ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে সন্তানের প্রথম হামাগুড়ি দেওয়া, হাঁটতে শেখা, নিজের হাতে খাওয়া, কথা বলা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি মুহূর্তগুলো সব বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের কাছেই সুখের। কিন্তু এই সুখ মাঝেমাঝেই বিঘ্নিত হয় অজান্তে ঘটে যাওয়া বিপদে। তবে বিপদে আতঙ্কিত না হয়ে ধীরস্থির থেকে সামাল দিতে হবে পরিস্থিতি।
হঠাৎ করে কিছু গিলে ফেললে
সদ্য হামা দিতে শেখা বাচ্চারা কয়েন, পেনের ঢাকনা, খেলনার ব্যাটারি, কাচের গুলি, পুঁতির মালা ইত্যাদি হাতের নাগালে যা পায়, সটান মুখে চালান করে দেয়। অনেক সময়ে তা গলায় আটকে শ্বাসরোধ হওয়ার জোগাড় হয়। মুড়ি, কড়াইশুঁটি, বাদাম খেতে গিয়ে নাকে ঢুকিয়ে ফেলার প্রবণতাও থাকে শিশুদের। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ বললেন, ‘‘এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাবা-মাকে শান্ত থাকতে হবে। চেঁচামেচি করে প্যানিক করবেন না। তাতে বাচ্চা আরও ভয় পেয়ে যাবে। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে, ‘স্টে কাম, শাউট ফর হেল্প’। বাচ্চা যেটা গিলে ফেলেছে সেটা যদি মুখ হাঁ করলে দেখা যায়, তা হলে বার করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু দেখা না গেলে আঙুল ঢুকিয়ে বার করতে গেলে সেটা আরও ভিতরে চলে যেতে পারে। মুড়ি, মটরশুঁটি, বাদাম ইত্যাদি নাকে ঢুকিয়ে দিলে খোঁচাবেন না। কারণ তখন সে অপর নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, এতে শ্বাসরোধ হবে না। বরং দ্রুত ইএনটি সেকশনে নিয়ে যেতে হবে।’’ বাড়িতে খুব ছোট বাচ্চা থাকলে তাদের হাতের নাগালের বাইরে রাখুন ইন্ডোর প্লান্টের টবগুলি, আচমকা পাতা ছিঁড়ে ওরা মুখে দিতে পারে।
দুধ খাওয়ানোর সময়ে
অনেক সময়েই সদ্যোজাত বাচ্চাদের ঝিনুক বা চামচ দিয়ে দুধ খাওয়াতে গিয়ে বেকায়দায় তাদের নাকে দুধ ঢুকে যায় বা গলায় আটকে যায়। তা থেকে হয় চরম বিপদ। এমনকি মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটে যায়। ‘‘গলায় দুধ আটকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকে উপুড় করে দিয়ে হেড ডাউন করে পিঠে থাবড়াতে থাকবেন। যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব কাছাকাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। বাচ্চা অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে রিকভারি পজিশনে রাখবেন। ঘরে বাচ্চা থাকলে আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রত্যেক বাবা-মায়ের থাকা উচিত। এর জন্য ডাক্তারের কাছ থেকে হেমলিচ ম্যানুভার সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন,’’ বললেন ডা. ঘোষ। খেতে গিয়ে বাচ্চাদের গলায় মাছের কাঁটাও বিঁধে যেতে পারে। ‘‘কাঁটা বেছে খাওয়ানোয় সমস্যা থাকলে কাঁটাহীন মাছ খাওয়ান। অনেক সময়ে বাড়ির বয়স্ক ঠাকুমা-দিদিমা বাচ্চাদের খাওয়ান। তাঁরা অনেকে চোখে ভাল দেখেন না। ফলে মাছের কাঁটা খাবারে থেকে যেতে পারে। আমাদের রাজ্যে এখনও রাতে ইএনটি সার্ভিস দুর্বল। তাই সতর্ক থাকতে হবে,’’ বললেন ডা. ঘোষ। বাড়ির বয়স্করা পুজোর ঘরেও সঙ্গী করেন ছোটদের। তারা সঙ্গে থাকলে জ্বলন্ত প্রদীপ, মোমবাতি বা ধূপকাঠির ব্যবহার না করাই ভাল।
পড়ে গিয়ে রক্তপাত হলে
বাচ্চারা সাইকেল চালাতে গিয়ে বা খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়ে হাত পা কেটে ফেলে। অনেক সময়ে রক্তপাত বন্ধ হতে চায় না। ‘‘এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া পর্যন্ত অনেকটা তুলো দিয়ে কাটা জায়গাটা চেপে প্রেশার দিয়ে রাখতে হবে। এর বাইরে কিছু করবেন না। জল দেবেন না, ঘরোয়া টোটকায় যাবেন না। চাপেই কাজ হবে,’’ বললেন ডা. ঘোষ।
সাধারণ জ্ঞানের অভাব
দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে অভিভাবকের সাধারণ জ্ঞানের অভাবে। যেমন মা বাচ্চাকে স্নান করানোর জন্য গরম জল বাথরুমে নিয়ে গিয়ে দেখলেন তোয়ালে আনতে ভুলে গিয়েছেন। তখন বাচ্চাকে বাথরুমে রেখেই তোয়ালে আনতে ছোটেন।। ততক্ষণে বাচ্চাটি গরম জলে হাত দিয়ে ফেলেছে। বাথরুমে বাচ্চাকে স্নান করাতে নিয়ে যাওয়ার আগে স্নানের সব জিনিস সাজিয়ে নিন, তার পরে বাচ্চাকে নিয়ে যান। প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে গরম চা খেতে গিয়ে। বাচ্চা আচমকা ঝাঁকুনি দিতেই হাত থেকে চলকে পড়ে গরম চা! অনেকেই পাখার হাওয়ায় গরম দুধ, তরকারি, ডাল ঠান্ডা করতে দেন, খেয়াল থাকে না কখন বাচ্চা হামা দিয়ে এসে তাতে হাত দিয়ে ফেলে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে যে কোনও গরম জিনিস তাদের হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। গরম চা বা সিগারেট খেতে খেতে বা রান্না করতে করতে কখনওই বাচ্চাকে কোলে নেবেন না। বঁটি বা ধারালো ছুরি নিয়ে কাটাকাটি করার সময়ে বাচ্চা আপনার চারপাশে না থাকলেই ভাল।
বাচ্চাকে ছোট বয়স থেকেই নিজে হাতে খেতে শেখানো ভাল। তা শেখানোর সময়ে কয়েকটা নিয়ম মাথায় রাখবেন। প্রথম প্রথম নিজে হাতে খাওয়ার সময়ে গলায় খাবার আটকে যেতে পারে বা থালা উল্টে নিজের কোলে ফেলে দিতে পারে। তাই প্রথমে স্বাভাবিক তাপমাত্রার খাবার ছোট প্লেটে অল্প পরিমাণে দেবেন। ছোট চামচ দিন, যাতে অল্প খাবার মুখে তুলতে পারে। ছোটরা নিজে হাতে খেতে শিখলেও একজন অভিভাবকের পাশে বসে নজর রাখা জরুরি।
নিজেরা সচেতন থাকলে সন্তানকেও এ ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy