যে কোনও ধরনের সংক্রমণই চট করে ঢুকে পড়ে ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে। ফাইল ছবি।
করোনা সংক্রমণ হলে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের অবস্থা প্রায় ১৪ গুণ বেশি জটিল হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ারে তাঁরাই বেশি ভর্তি হন। ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন তাঁদের বেশি হয়, এমনকি তাঁরা মারাও যান বেশি। ইতালির গবেষকরা জানিয়েছেন, কোভিডে মৃতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ পুরুষ। তাঁদের অধিকাংশই ধূমপায়ী।
কেন এমন
• নিয়মিত ধূমপান করলে ফুসফুসের মধ্যে যে ছোট ছোট চুলের মতো সিলিয়া থাকে, যাদের কাজ ধুলোবালি, জীবাণুকে বার করে ফুসফুসকে সুস্থ রাখা, তারা কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে বলে যে কোনও ধরনের সংক্রমণই চট করে ঢুকে পড়ে। ফলে নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টিবি-র পাশাপাশি বাড়ে কোভিডেরও আশঙ্কা।
• যে সমস্ত রিসেপটরের মাধ্যমে করোনাভাইরাস কোষে ঢোকে, ধূমপান করলে তারা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে ভাইরাস সহজে বংশবিস্তার করতে পারে।
• ধূমপানের কারণে যাঁদের ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি আছে, কোভিড হলে যেমন তাঁরা বেশি অসুস্থ হন, সেরে যাওয়ার পরও তার রেশ চলে। সিওপিডি-র প্রকোপ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে মন ভাল রাখতে মানতেই হবে চিকিৎসকদের এই সব পরামর্শ
• ‘'কোভিডের আশঙ্কা বাড়ার আরেক বড় কারণ হল, হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা।'’ জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌতিক পান্ডা। তাঁর কথায়, ‘’সমীক্ষায় জানা গেছ্ সাধারণ মানুষের তুলনায় ধূমপায়ীরা বেশি বার নাকে-মুখে হাত দেন। যে হাতে সিগারেটের প্যাকেট খুলেছেন, দেশলাই জ্বালিয়েছেন, মাস্ক খুলেছেন সেই হাতই নাকে-মুখে লাগালে কী হতে পারে বুঝতেই পারছেন। বিশেষ করে প্যাকেট ও দেশলাই যদি বিভিন্ন হাত ঘুরে আসে।’’
পরোক্ষ ধূমপানেও বিপদ
ধূমপায়ী যদি সংক্রমিত হন, তিনি যখন ধোঁয়া ছাড়েন, সেই ধোঁয়ায় ভর করে ভাইরাসও ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। ওই অ্যারোসল বা বাতাসবাহিত লালার কণায় ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে প্রায় ঘণ্টা তিনেক। কাজেই বদ্ধ ঘরে কাছাকাছি বসে বা দাঁড়িয়ে ধূমপান করলে খুব দ্রুত অন্যের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে, যাকে বলে ক্লাস্টার ইনফেকশন। এই বিপদ ঠেকাতে জাপান বেশ কিছু অভিনব ব্যবস্থা নিয়েছে।
বদ্ধ ঘরে কাছাকাছি বসে বা দাঁড়িয়ে ধূমপান করলে খুব দ্রুত অন্যের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফাইল ছবি।
বিপদ ঠেকাতে
ক্লাস্টার সংক্রমণ ঠেকাতে টোকিও মেডিক্যাল অ্যাসোশিয়েশন ও জাপান সোসাইটি ফর টোব্যাকো কন্ট্রোল শহর ও শহরতলির বিভিন্ন অফিস ও বহুতল আবাসনে ধূমপান কক্ষ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কোনওভাবে তা না করা গেলে কীভাবে ধূমপান কক্ষ বানাতে হবে তার গাইডলাইনও দিয়েছেন তাঁরা। যেমন—
• জানালাহীন ছোট ঘর বা বাতানুকূল ঘরকে ধূমপান কক্ষ বানানো যাবে না।
• ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে
• প্রচুর মানুষ কাছাকাছি বসে বা দাঁড়িয়ে ধূমপান করতে পারবেন না। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
• অধূমপায়ীরা ওই ঘরে ঢুকতে পারবেন না। ধূমপানের সময় তো নয়ই। পরেও তিন ঘণ্টার মধ্যে নয়।
আমাদের দেশে এ সব নিয়ম-কানুনের বালাই নেই। তবে, ধূমপায়ীরা বিপদ কমাতে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলুন।
আরও পড়ুন:কোন মাস্ক পরবেন? ক’দিন পরবেন? কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
ধূমপানের নিয়ম
• ধূমপান কমান। যত কমাবেন, তত বিপদ কমবে।
• সিগারেট ধরানোর আগে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন বা স্যানিটাইজ করুন।
• সিগারেট, সিগারেটের প্যাকেট, দেশলাই বা লাইটার আদান-প্রদান করবেন না।
• ভাগাভাগি করে সিগারেট বা হুঁকো টানবেন না।
• বদ্ধ জায়গায় ধূমপান করবেন না।
• খৈনি, গুটখা, পানমশলা খাওয়ার আগেও হাত ভাল করে ধুয়ে নিন।
• খোলা হাওয়ায় ব্যায়াম ও ডিপ ব্রিদিং করুন।
• স্বাস্থ্যকর খাবার খান। জল খান পর্যাপ্ত। মাস্ক পরুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy