেই হাঁপ ধরে যায়, ক্লান্ত লাগে। এ ছাড়া মনের উপরে প্রভাব ফেলে। অকারণে বিষন্নতা, খিটখিটে মেজাজ এবং অবসাদ দেখা দিতে পারে।

—প্রতীকী চিত্র।

ঘাটতি পূরণ

ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণের জন্য শুধু গায়ে রোদ লাগানোই যথেষ্ট নয়। নিয়মিত সাপ্লিমেন্ট ও ডায়েটে মাশরুম, দুগ্ধজাত খাবার, স্যামন, ওটস, সয়াবিন, কাঠবাদাম রাখলে ভাল। এ দেশে ভিটামিন ডি-র জন্য রক্তপরীক্ষা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। তাই ভিটামিন ডি ঘাটতির লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকেরা সপ্তাহে একটি করে সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট শুরু করে দিতে বলেন। সাধারণত ওষুধ চলে ছ’সপ্তাহ। তার পরে রক্তপরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। এতে জানা যাবে রক্তে ভিটামিন ডি-র মাত্রা। তা স্বাভাবিক না হলে আরও কতদিন ওষুধ খেতে হবে, সেটা চিকিৎসক জানিয়ে দেবেন। কিন্তু পরীক্ষা না করে দীর্ঘদিন ওষুধ খেয়ে গেলে শরীরে ভিটামিন ডি ক্রমশ বাড়বে।

জলে দ্রাব্য ও ফ্যাটে দ্রাব্য, দু’ধরনের ভিটামিন হয়। ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন শরীরে বেশি হলে প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। স্নেহে দ্রাব্য হলে শরীরে জমতে থাকে। ভিটামিন ডি স্নেহে দ্রাব্য। অতিরিক্ত ভিটামিন ডি-র জন্য প্রবল মাথার যন্ত্রণা, কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ডায়ালিসিস করে বার করার মতোও পরিস্থিতি হয়,’’ বললেন ডা. মণ্ডল। অনেকেই মনে করেন ওষুধ ও উপযুক্ত ডায়েটের পাশাপাশি রোজ কিছুটা সময় রোদ পোহালে ভাল। কিন্তু অনেকেরই রোজ রোদে দাঁড়ানো সম্ভব হয় না। ‘‘সকালে জানালা দিয়ে ঘরে যে রোদ আসে সে আলোও যথেষ্ট। তবে শুধু সূর্যালোকের উপরে ভরসা করা যাবে না। তা হলে তো যাঁরা দীর্ঘক্ষণ রোদের মধ্যে কাজ করেন, তাঁদের ভিটামিন ডি-র অভাব হত না! তাই ঘাটতি মেটাতে সাপ্লিমেন্ট খেতেই হবে,’’ বললেন ডা. মণ্ডল।

শিশু, কিশোর, যুবক, মধ্যবয়স্ক ও বয়স্কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ডি-র সমস্যায় ভোগেন ষাটোর্ধ্বরা। অধিকাংশ চিকিৎসকই ৭৫ থেকে ৮০ বছরের বয়স্কদের নিয়মিত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার পরামর্শ দেন। শিশুদের ভিটামিন ডি-র অভাব বেশ কম, কারণ তারা দুগ্ধজাত খাবার খায়, বিশেষত ফর্টিফায়েড মিল্ক। সার্বিক ভাবে সুস্থ থাকতে ভিটামিন ডি-র জুড়ি নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy