Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Reclaim The Night Movement

রাতের চেহারা কি বদলাবে দখলের পরে? আনন্দবাজার অনলাইন শুনল ১৩ জন ‘দখলদারি’ নারীর উত্তর

খাস কলকাতা থেকে মফস্‌সল, ১৪ অগস্টের রাত ছিল মেয়েদের দখলে। আগামী প্রতিটি রাতের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারল কি এই কর্মসূচি? বুধবারের পর থেকে রাতবিরেতে নির্ভয়ে পথ হাঁটার সাহস পেলেন কি মহিলারা?

How will life change after Reclaim the night movement, will it ensure security of women

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রিচা রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ১১:৫৯
Share: Save:

মেয়েদের রাজপথ দখলের রাত। ঘড়ির কাঁটায় তখন ২.৩০। ১৫ অগস্ট, ২০২৪।

শ‍্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের জমায়েত থেকে ক্যাবে চেপে টালা ব্রিজে উঠতেই, জ্যামে ফেঁসে যায় গাড়ি। এক পা এগোনোর জায়গা ছিল না, পিছোনোরও। যত দূর চোখ যায়, তখন মালবাহী ট্রাকেদের সারি। বেশ অনেক ক্ষণ পর বোঝা গেল এ অপেক্ষা অন্তহীন। সহজে এই জ্যাম কেটে বেরোনো যাবে না। অগত্যা তাই বাকি পথটুকু হেঁটে যাওয়া শ্রেয় বলে মনে হয়েছিল। অন‍্য সময় হলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়তো সহজ ছিল না, কিন্তু সে দিন তখনও কানে লেগে ছিল ‘মধ‍্যরাতের রাস্তা মেয়েদেরও হোক’ স্লোগান। শহরে একা হাঁটার সাহস পাওয়া সেখান থেকেই। কিন্তু আলো-আঁধারি ফাঁকা রাস্তায় কিছু দূর এগোনোর পর প্রচণ্ড নিরাপত্তার অভাব বোধ হচ্ছিল। অক্ষত অবস্থায় বাড়ির চৌকাঠে পা রাখার আগে পর্যন্ত আতঙ্ক আর ভয় তাড়া করেছে। প্রশ্ন জাগে, আগামী প্রতিটি রাত কি সত্যিই মেয়েদের জন্য সুরক্ষিত? ১৪ অগস্ট রাত দখলের ডাক দিয়েছিলেন রিমঝিম সিংহ। তাঁর এক ডাকেই সেই রাতে বনগাঁ থেকে বেহালা, কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার— পথে নেমেছিলেন মহিলারা। এই জোটবদ্ধ প্রতিরোধ কি রাতে একা বেরোনোর ছাড়পত্র দিল মহিলাদের? রাতে কখনও একা ফিরতে হলে আর কি ভয় করবে না রিমঝিমের? উত্তরে বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই করবে। আমারও মাঝেমাঝে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। তাই বলে তো ভয়ে বাড়ি বসে থাকা যায় না। যে রাগ, ক্ষোভ জমা ছিল সকলের মনে, সেটারই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে ১৪ তারিখ রাতে। কিছু দাবি নিয়ে পথে নেমেছিলাম। সেই দাবি এক দিনে পূরণ হওয়ার নয়। তার জন্য সামাজিক পরিকাঠামোগত পরিবর্তন চাই। এটা প্রথম ধাপ। মানসিকতার বদল যত দিন না হচ্ছে, তত দিন মহিলাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব। তবে আমার মনে হয় বাড়িতে চুপ করে বসে থাকা কিংবা প্রতি বার ঘটনা ঘটার পর বিচার চাওয়ার থেকে নিজেদের সুরক্ষার দাবিতে নিজেদেরই পথে নামা উচিত।’’

‘পথে এ বার নামো সাথী’

‘পথে এ বার নামো সাথী’

সুরক্ষার দাবিতেই সে রাতে পথে নেমেছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী সুতপা দত্ত। অ্যাকাডেমি হয়ে গিয়েছিলেন যাদবপুরের জমায়েতে। ছিলেন বহু রাত পর্যন্ত। এই কর্মসূচি থেকে ভবিষ্যতে কোনও এক রাতে কি নির্ভয়ে বাইরে থাকার সাহস পেলেন তিনি? সুতপার কথায়, ‘‘আমার অফিস থেকে ফিরতে এমনিও অনেক রাত হয়। সেই আন্দোলনের এক দিন পার হতে না হতেই রাতে ফেরার সময়ে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েছে। তাই আমার মনে হয় না এক দিনে সব চোখের নিমেষে বদলে যাবে। এই প্রতিবাদের যদি ধারাবাহিকতা না থাকে, তা হলে সব কিছু বদলে ফেলা সম্ভব নয়।’’

আরজি কর হাসপাতালে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকেই প্রতিবাদে, প্রতিরোধে উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও সিংহভাগ ক্ষেত্রেই নৃশংসতার শিকার হতে হয় মেয়েদেরই। নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা যেখানে অধিকারের মধ্যে পড়ে, সেই নিরাপত্তা ছিনিয়ে নিতেই নামতে হয় রাস্তায়। সুরক্ষার দাবিতে হতে হয় সোচ্চার। ১৪ অগস্ট রাতে শহর এবং শহরতলির কোণে কোণে হাজার হাজার মহিলা রাস্তায় নেমেছিলেন একটাই দাবি নিয়ে, আগামী প্রতিটি রাত-সকাল-বিকেল-দুপুর, কর্মক্ষেত্রে-রাস্তাঘাটে এমনকি বাড়িতেও যেন অন্তত নিরাপত্তাটুকু থাকে। এই আন্দোলন কি বদল আনতে পারল? অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেনের কথায়, ‘‘কোনও কিছুই আসলে এক দিনে বদলে যায় না। যাঁরা এই জঘন্য মানসিকতা পোষণ করেন, একটা রাত পথে হেঁটে সেটা বদলে ফেলা যাবে না। সে রাতের কর্মসূচি একটা পদক্ষেপ ছিল। বিভিন্ন ভাবে ধারাবাহিক প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে। এমন নৃশংস মানসিকতার লোকগুলিকে তবে যদি ভয় পাওয়ানো যায়।’’

নারী সুরক্ষার দাবিকে সামনে রেখেই এই কর্মসূচির জন্ম হলেও এই আন্দোলনকে লিঙ্গবৈষ্যম্যের ঊর্ধ্বে রাখতে চান অভিনেত্রী উষসী রায়। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ে বলে আলাদা কোনও পরিচয় প্রাধান্য পাক, সেটা আমরা চাই না। লিঙ্গবৈষম্য থেকে বেরিয়ে এসে মেয়েদের মানুষ হিসাবে দেখা হোক, সেটাই কাম্য। কিন্তু সেটা হয় না। শুটিং থেকে ফিরতে রাত হয়। বাড়িতে মা-বাবা চিন্তা করেন। এখনও আমার সঙ্গে কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে যে, আগামী দিনেও আমি সুরক্ষিত থাকব, এটা বুকে হাত দিয়ে বলা যায় না। আমার মনে হয় এই আন্দোলন সকলকেই একটা সাহস জুগিয়েছে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে যে সাহস থাকা অত্যন্ত দরকার।’’

‘বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে’

‘বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে’

রাতের রাস্তায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন মেয়েরা। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা বলছে, শুধু ফাঁকা রাস্তা, ভিড় বাস, মেট্রো কিংবা ক্যাব নয়, মহিলারা কর্মক্ষেত্রেও অসুরক্ষিত। ৯ অগস্ট রাতে নাইট ডিউটিতে ছিলেন আরজি করের সেই চিকিৎসক। হয়তো ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি, এমন নৃশংসতার শিকার হতে চলেছেন তিনি। তাই শুধু রাস্তাঘাটে নয়, কর্মক্ষেত্রেও নিরাপত্তার দাবিতে সে রাতে মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অঙ্কনা মজুমদার। ডাক্তারি পড়ুয়ার কথায়, ‘‘দু’বছর পরে আমাকেও নাইট ডিউটি করতে হবে। আমিও যথেষ্ট আতঙ্কে আছি। আমার সঙ্গেও যাতে এমন কিছু না হয়, সেই দাবিতেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। আমারই এক জন সিনিয়রের উপর এমন নারকীয় অত্যাচারের প্রতিবাদ এবং আগামী দিনে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পথে নেমেছি।’’

অঙ্কনার মতো একই দাবিতেই সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বুধ-রাতে বাঙুর থেকে যাদবপুর হেঁটে গিয়েছিলেন এম আর বাঙুর হাসপাতালের নার্স পিউ মান্না। পড়াশোনা চলাকালীন এক পুরুষ রোগীর দ্বারা মৌখিক হেনস্থার শিকার হন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে পিউ বলেন, ‘‘আমি তখন নার্সিং পড়ছি। সঙ্গে ডিউটিও করতে হত। এক দিন মেল ওয়ার্ডে ডিউটি পড়েছিল। আমাকে দেখে এক জন পুরুষ রোগী মন্তব্য করে, এমন সুন্দরী নার্স সেবা করলে রাতটা বেশ ভাল কাটবে! কাজের জায়গায় যেখানে আমরা সুরক্ষিত নই, সেখানে রাতের রাস্তা আমাদের জন্য কতটা বিপদের হতে পারে, সেটা ভাবলে আতঙ্কে কাঁটা হয়ে যাই। আমি মনে করি এই আন্দোলন কিছুটা হলে প্রভাব ফেলতে পেরেছে। তবে সেটা কতটা, তা বোঝার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’’

নিরাপত্তা অধিকার, তবু ছিনিয়ে নিতে হয়।

নিরাপত্তা অধিকার, তবু ছিনিয়ে নিতে হয়।

কিন্তু নিরাপত্তা কি চেয়ে নেওয়ার বিষয়? কেন বার বার সুরক্ষার দাবিতে পথে নামতে হবে? এক জন পুরুষ যদি রাতের অন্ধকারে নির্ভয়ে রাস্তায় পা ফেলতে পারেন, মেয়েরা কেন পারবেন না? রাতে মেয়ের ফিরতে দেরি হলে কেন বাবা-মায়েদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়বে? এমন বহু প্রশ্নের উত্তর চাইতেই সে দিন পথ হেঁটেছেন মহিলারা। উত্তর কি পাওয়া গেল? নাট্যকর্মী সঞ্জিতা (পদবি প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘‘নিশ্চিত উত্তর হয়তো পাওয়া গেল না, কিন্তু অনেকেই বুঝলেন যে শুধু দিন নয়, রাতের নিরাপত্তাও অধিকারের মধ্যে পড়ে। দিনের মতো রাতেও নির্ভয়ে হাঁটাচলা করার জন্য আতঙ্কে কুঁকড়ে থাকতে হবে না। তার মানে এটা কখনও নিশ্চিত করা বলা যাবে না যে, রাত ৩টের সময়ে একটা মেয়ে বাইরে দারুণ সুরক্ষিত। কিন্তু সেই দিনটা যাতে আসে, তার জন্যই এই পদক্ষেপ।’’ একই কারণে সে রাতে খোলা আকাশের নীচে সকলের সঙ্গে পথ হেঁটেছেন বরাহনগর মোহন গার্লস হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা গোধূলি মুখোপাধ্যায়। কয়েক মাস পরেই কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেবেন। আগামী দিন যাতে তাঁর ছাত্রীরা নিরাপদে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারে, সেই দাবি নিয়েই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁর মনে হয় না সহজেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আশাবাদী। শিক্ষিকার কথায়, ‘‘আসলে এই কর্মসূচিকে আমি ধীরে ধীরে এগোনোর মাধ্যম হিসাবে দেখছি। প্রয়োজনে মহিলারাও যে জোট বেঁধে পথে নামতে পারেন, সেটারই ইঙ্গিত এই আন্দোলন। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনেপ্রাণে চেয়েছি যাতে এর সঙ্গে কোনও রাজনীতির রং না লাগে। এ প্রতিবাদ সব কিছুর ঊর্ধ্বে থাকুক।’’

এই দাবিতেই কোথাও গিয়ে ষাট ছুঁইছুঁই শিক্ষিকার সঙ্গে একই সুতোয় বাঁধা পড়েন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং এসএফআই কর্মী আনন্দরূপা পালিত। এই আন্দোলনে মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আপ্লুত। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পর্দা সরিয়ে ফেলা যে এতটাও সহজ নয়, সেটাই মনে হয় তাঁর। আনন্দরূপা বলেন, ‘‘সে রাতের জমায়েতেও অনেক পুরুষ এমন কিছু আচরণ করেছেন, যা সত্যিই নিন্দনীয়। অনেককেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। কিন্তু তবু আমি বলব যে আশা ছাড়লে চলবে না। লড়ে যেতে হবে।’’

প্রতিবাদের স্বর, প্রতিরোধের ধ্বনি।

প্রতিবাদের স্বর, প্রতিরোধের ধ্বনি।

রাত দখল করার জন্য মহিলাদের আহ্বান জানানো হলেও, সে রাতে পথ হেঁটেছিলেন বহু পুরুষও। কন্যা, স্ত্রী, বান্ধবী, মায়ের নিরাপত্তার দাবিতেই সোচ্চার হয়েছিলেন তাঁরাও। শিশুকন্যাকে কাঁধে চাপিয়ে মিছিলে হাঁটছেন, এমন ছবিও তৈরি হয়েছে সে রাতে। বান্ধবীকে পাশে নিয়ে মোমবাতি হাতে রাতের শহরে আলো খুঁজতে বেরিয়েছেন, সেই মুহূর্তও তৈরি হয়েছে। এই কর্মসূচিতে ‘বিনা আমন্ত্রণে’ পুরুষদেরও জুড়ে যাওয়াকে অত্যন্ত ইতিবাচক ভাবে দেখছেন আইনজীবী মেঘনা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেঘনা বলেন, ‘‘মেয়েরা নিজেদের নিরাপত্তা ছিনিয়ে নিতে পথে নেমেছেন। আর সেই লড়াইয়ে পুরুষ পাশে রয়েছেন, এ দৃশ্য সত্যিই অনেক দামি। এমনই তো হওয়া উচিত ছিল। আগামী দিনের জন্য এই ছবি সত্যিই আশা, ভরসা এবং সাহসের।’’

মেয়েদের নিরাপত্তা সব কিছুর আগে। নারী সুরক্ষা, নিরাপত্তার সঙ্গে কোনও কিছুর আপস করা চলে না। এমন ঘটনা আগামী দিনে যাতে কারও সঙ্গে না ঘটে সেই দাবিতে সোচ্চার হয়ে রাত দখল করেছিলেন তৃণমূল সমর্থক হিসাবে পরিচিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এডুকেশন বিভাগের অধ্যাপিকা সুপর্ণা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছাত্রীরাও রাতে রাস্তায় বেরোতে ভয় পায়। আমি চাই এই ভয় ওদের কেটে যাক। এক দিনে হবে না, তবে এক দিন ঠিক হবে। সেই শুরুটা ১৪ তারিখ হয়ে গিয়েছে। রাজনীতির ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে এই আন্দোলন এগিয়ে চলুক। এখানেই থেমে গেলে চলবে না।’’

রাতের অন্ধকারে আলোর খোঁজ।

রাতের অন্ধকারে আলোর খোঁজ।

আগামী দিনে এই কর্মসূচির কোনও অভিঘাত পড়বে কি না, সেটা সময় বলবে। গভীর রাতে মহিলারা নির্ভয়ে হাঁটাচলা করার সুযোগ পাবেন কি না, সেটাও এক দিনে বুঝে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে, তা আশা দেখায় বলে মনে করেন যাদবপুরের বাংলা বিভাগের ছাত্রী অন্তর্জিতা পাল। তাঁর কথায়, ‘‘একটা রাতের পদক্ষেপ নিয়ে হাজার রাত যুক্ত হলে তার পরে হয়তো আমি সুরক্ষিত বোধ করব। সে রাতের রাস্তায় সুরক্ষিত বোধ হলেও, পরের কোনও রাতে আমার নিরাপত্তা থাকবে, সেটা আমি মনে করি না। আমার সহপাঠী স্বপ্নদীপের মৃত্যুর ঘটনায় অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের এই ঝড় ওঠেনি। এই ঘটনাটিতে অন্তত মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এটাই অনেক বড় পাওয়া।’’

এই কর্মসূচিকে ঘিরে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন রিষড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব গৃহবধূ ভবানী আশ। শারীরিক নানা সমস্যাকে উপেক্ষা করেই সে রাতে পথে নেমেছিলেন তিনি। কিসের আশায়? তিনি বলেন, ‘‘আমারও তো মেয়ে আছে। মেয়েকেও রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। মায়ের মন মানে না, সারা ক্ষণ চিন্তায় থাকি। আমার ছেলেও আছে। ছেলে রাতে বাড়ি ফিরতে দেরি করলে চিন্তা কম হয়। আমি চাই আমার মেয়ে রাস্তায় কোনও কারণে আটকে গেলে, ও যেন নিরাপদে থাকে। সেই কারণেই প্রথম এমন কোনও জমায়েতে গেলাম।’’

আমেরিকার ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ কর্মসূচি।

আমেরিকার ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ কর্মসূচি।

রিমঝিমের ডাকে পশ্চিমবঙ্গের কোণে কোণে ১৪ অগস্টের রাত মেয়েদের দখলে থাকলেও, এই কর্মসূচির নেপথ্যে রয়েছে ইতিহাস। ১৯৭০ সালে ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ প্রথম শুরু হয়েছিল আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া শহরে। এক মহিলা মাইক্রো বায়োলজিস্টকে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন সে দেশের মহিলারা। এই ঘটনার ৭ বছর পরে ইংল্যান্ডের লিডসে এক রাতে মহিলা খুনের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরে প্রশাসনের পরামর্শ ছিল, রাতে মহিলাদের রাস্তায় না বেরোনোই সমীচীন। এই বিধিনিষেধ মানতে চাননি সে দেশের মহিলারা। আমেরিকার সেই আন্দোলনের আঁচ এসে পড়ে ইংল্যান্ডে। শুধু কর্মসূচির নাম বদলে হয় ‘রিক্লেম দ্য নাইট’। উদ্দেশ্য: নারীর স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা ছিনিয়ে নেওয়া। প্রতিবাদে রাত দখলের লড়াইয়ে নেমেছিলেন বিভিন্ন বয়সের মহিলারা।

কিন্তু সুরাহা কি কিছু হয়েছিল?

‘রিক্লেম দ্য নাইট’ আন্দোলনের মুহূর্ত।

‘রিক্লেম দ্য নাইট’ আন্দোলনের মুহূর্ত।

১৯৭০ থেকে ২০২৪— মাঝে কেটে গিয়েছে ৫৪ বছর। বদলায়নি কিছুই। নারীর সম্ভ্রম রক্ষার দায় সমাজের আগেও ছিল না, এখনও নেই। নারীকে বেআব্রু করাতেই যেন রয়েছে পৈশাচিক তৃপ্তি। প্রতিটি দশকে শুধু ঘটনার স্থান, কাল, ধরন বদলেছে, পাশবিক অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি মেয়েরা। মাঝের সময় পর্বে নির্যাতনের ইতিহাসে যোগ হয়েছে একের পর এক নৃশংস ঘটনা। নির্ভয়া-কাণ্ড, কামদুনি, উন্নাও, হাথরস, আরজি কর....

১৪ অগস্টের রাত কি ধর্ষকদের মনে ভয় ধরানোর জন্য যথেষ্ট নয়?

ছবি: রয়টার্স, পিটিআই, সংগৃৃহীত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy