—প্রতীকী ছবি
প্রায় প্রতি দিনই ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবরে সকলে আতঙ্কিত। সাধারণ মানুষের তো বটেই হাঁপানি, সিওপিডি বা আইএলডি-র মতো ফুসফুসের অসুখ থাকলে ডেঙ্গি জ্বর হলে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া দরকার। পরামর্শ দিলেন পালমোনোলজিস্ট বিভোর সেনগুপ্ত।
নিম্নচাপ আর বৃষ্টিতে দূষণ খানিকটা জব্দ হলেও ডেঙ্গি ভাইরাসেরা এখনও সমান ভাবে সক্রিয়। সময়ের সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বদলে যাচ্ছে ডেঙ্গির উপসর্গ। ডেঙ্গি জ্বর অনেক সময় মারাত্মক সমস্যা ডেকে আনে। দ্রুত সঠিক চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল। ইদানীং দূষণের প্রকোপে হাঁপানি, সিওপিডি সমেত ফুসফুসের অন্যান্য ক্রনিক অসুখের সমস্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে ডেঙ্গির আক্রমণ হলে ফুসফুসের জটিলতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই শুরুতেই সাবধান হতে হবে। হাঁপানি, সিওপিডি বা আইএলডি-র মতো ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ থাকলে জ্বর হলেই সতর্ক হন। বিশেষ করে ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় জ্বর হলে এলাইজা পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গি আছে কি না জেনে নেওয়া আবশ্যক।
বাচ্চাদের অ্যালার্জিজনিত সর্দি, হাঁচি ও হাঁপানি থাকলে দেরি না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কেননা, এক্সট্রিম এজ গ্রুপের মানুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় রোগী দ্রুত আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে। তাই সর্দি-কাশি, কাশির দমকে বুকে ব্যথা, কফ ওঠা এবং শ্বাসকষ্ট হলে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো দরকার।
ডেঙ্গি ভাইরাসের সঙ্গে নিউমোনিয়ার জীবাণুর সংক্রমণ হলে রোগীর অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে। ডেঙ্গি জ্বরে প্লেটলেট কাউন্ট কমতে শুরু করায় শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে। একই সঙ্গে সিভিয়ার ডেঙ্গি হলে ক্যাপিলারি (রক্তজালিকা) লিকেজ হয়ে ফুসফুসের অ্যালভিওলাইতে জল জমতে পারে। জল জমার কারণে রোগীর ভয়ানক শ্বাসকষ্ট হয়। বিশেষ করে যাঁদের ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ আছে তাঁদের এই অসুবিধার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় বেশি। অনেক সময় অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে যেতে পারে। এই সময়ে রেসপিরেটরি ফেলিওর, অর্থাৎ রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা ভীষণ ভাবে কমে যায়। এই অবস্থায় রোগীকে সাময়িক ভাবে ভেন্টিলেটরে রেখে স্থিতিশীল না করলে বিপদের আশঙ্কা প্রতিপদে। সময়মতো ভেন্টিলেটরে দিলে রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়। অনেক সময় হেমারেজিক শক সিনড্রোম হলে চিকিৎসকদের টিম হাজার চেষ্টা করেও রোগীকে সুস্থ করতে ব্যর্থ হন।
এক নজরে জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গি হলে কী করবেন, কী করবেন না
জ্বর হলে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাবেন। এই জ্বরে শরীরে ও মাথায় খুব ব্যথা করে। কিন্তু ভুলেও ব্যথার ওষুধ খাবেন না। এলাইজা পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে ডেঙ্গি হয়েছে কি না। শুরু থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে। প্রচুর জল ও জলীয় খাবার খেতে হবে। টাটকা ফলের রস খান, প্যাকেটজাত ফ্রুট জুস নয়। ডেঙ্গি-সহ যে কোনও জ্বর হলে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে। খেয়াল রাখুন যাতে রোগীর শরীরে জলের মাত্রা কমে না যায়। রোগীকে আলাদা করে মশারির মধ্যে রাখা দরকার, যাতে মশা কামড়ে রোগটা আরও ছড়িয়ে দিতে না পারে। প্রবীণদের নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন দিয়ে দেওয়া দরকার। বিশেষ করে ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ থাকলে টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রবল জ্বর, বমি, পেটে ব্যথা, সঙ্গে র্যাশ, শ্বাসকষ্ট ও ঝিমিয়ে পড়া, এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা শুরু করানো দরকার।
ডেঙ্গি প্রতিরোধ করতে হলে সকলকে সচেতন হতে হবে। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর, এই আপ্তবাক্য ডেঙ্গির জন্যে শতকরা একশো ভাগ সত্যি। বাড়ির আশপাশে জল জমতে দেবেন না। বাড়িতে ও পাড়ায় জমা জল দেখলেই ব্যবস্থা নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy