সুন্দর, উজ্জ্বল, দাগছোপহীন ত্বক— আহা, যদি কোনও জাদুকাঠিতে এক লহমায় এই স্বপ্ন পূরণ করা যেত!
কিন্তু আমাদের লাইফস্টাইল জুড়ে এখন আসর জমিয়েছে স্ট্রেস এবং টেনশন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য মুশকিল আসানের গুরুদায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে মেকআপের কাঁধে। মেকআপের জাদুস্পর্শেই হতে পারে নিখুঁত মুখমণ্ডলের স্বপ্নপূরণ!
প্রসাধন সরণির আগের মোড়ে
নিখুঁত ত্বক পেতে প্রসাধনের কড়া নাড়তে হবে ঠিকই, কিন্তু মেকআপের কেরামতি ত্বকের উপর সম্পূর্ণ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে আগে প্রয়োজন ত্বককে ঠিক মতো প্রস্তুত করা। তার অব্যর্থ উপায়, নিয়মিত ‘সিটিএম রুটিন’ মেনে চলা। অর্থাৎ ক্লেনজ়িং, টোনিং এবং ময়শ্চারাইজ়িং। আপনার ত্বক শুষ্ক, তৈলাক্ত না স্বাভাবিক— সেটা আগে বুঝে নিতে হবে। সেই মতো বেছে নিতে হবে ক্লেনজ়ার, টোনার এবং ময়শ্চারাইজ়ার। তবে এতেই থেমে গেলে চলবে না। আরও একটু কসরত করতে হবে বইকি! অন্যান্য কারণ তো রয়েছেই, দূষণ এবং বয়সের ছাপও কিন্তু মুখমণ্ডলের সতেজতা কেড়ে নিতে বেশ তৎপর। ফলে তাদের নজর থেকে ত্বককে বাঁচাতে ঘরোয়া ভাবে নিয়মিত রূপচর্চাও বিশেষ জরুরি। ‘ফ্ললেস’ তকমা ছিনিয়ে নিতে এই ধাপ বাড়তি সুবিধে দেবে।
সাজপাঠের সহজপাঠ
যত্নের হাত ধরে ত্বক গড়েপিটে নেওয়ার কাজ তো সারা হল। এ বার পালা মেকআপ শুরুর...
তবে তার আগেও একটা ছোট্ট ধাপ রয়েছে। যা অত্যন্ত জরুরি বলেই জানাচ্ছেন মেকআপ শিল্পী অভিজিৎ পাল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মেকআপ শুরুর আগে ফেসওয়াশ দিয়ে ভাল করে মুখ ধুতে হবে। এ বার সারা মুখে সেরাম লাগিয়ে নিতে হবে। এর পর অ্যাপ্লাই করতে হবে ময়শ্চারাইজ়ার। তবে তা লাগিয়েই সঙ্গে সঙ্গে মেকআপ শুরু করা উচিত নয়। মিনিট দুয়েক অপেক্ষা করা ভাল।’’
সূচনায় কনসিলার
পিগমেন্টেশন, ব্রণ, অ্যাকনে ইত্যাদি দাগছোপের পাশাপাশি চোখের তলার কালিকে বাগে আনতে প্রথমেই দ্বারস্থ হতে হবে কনসিলারের। চোখের নীচের অংশের পাশাপাশি যে যে জায়গায় দাগছোপ স্পষ্ট, সেই জায়গাগুলিতে কনসিলার লাগিয়ে আঙুলের আলতো চাপে তা ব্লেন্ড করে নিন। ব্লেন্ডিং ব্রাশ থাকলে তা-ও ব্যবহার করতে পারেন।
‘প্রাইমার’ই প্রধান
মেকআপের হাত ধরে স্মুদ বা ফ্ললেস ফিনিশ পেতে রোমকূপ ঢাকা সবচেয়ে জরুরি। এই উদ্দেশ্য সাধন করতে প্রাইমার-ই প্রধান কারিগর। ফলে ‘নিখুঁত’ লুকের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে এই প্রডাক্টটি বাদ দেওয়া একেবারেই চলবে না। কনসিলারের পরে কয়েক ফোঁটা প্রাইমার নিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। অভিজিতের কথায়, ‘‘হাল্কা কিন্তু তেলতেলে নয় এমন প্রাইমারই সবচেয়ে ভাল।’’ প্রাইমার ব্লেন্ড করার সময়ে ব্রাশটির টান হবে উপর থেকে নীচে। মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী করার পাশাপাশি ফাউন্ডেশন লাগানোর জন্য সুন্দর বেস তৈরি করে দেয় এই প্রাইমার।
‘ফাউন্ডেশন’ই সলিউশন
প্রাইমারের পরেই ফাউন্ডেশনের পালা। তবে দেখে নিন, ফাউন্ডেশনটি আপনার স্কিনটোনের সঙ্গে মিলছে তো? কারণ, ফ্ললেস লুক পেতে নিজের ত্বকের সবচেয়ে কাছাকাছি টোনের ফাউন্ডেশন ব্যবহারই হল আসল ‘ট্রিক’। সাধারণত ফাউন্ডেশন কেনার সময়ে হাতের উপরে তা পরীক্ষা করে দেখাই আমাদের অভ্যেস। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেটা না-করে মুখমণ্ডলের কাছাকাছি কোনও অংশে ফাউন্ডেশনের টোনটি পরীক্ষা করে নেওয়াই ভাল। স্কিনটোনের কাছাকাছি মনে হচ্ছে এমন তিনটি শেডের ফাউন্ডেশন হাতে তুলে নিন। চোয়ালের নীচের অংশে তিনটি শেডই অল্প অল্প লাগিয়ে নিয়ে দেখুন কোনটা আপনার ত্বকের বর্ণের সবচেয়ে কাছাকাছি। সেটিই কিনুন।
‘হাই-কভারেজ’ ফাউন্ডেশন ত্বকের দাগছোপ ঢাকতে বেশি উপযোগী। তবে এই ধরনের ফাউন্ডেশন ঘন হয়। আবার পাউডার ফাউন্ডেশনও রয়েছে। সেগুলি দেয় ম্যাট ফিনিশ। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে পাউডার ফাউন্ডেশন একেবারেই চলে না। এতে মেকআপের কিছুক্ষণ পর থেকেই ত্বকে কালো ছোপ ফুটে ওঠার মতো সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই ত্বকের ধরন বুঝে ফাউন্ডেশন কিনুন। বাজারে হাজার রকমফের থাকলেও বিশেষত ‘ফ্ললেস লুক’ পেতে অভিজিৎ জোর দিচ্ছেন হাল্কা ফাউন্ডেশনের উপরেই। আঙুলের মাথায় ফাউন্ডেশন নিয়ে অল্প অল্প করে সারা মুখে তা লাগিয়ে মেকআপ স্পঞ্জ দিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করে নিন। ব্রাশও ব্যবহার করা যায়। তবে বিশেষ করে ফাউন্ডেশনের ক্ষেত্রে মেকআপ স্পঞ্জ ব্যবহারের উপরেই জোর দিয়ে থাকেন মেকআপ শিল্পীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এতে ফাইনাল লুকটি তুলনায় বেশি স্মুদ দেখায়।
বেস লাগানোর পরে একটা ছোট্ট পর্ব বাকি। অভিজিৎ বলছেন, ‘‘বেসের উপরে কমপ্যাক্ট লাগিয়ে নেওয়া জরুরি। সেটা যেন মিস না হয়।’’
শেষের সেনানীরা
এ বার পালা ‘ফিনিশিং টাচের’। তার জন্য প্রথমেই দ্বারস্থ হতে হবে ব্লাশ অন এর। এ ক্ষেত্রে একটি নয়া কৌশল শেখালেন অভিজিৎ। তিনি বললেন, ‘‘চিকবোনের উপরে ক্রিম ব্লাশ-অন ব্যবহার করুন প্রথমে। তার উপরে লাগিয়ে নিন পাউডার ব্লাশ-অন। এতে ব্লাশ-অন অনেকক্ষণ ধরে টিকে থাকবে। এর পর ব্লাশের উপরে হাল্কা করে পছন্দের হাইলাইটার লাগিয়ে নিন। এতে আপনার মুখে একটি ফ্রেশ গ্লো আসবে।’’ তবে মনে রাখতে হবে, অন্যান্য মেকআপ প্রডাক্টের মতোই এ ক্ষেত্রেও ভাল করে ব্লেন্ড করাই হল মূল কৌশল।
প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, কমপ্যাক্ট, ব্লাশ-অন এবং হাইলাইটার লাগানো হলে তা যাতে ত্বকে ঠিক মতো বসে যায় তার জন্য তা ‘লক’ করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সে কাজটি করে ‘ফিক্সার স্প্রে’। মেকআপ শেষে ফিক্সার স্প্রে করে শুকোতে দিন। এতে মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী হয়। অভিজিৎ বললেন, ‘‘ফিক্সার দু’রকমের হয়। ওয়াটার বেসড এবং ক্রিমবেসড। কোনটা বাছবেন সেটা একান্তই পছন্দের উপরে নির্ভর করে। তবে ক্রিমবেসড হলে ফাইনাল লুকটা চকচকে দেখাবে বা যাকে বলে শাইন করবে।’’
সবশেষে পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেরে ফেলুন চোখের সাজ। সঙ্গত দিক মানানসই লিপস্টিক। আর হ্যাঁ, ভ্রুদ্বয় সুন্দর করে করে নিতে ভুলবেন না যেন!
মডেল: সৌরসেনী মৈত্র, ছবি: দেবর্ষি সরকার, মেকআপ: অভিজিৎ পাল, পোশাক: রিমি নায়েক, ইন্ডিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy