Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
CORONAVIRUS

করোনায় কতটা ঝুঁকি কলকাতার? রোগের মোকাবিলাই বা করবেন কী ভাবে, জেনে নিন

করোনাভাইরাসের আণুবীক্ষণিক আকার। ছবি: পিটিআই।

করোনাভাইরাসের আণুবীক্ষণিক আকার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ১৪:৩৬
Share: Save:

নতুন এই করোনাভাইরাস নিয়ে পৃথিবী জুড়ে এত হইচই হচ্ছে কেন?

গত দু’দশক ধরে করোনাভাইরাস চিকিৎসকদের ভাবাচ্ছে। করোনা গ্রুপের এই কোভিড-১৯ ভাইরাসের আগে ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’ বা ‘সার্স’ ২০০২ সালে ছড়ায়। ‘মার্স’ অর্থাৎ ‘মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’ ছড়িয়েছিল ২০১২ সালে। কোভিড-১৯ সেই গোত্রেরই জীবাণু। সংক্রামক হওয়ার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। আর এই কারণেই বিশেষ সতর্কতা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই ভাইরাসটির উৎপত্তি এবং চরিত্র সম্পর্কে এখনও গবেষক-বিশেষজ্ঞরা অনেক কিছুই জানিতে পারেননি। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে Covid-19 ভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে এবং এই জীবাণু মানুষের থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে আক্রান্তের ৬ ফুট নাগালের মধ্যে থাকলে সুস্থ মানুষের রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষ করে আক্রান্ত মানুষটির হাঁচি, কাশি, নাক ঝাড়া বা নাকে-মুখে হাত দিয়ে সুস্থ মানুষের সংস্পর্শে এলে, অন্য জনের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি প্রবল। সব থেকে মুশকিল হল জীবাণু সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে যায়।

এই অসুখে কাদের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি ও তা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে?

মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের কোনও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি তাই যে কেউই আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে রোগাক্রান্ত হয়ে উঠতে পারেন। ‘কোভিড-১৯’ ভাইরাসের মারাত্মক হয়ে ওঠার ঝুঁকি থাকে বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের মধ্যে। এ ছাড়া যাঁরা হার্ট, ফুসফুস বা ক্যানসারের মত অসুখে ভুগছেন, ডায়াবিটিস আছে অথবা কোনও কারণে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেই এই ভাইরাস নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে

আমাদের দেশেও এই অসুখ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কি খুব বেশি?

আমাদের দেশে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। যাঁরা কাজের সূত্রে চিন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া-সহ নানা জায়গা থেকে দেশে ফিরছেন বা বিদেশ থেকে ভারতে আসছেন তাঁদের থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। আর এই কারণেই কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের চিকিৎসকদেরও সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে ভারতের বেশির ভাগ জায়গার আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র বলে এই ভাইরাস সে সব জায়গাতে খুব একটা বেড়ে উঠতে পারবে না বা ছড়াতে পারবে না।

আরও পড়ুন: সাধারণ ফ্লুয়ের সঙ্গে করোনার কী মিল, অমিলই বা কোনগুলো?

করোনা এড়াবেন কী ভাবে? দেখে নিন

এই সময় কারও বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে তা হলে কি বাতিল করা উচিত?

অসুখের হাত থেকে বাঁচতে চিন-সহ যে সব দেশে অসুখ ছড়িয়ে পড়েছে সেই সব দেশে না যাওয়াই ভাল। অন্য দেশে যেতে হলেও এই মুহূর্তে ভেবে দেখা দরকার।

একান্তই বাইরে যেতে হলে কী ভাবে নিরাপদ থাকা যায়?

প্রথমত ভিড়ভাট্টায় না থাকাই ভাল। কাছাকাছি কারও হাঁচি-কাশি হলে নিজের নাক-মুখ চাপা দিয়ে রাখার সঙ্গে সঙ্গে ২০ সেকেন্ড ধরে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত রগড়ে ধুতে হবে। সাবান বা জল না থাকলে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল আছে এমন হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা উচিত। সার্জারি মাস্কও পরতে হবে।

স্বাস্থ্য়বিধি মানলেই এড়ানো যাবে অসুখ। ছবি: পিটিআই।

এই সমস্যার চিকিৎসা কি আদৌ আছে বা প্রতিষেধক টিকা নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা হচ্ছে?

প্রথমেই জানাই, এই সংক্রমণের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। উপসর্গ ভিত্তিক কষ্ট লাঘবের জন্য কিছু চিকিৎসা করা হয়। এখনও পর্যন্ত কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনও টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের ডিএনএ শনাক্ত করেছেন। আশা করা যায়, অচিরেই এই জীবাণু আটকানোর প্রতিষেধকও পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: কেমন মাস্ক পরলে করোনা এড়াতে পারবেন, ব্যবহারের নিয়ম কী?

সকলেরই কি ফেস মাস্ক ব্যবহার করা উচিত?

কিছু নিয়ম আছে এ ব্যাপারে, যা মানা উচিত।

• যাঁদের ‘কোভিড-১৯’ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে তাঁদের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। যাঁরা হেল্‌থ কেয়ার সার্ভিসে আছেন তাঁদেরও বাধ্যতামূলক ভাবে মাস্ক ব্যবহার করা দরকার। আর যারা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা করছেন তাঁরা অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন।

• সুস্থ মানুষের গণহারে মাস্ক ব্যবহারের কোনও কারণই নেই।

• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে মাস্ক ব্যবহারের আগে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে তবেই মাস্ক পরা উচিত।

• সঠিক ভাবে মাস্ক পরা দরকার, এবং তা ভিজে লাগলে অবশ্যই পরিবর্তন করে নিতে হবে।

• কানের স্ট্র্যাপ ধরে মাস্ক খোলা-পরা করা উচিত। যেখানে-সেখানে মাস্ক ফেলা অনুচিত।

কোভিড ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় কী কী আছে?

করোনা গ্রুপের কোভিড–১৯ ভাইরাসের চরিত্র সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখনও অনেক তথ্য জেনে উঠতে পারেননি। সাধারণ জ্বর-সর্দিই এই অসুখের প্রাথমিক উপসর্গ। বিজ্ঞানীরা তবে এখনও বুঝে ওঠা যাচ্ছে না কিছু দিনের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রকোপ কমে যাবে নাকি আরও মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়বে!

দেখা গিয়েছে সাধারণ ভাইরাল ফিভার ও সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দিয়ে রোগের সূত্রপাত হলেও বয়স্ক মানুষ এবং যাঁদের হার্ট ও লাং-সহ অন্যান্য কোনও অসুখ আছে তাদের ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। কয়েকটি ব্যাপারে সচেতন হয়ে সামগ্রিক পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে এই অসুখের হাত এড়ানো যায়।

আরও পড়ুন: করোনা ঠেকাতে কী করবেন? এই অসুখের লক্ষণই বা কী? জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা

মাস্ক পরা-খোলা করুন পিছন দিক থেকে। ছবি: পিটিআই।

সুস্থ থাকতে গেলে কী কী করব?

• সঠিক ডায়েট, নিয়মিত এক্সারসাইজ করে ওজন স্বভাবিক রাখা ও নিশ্ছিদ্র নিদ্রা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। এ ছাড়া ধূমপান, মদ্যপানের মতো বদভ্যাস থাকলে তা ছেড়ে দিতে হবে। মন ভাল রাখতে নিয়ম করে মেডিটেশন করতে পারলে ভাল হয়।

• নিয়ম করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। খাবার আগে তো বটেই, নাকে-মুখে-চোখে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই ভাল করে সাবান দিয়ে রগড়ে হাত ধুতে হবে, অসুবিধে থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভাল করে হাত ধোয়া দরকার।

• ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া-সহ যাবতীয় টিকা নিয়ে রাখা উচিত, বিশেষ করে যাঁদের কোনও ক্রনিক কোনও অসুখ, যেমন ডায়বিটিস, হার্টের অসুখ, সিওপিডি ও নানা ফুসফুসের অসুখ আছে তাঁদের তো বটেই, সিনিয়র সিটিজেনদের বাধ্যতামূলক ভাবে ভ্যাকসিন নেওয়া দরকার।

• হাত না ধুয়ে চোখ, নাক, মুখে হাত দেবেন না।

• কোভিড–১৯ ভাইরাস ঠিক কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ে সেই বিষয়ে এখনও চিকিৎসকরা নিশ্চিত নন। তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর ব্যাপারে কিন্তু নিশ্চিত। হাঁচি-কাশির পাশাপাশি সর্দি বা লালার মারফত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে। তাই মুখে, চোখে ও নাকে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে। তাই খাবার খাওয়ার আগে তো বটেই, নাক ঝাড়া, হাঁচি ও কাশির পর পরই সাবান বা হ্যান্ড স্যনিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়া দরকার।

• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ও সরকারি স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের ওয়েবসাইটে কোভিড–১৯ সম্পর্কে যে সব তথ্য জানাচ্ছেন সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা দরকার।

• কাজের প্রয়োজনে বা অন্য কারণে বাইরে যেতে গেলে যে সব নিয়ম মেনে চলা দরকার তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

• নিজে বা নিকট জন অসুস্থ হয়ে পড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। যদি জ্বর, সর্দি কাশি, শ্বাসকষ্ট, মাথা ও গা-হাত-পা ব্যথার মত উপসর্গ হয় তবে অবিলম্বে সাবধান হন। বিশেষ করে যদি বিদেশ থেকে আসেন বা বিদেশ থেকে এসেছেন এমন কারও সংস্পর্শে আসেন তবে অবশ্যই ডাক্তারকে সে কথা জানান। কোভিড-১৯ পরীক্ষার পাশাপাশি অন্যদের মধ্যে যাতে অসুখ ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে সবাইকে। সাধারণ ভাইরাল ফিভার হলে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও সঠিক পথ্য নিন, দরকার হলে ওষুধ খান।

• অযথা আতঙ্কিত হবেন না, আর গুজব ছড়াবেন না। তবে সাবধানের মার নেই। সাবধানে থেকে কোভিড–১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে হবেই।

• হাত ধোওয়ার নিয়মাবিধি মেনে চলুন। হাতে জল ঠেকানো মানেই কিন্তু হাত ধোওয়া নয়, এটা মনে রাখতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy