Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্যাস-অম্বল থেকে মুক্তি

পুজো মানেই খাওয়াদাওয়ার মরসুম। এই ক’দিন জমিয়ে খেতে গ্যাস-অম্বল তো দূরে রাখতেই হবে। রইল সহজ উপায়প্রথমেই জানতে হবে, মানুষের শরীরে যে অম্ল থাকে, তার অনেক গুণ। এই অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অম্লর পরিমাণ বেড়ে গেলে অ্যাসিডিটি হয়।

নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

হজমের সমস্যায় ভোগেননি, এমন মানুষ মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তার সঙ্গে যদি জুড়ে বসে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা, তা হলে তো আর কথাই নেই। হপ্তা ঘুরলেই পুজোর মরসুম শুরু। ফুচকা, ভেলপুরি থেকে ফিশ ফ্রাই, বিরিয়ানি... এক পেটে কত কী! তারা সকলে মিলে যদি বিদ্রোহ শুরু করে, তা হলে রক্ষে নেই। তাই আগেই সতর্ক হন। গ্যাস-অম্বল নিয়ন্ত্রণে থাকলেই হজম হবে সহজে। পুজোও কাটবে নির্বিবাদে।

অম্বল হয় কেন?

প্রথমেই জানতে হবে, মানুষের শরীরে যে অম্ল থাকে, তার অনেক গুণ। এই অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অম্লর পরিমাণ বেড়ে গেলে অ্যাসিডিটি হয়। ইনটেস্টাইনে ব্যাকটিরিয়া থাকে, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। এই সব ব্যাকটিরিয়ার জন্য অ্যাসিডিক পরিবেশই ভাল। সেই পরিবেশ নষ্ট হলে ব্যাকটিরিয়া মরে যায়। ফলে হজমের পদ্ধতি ধীরে হয়। মনে রাখা জরুরি, প্রোটিন জাতীয় খাবার হজমে অ্যাসিড দরকার। তাই মাংস ম্যারিনেট করতে টক দই বা ভিনিগার ব্যবহার করা হয়। আসলে সহজপাচ্য করতেই খাবারে অ্যাসিড যোগ করা হয়। প্রোটিন ভেঙে অ্যাসিড মেটা প্রোটিন তৈরি হয়, যা হজমের সহায়ক। তাই অ্যাসিড ব্যালান্স নষ্ট করা ঠিক নয়। অম্বলের ধাত থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খান।

অনেক সময়ে বারবার টুকটুক করে ভাজাভুজি খাওয়ার ফলেই অম্বল হতে পারে। হয়তো বিকেলের দিকে খিদে পেয়েছে, একটা শিঙাড়া খেয়ে নিলেন। তার আধ ঘণ্টা বাদে চা, মুড়িমাখা খেলেন। এতে কিন্তু অ্যাসিডের সম্ভাবনা বাড়ে। আপনি যত বার খাবেন, তত বার অ্যাসিড নিঃসৃত হয়। ফলে অ্যাসিডের পরিমাণ অতিরিক্ত হলেই বুক জ্বালা, চোঁয়া ঢেকুরের মতো সমস্যা হতে পারে। তাই খিদে পেলে এক বারে মুড়ি, শিঙাড়া খেয়ে নিন। পরের খাবার পরিমিত গ্যাপ দিয়ে খান।

অম্বল থেকে রেহাই

জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘বেশির ভাগ বদহজম, গ্যাস, অম্বলের সমস্যায় মানুষ মুড়িমুড়কির মতো প্যান্টোপ্রাজ়ল জাতীয় ওষুধ খান। এই ধরনের ওষুধ অ্যাসিডের ব্যালান্স নষ্ট করে দেয়। ফলে ভাল ব্যাকটিরিয়া নষ্ট হয়। হিতে বিপরীতও হয়। তা ছাড়াও তিন বছর টানা পিপিআই গ্রুপের ওষুধ খেলে অস্টিয়োপোরোসিসের আশঙ্কা থাকে। হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, কিডনির সমস্যাও হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে এই ধরনের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।’’ জীবনযাপনে পরিবর্তন এনেই গ্যাস-অম্বল থেকে মুক্তি সম্ভব।

• প্রত্যেক দিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে পারেন। এতে শরীর তৈরি থাকবে খাবার হজমের জন্য।

• খাবারের মধ্যে কিছু পরিমাণ প্রোটিন রাখতে পারেন। এতে অ্যাসিড কাজে লেগে যাবে। প্রোটিন মানেই কিন্তু মাংস নয়। দুধ, ডাল, ছানা ইত্যাদি খাবার রাখতে হবে রোজকার খাদ্যতালিকায়।

• খেতে বসার মিনিট দশেক আগে এক গ্লাস জল খেয়ে নিন। এতে অতিরিক্ত অ্যাসিড ওয়াশ আউট হয়ে যাবে। ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন। ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে জল খাওয়ার যে ধারণা আছে, তা কিন্তু ভুল বলে প্রমাণিত। কারণ এতে অ্যাসিড বা এনজ়াইম যা নিঃসৃত হয়, তা কাজে লাগে না। বরং খাওয়ার দশ মিনিট আগে জল খেলে কাজে লাগবে বেশি।

• যাঁদের অ্যাসিডিটির ধাত আছে, তাঁদের অ্যান্টাসিড খেতে হবে। সকালের দিকেই সাধারণত অ্যান্টাসিড খেয়ে থাকেন বেশির ভাগ মানুষ। কিন্তু সেটা রাতে খেতে বসার আগে খেলেই বেশি কাজ হয়। সকালের পরে যেহেতু মানুষ দাঁড়িয়ে, বসে থাকে বা হাঁটাচলা করে, ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সম্ভাবনা কম থাকে। বরং রাতে শুয়ে পড়লে উপরের দিকে অ্যাসিড উঠে আসার সম্ভাবনা বেশি। তাই রাতে অ্যান্টাসিড খেলেই উপকার বেশি।

গ্যাস হয় কেন?

অনেকেরই ধারণা গ্যাস হলেই অম্বল হবে বা উল্টোটা। কিন্তু এই দুইয়ের যোগাযোগ নেই। গ্যাস হলে অম্বল না-ও হতে পারে। গ্যাস হওয়ার কারণ ভিন্ন। প্রত্যেক দিন খাবার খাওয়ার সময়ে অনেক ফাইবার খাওয়া হয়। ইনটেস্টিনাল ব্যাকটিরিয়া বা এনজ়াইম যখন ফাইবার বার্ন করে, তখন বুদ্বুদের সৃষ্টি হয়। সেটাই গ্যাস আকারে মুখ দিয়ে বা পায়ুদ্বার দিয়ে নির্গত হয়। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং বায়ু নির্গত হওয়া শরীরের পক্ষে ভাল। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কিন্তু খাবারে ফাইবার বাছতে হবে সতর্ক ভাবে। ফাইবার বন্ধ তো করা যাবে না, বিকল্প খুঁজতে হবে। রুটি খেয়ে গ্যাস হলে ওট্স বাছতে পারেন।

উপশমের উপায়

• প্রথমেই জেনে রাখতে হবে, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পেঁয়াজ, রুটি, পালং শাক ইত্যাদি খাবারে গ্যাস বেশি হয়। এই ধরনের খাবার খেতে হলে দিনের প্রথমার্ধে খাওয়াই ভাল। • রাতে রুটি খেলে ডিনার সারতে হবে রাত ন’টার মধ্যে। খেয়ে উঠে হাঁটার অভ্যেস থাকলে ভাল। ব্যায়াম ও শারীরচর্চা নিয়মিত জরুরি। নিজেকে যত সচল রাখবেন, গ্যাস তত কম হবে।

• দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার অর্থাৎ পনির, ছানা, চিজ় খেলেও গ্যাস হয়। সে ক্ষেত্রে চিন্তা নেই। ল্যাকটো-এনজ়াইম খেয়ে নিতে পারেন। কোনও সাইড এফেক্ট নেই।

সামনে পুজো, কবজি ডুবিয়ে খাওয়া নিশ্চিত করতে এই ক’টা কথা মাথায় রাখা জরুরি। তা হলে আর গ্যাস-অম্বলের জ্বালায় ভুগতে হবে না আনন্দের দিনগুলোয়।

মডেল: মোনালিসা পাহাড়ি সতপথী, তৃণা বৈদ্য, রিয়া বণিক; ছবি: অমিত দাস (রিয়া), দেবর্ষি সরকার; পোশাক: ওয়েস্টসাইড, ক্যামাক স্ট্রিট

অন্য বিষয়গুলি:

Health Food Digestion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy