Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Brain Exercises

যত্নে থাকুক স্মৃতিরা

শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতোই খেয়াল রাখতে হয় মস্তিষ্কেরও। স্মৃতিকে সচল রাখতে মস্তিষ্কের ব্যায়াম অর্থাৎ ব্রেন জিম করা জরুরি। তা হলে স্মৃতিশক্তিও ভাল থাকবে।

An image of a woman

—প্রতীকী চিত্র।

কোয়েনা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩ ০৯:৪৬
Share: Save:

হঠাৎ কিছু কিছু কথা ভুলে যাচ্ছেন? ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভেবে পাচ্ছেন না কেন এসেছিলেন? আমাদের চারপাশে অনেকেরই মাঝেমধ্যে এমন হয়। নাম-ধাম-ঘটনা, সকালে কী খেয়েছিলেন, আদৌ খেয়েছিলেন কিনা সে সব কিছু মনে থাকছে না, অথচ পলাশির যুদ্ধের সাল, প্রথম প্রেম, শৈশবের রঙিন পুতুলটার কথা মনে আছে। আসলে মনে রাখা এবং ভুলে যাওয়া মানুষের জীবনের অতি সাধারণ ঘটনা। সীমাবদ্ধ মানসিক শক্তির কারণে সারাজীবন ধরে আমরা যে সব অভিজ্ঞতা অর্জন করি, তার সব মনে রাখতে পারি না। কাজেই স্মৃতির পাশাপাশি বিস্মৃতিরও প্রয়োজন আছে। কিন্তু স্মৃতির অসঙ্গতির কারণে পুরনো স্মৃতির পুনরুদ্রেকে সমস্যা হলে, তা চিন্তার বিষয়। আপনারও কি তেমনই হচ্ছে? দৈনন্দিন নানা ছোটখাটো বিষয় ভুলে গেলে ভাবছেন, এ নিশ্চয়ই ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত৷ এ বার অ্যালঝাইমার্স এল বলে! পরিবারে কারও ছিল কি না খুঁজে বেড়ান বা ব্যস্ত জীবন, মানসিক চাপ, ডায়াবিটিসের উপর দোষ চাপিয়ে নিজে ঝাড়া হাত-পা হয়ে যান৷ কিন্তু জানেন কি আপনার নিজের দোষেই এমনটি হল?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আবির মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতোই মস্তিষ্কেরও খেয়াল রাখা দরকার। আমরা ভাবি ব্রেন তো সারা দিনই কাজ করছে, তার আলাদা করে আর খেয়াল রাখার কী আছে! কিন্তু হাঁটা-চলা, শোয়া-বসার পাশাপাশি ব্যায়াম না করলে যেমন শরীর সুস্থ থাকে না, তেমনই মস্তিষ্ক না খাটালেও তা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই স্মৃতিকে সচল রাখতে মস্তিষ্কের ব্যায়াম অর্থাৎ ব্রেন জিম বা মেন্টাল অ্যারোবিকস করা জরুরি।”

কী করবেন? কী ভাবে করবেন?

  • নানা স্বাদের বই পড়ুন৷ কবিতা মুখস্থ করুন। নিয়মিত পড়ার অভ্যাসে ব্রেন উদ্দীপিত হয়। মস্তিষ্কের ওয়ার্কআউট হয়। পারলে মাঝেমাঝে জোরে পড়ুন বা পড়ার পর কারও সঙ্গে আলোচনা করুন৷ দেখুন কতটুকু মনে থাকছে।
  • পেনসিল-কাগজ, ক্যালকুলেটর ছাড়া অঙ্ক কষুন। বাজার দোকানের হিসেব মনেমনে সারুন। এতে কসরত হবে ঠিকই, কিন্তু মস্তিষ্কের ঝালাইয়ে দারুণ কাজে দেবে।
  • সৃষ্টিশীল কোনও কাজ করতে পারেন। নতুন ভাষা শিখতে পারেন৷ লেখালিখি করাও ভাল। তা সে কবিতা হোক বা গদ্য৷ বাচ্চাদের মন থেকে গল্পও বলতে পারেন৷ রোজকার নানা কথা ডায়েরিতে লিখে রাখুন। নতুন প্লট ও শব্দের খোঁজে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হবে৷
  • ছবি আঁকা, গান-নাচ-আবৃত্তি কোনও হবি থাকলে মন দিয়ে তার চর্চা করুন। কথা বা স্টেপ ভুলে গেলেও করে যান৷ দেখবেন আস্তে আস্তে ঠিক মনে পড়বে। সেলাই করা, রান্না করা, ঘর সাজানো, ছবি তোলার মতো ইত্যাদি যে কাজে আনন্দ পাবেন, তা-ই করুন। এতেও ব্রেন সক্রিয় থাকবে৷
  • নতুন করে গান, কবিতা ইত্যাদি শিখতে পারেন। এতে মন যেমন ভাল থাকবে, তেমনই নতুন কিছু শেখায় মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম হবে৷ বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতেই, কোনও বাদ্যযন্ত্র, যেমন- গিটার, ভায়োলিন, পিয়ানো ইত্যাদি শিখলে মস্তিষ্কের বয়স ধীরে বাড়ে। পাশাপাশি নিয়মিত পাঁচটা বাইরের লোকের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তাতে মন সতেজ থাকবে।

ব্রেন গেম

মস্তিষ্ককে সচল রাখতে কিছু খেলাও খেলতে পারেন। শব্দজব্দ সমাধান করুন৷ সুদোকু করতে পারেন। রুবিকস কিউব, পাজ়ল, দাবা, ক্যারম ইত্যাদি যে কোনও খেলায় রোজ কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। তিন-চার জন মিলে একসঙ্গে মেমোরি গেমও খেলতে পারেন৷ দৈনন্দিন কাজের মধ্য দিয়েও ব্রেন গেম খেলা যায়। যেমন, ধরুন – বাজারের ফর্দ লিখবেন না৷ মনে মনে আওড়াতে থাকুন৷ প্রথম দিকে হয়তো সব মনে রাখতে পারবেন না। কিন্তু নিয়মিত অনুশীলনে দেখবেন ভুলে যাওয়ার হার কমছে। অনলাইনেও অনেক ব্রেন ট্রেনিং অ্যাপ বা গেম আছে। সে সবও খেলতে পারেন৷ তবে সে খেলার নেশায় যেন বুঁদ হয়ে যাবেন না। মনোবিদ ডা. জয়রঞ্জন রামের কথায়, “ব্রেনকে কার্যক্ষম করে তুলতে ইন্ডোর গেমসের পাশাপাশি নানা আউটডোর গেমসও বেশ ভাল। ক্রিকেট, টেনিস, গলফ কিংবা ফুটবলের মতো নানা খেলাতেও মাথা খাটাতে হয়।”

কাদের প্রয়োজন?

স্মরণ প্রক্রিয়াকে অনুশীলনের সহায়তায় উন্নত করা যেতে পারে কিনা, তা নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ আছে। কিন্তু শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে স্মৃতির পুনরুদ্রেক করা সম্ভব, তা মেনে নেন প্রায় সকলেই। ডা. জয়রঞ্জন বলছেন, “অল্প বয়সে বাচ্চারা পড়াশোনার মধ্যে থাকে। তখন তাঁরা সাধারণ ভাবেই রোজ নতুন কিছু শেখে। নিয়মিত বহু জিনিস অভ্যাস করে। ফলে স্মৃতির সমস্যা কম হয়। তবে তাঁদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত ব্রেন জিম করার ফলে স্মৃতিশক্তি ভাল হয়, মনোযোগ বাড়ে। ফলে তার ছাপ স্বাভাবিক ভাবেই পড়ে বাচ্চার খেলাধুলো ও পড়াশোনায়।”

অন্য দিকে, বয়স বাড়ার সঙ্গে হাজার কাজের চাপে আর স্মৃতির যত্ন নেওয়া হয় না। সঙ্গে মানসিক চাপ বাড়ে, ঘুম কমে যায়, নানা অসুখবিসুখ এসে হাজির হয়, মস্তিষ্কে পড়ে বয়সের ছাপ৷ সব মিলে মস্তিষ্কে তখন মরচে ধরে। পাশাপাশি ডিমেনশিয়া কিংবা অ্যালঝাইমার্সের মতো সমস্যা থাকলে তো কথাই নেই। সঙ্গে ডায়াবিটিস থাকলেও অনেক সময়েই সেকেন্ডারি কমপ্লিকেশন হিসেবে ব্রেনের কার্যক্ষমতা কমে যায়। জিনগত কারণেও অনেকের স্মৃতির সমস্যা হয়। এ সব ক্ষেত্রে মরচে সাফ করার সহজ উপায় ব্রেন জিম। ডা. মুখোপাধ্যায় বলছেন, “ডিমেনশিয়ার ওষুধ ও চিকিৎসা কার্যকর হলেও, তা রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময় করতে পারে না। তাই এই ধরনের রোগে প্রাথমিক স্তরে ব্রেন জিম বেশ সাহায্য করে। ডিমেনশিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায়ই লুসিড ইন্টারভ্যাল সিমটম দেখা যায়। এক-এক সময়ে তাঁরা পরিবার, কাছের মানুষ, বাড়িঘর কিছুই একেবারে মনে করতে পারেন না। অথচ আবার অনেক সময়ে পরিষ্কার সব মনে করতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে ব্রেনের যে অংশগুলি সুস্থ থাকায় তাঁরা সাময়িক ভাবে সব মনে করতে পারছেন, সেই কোষগুলিকে সুস্থ এবং উদ্দীপিত রাখতে সাহায্য করে ব্রেন জিম।

খেয়াল রাখবেন

ব্রেন অ্যারোবিকস কিন্তু ঠিক শরীরের ব্যায়ামের মতো নয়৷ বছরের পর বছর এক ব্যায়াম করলে হয় না৷ ব্রেনকে খাটাতে হয় নতুন নতুন পথে৷ নতুন কৌশল যেমন শিখতে হয়, তেমনই শেখা জিনিস মনে রয়েছে কিনা তা বারেবারে পরীক্ষা করে দেখতে হয়। তবেই স্মৃতিশক্তি বাড়ে৷

জয়রঞ্জন রামের মতে, ব্রেন অ্যারোবিকসের পাশাপাশি কিন্তু দৈনন্দিন রুটিনেও নজর দিতে হবে। দিনে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ভাল ঘুম, মস্তিষ্কের ব্যায়ামের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরচর্চা, নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া করা জরুরি। দীর্ঘ সময়ে ডায়বিটিস ও অন্যান্য নানা কারণেও স্মৃতিশক্তির সমস্যা হয়। তাই একই সঙ্গে হার্টের সমস্যা, ডায়াবিটিস, ডিমেনশিয়া, অ্যালঝাইমার্স, পার্কিনসন ইত্যাদি কোনও অসুখবিসুখ থাকলে চিকিৎসা করে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Mental Health Exercises
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy