বাচ্চার দাঁতের যত্ন নিতে হবে একেবারে গোড়া থেকেই।
কারও বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময়ে খুদে সদস্যটির জন্য কিছু কিনতে হলে সবচেয়ে আগে হাত চলে যায় চকলেটের দিকে। রঙিন মোড়কের ক্যান্ডি, টফি বা মনভোলানো পেস্ট্রি নেন অনেকেই। কিন্তু বাচ্চাদের মন ভোলাতে গিয়ে পরোক্ষ ভাবে তাকে ঠেলে দেওয়া হয় সমস্যার দিকে। অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে খেতে বাচ্চাদের দাঁতের নানা সমস্যা শুরু হয়। প্রাথমিক ভাবে এই সব সমস্যার প্রতি তেমন খেয়াল না করলেও পরে কিন্তু এগুলিই জাঁকিয়ে বসে। আর তখন সুন্দর হাসি থেকে পরিষ্কার ঝকঝকে দাঁতের পাটি... সবটাই স্বপ্নের মতো মনে হয়। তাই বাচ্চার দাঁতের যত্ন নিতে হবে একেবারে গোড়া থেকেই। তবেই মোকাবিলা করা যাবে ক্যাভিটি, দন্তক্ষয়ের।
গোড়ার কথা
সাধারণত ছ’সপ্তাহ বয়স হলেই কোনও শিশুর দাঁত তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। দাঁতের চিকিৎসক ডা. পারমিতা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘দুধের দাঁত থেকেই যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কারণ দাঁত ঠিক মতো গড়ে না উঠলে দেখতে খারাপ লাগা, খাবার চিবোনো কিংবা দাঁতের গড়নের সমস্যা তো হয়ই। স্পিচ অর্থাৎ কথা বলাতেও সমস্যা তৈরি হয়।’’
নজরে থাকুক
কোনও বাচ্চারই একদম গোড়া থেকে ‘সুইট টুথ’ হয় না। বাড়ির সাধারণ খাবার খাওয়ালে, তারা সেই খাবারেই অভ্যস্ত হয়। বেবি ফুড কেনার সময়ে প্রথমেই দেখে নিন তাতে অতিরিক্ত চিনি আছে কি না। বাজারচলতি প্যাকেটজাত ফ্রুট জুস না খাইয়ে, ফল কিনে এনে তার রস খাওয়াতে পারেন। ছোট্ট বাচ্চার ক্ষেত্রে হজমের সমস্যা এড়াতে সেই ফলের রসে জল মিশিয়ে নিতে পারেন। বাচ্চার দাঁতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার।
টুকিটাকি
• ছোট শিশুর ক্ষেত্রে ফিডিংয়ের পরেই পরিষ্কার ও নরম কাপড় দিয়ে আলতো হােত দাঁত পরিষ্কার করা জরুরি
• শিশুর দাঁতের এনামেলের আবরণ পাতলা হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফ্লুরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করাতে পারেন। ফ্লুরাইড দাঁতকে শক্ত ও মজবুত করে তোলে
বটল ফিডিং: বোতলে করে শিশুকে খাওয়াতেই হয়। কিন্তু বাচ্চার দাঁত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ অনেক সময়েই হতে পারে বোতলে খাওয়ানোর ভুল অভ্যেস। কখনওই শিশুকে বোতলে করে মিষ্টি পানীয় দেওয়া উচিত নয়। এমনকি বোতল মুখে নিয়ে বাচ্চার ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যেসও তৈরি করা ঠিক নয়। খাবার খাওয়ার জন্যই বোতলের ব্যবহার করা দরকার। বোতল যেন কোনও ভাবেই প্যাসিফায়ারের কাজ না করে। এক বছর বয়স হলে শিশুর বোতলে খাওয়ানোর অভ্যেস ছাড়ানো দরকার। শিশুর এক বছর হলেই সিপার দিয়ে খাওয়ানোর অভ্যেস করাতে পারেন।
টিদিং: দাঁত বেরোনোর সময়ে অনেক বাড়ি থেকেই শিশুকে চিউয়িং রিং বা টিদার দেওয়ার প্রবণতা থাকে। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। হয়তো শিশুর মাড়ি ফুলে যায় কিংবা ভাল করে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যেস না তৈরি হলে হজমের সমস্যা হয়। তাই শিশুকে চিউয়িং রিং বা টিদার দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন ভেবেচিন্তে।
প্যাসিফায়ার: অনেক সময়েই সব বাচ্চার প্যাসিফায়ার বা সুদার প্রয়োজন হয় না। তবু কিনে দিতে হলে প্যাসিফায়ারের ডিজ়াইনের দিকে খেয়াল করুন। এর জন্য অর্থোডন্টিক প্যাসিফায়ার সবচেয়ে ভাল। কখনওই সেই প্যাসিফায়ার চিনিযুক্ত তরলে ডুবিয়ে শিশুর মুখে দেওয়া উচিত নয়।
থাম্ব সাকিং: বাচ্চার নিজের বুড়ো আঙুল মুখে ঢুকিয়ে সাক করার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকত্ব নেই। তবে যদি চার বছর বয়সের পরেও এই অভ্যেস না যায়, তা হলে পদক্ষেপ করতে হবে। এতে যেমন আঙুল শক্ত হয়ে যায়, তেমনই দাঁতের গঠন ঠিক হয় না।
দাঁতের আঘাত: হাঁটতে শেখার সময়েই বাচ্চা মাটিতে পড়ে গিয়ে আঘাত লাগে মুখেও। আঘাতজনিত কারণে রক্তপাত বন্ধ না হলে অবশ্যই দন্ত-চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সমস্যা দাঁতের গোড়ায়, না কি মাড়িতে, কোথাও কোনও ইনফেকশন ছড়িয়েছে কি না... তা বোঝার জন্য চিকিৎসক এক্স-রে করাতে পারেন। একই কথা খেলার সময়ে পড়ে গিয়ে আঘাত লাগার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
দাঁতের যত্ন
দাঁতের যত্ন কতটা জরুরি, সেটা সন্তানকে বোঝানো প্রয়োজন। তার জন্য ব্রাশিং, ফ্লসিং, ডায়েট— প্রয়োজন সব কিছুই। প্রতি ছ’মাসে একবার চিকিৎসকের কাছেও যাওয়া প্রয়োজন। এতে দাঁতে ক্যাভিটি বা ক্ষয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা তাড়াতাড়ি সামনে আসে। অনেক দাঁত বেরোলে ফ্লসিং করানো যেতে পারে। ছ’ থেকে দশ বছর বয়সি বাচ্চার ফ্লসিংয়ে অভিভাবকের সাহায্য প্রয়োজন। তবে রোজ ফ্লসিংয়ের অভ্যেস করালে তা সন্তানের দাঁতের জন্যও ভাল।
• দেড়-দু’বছর বয়স থেকে ব্রাশ করা শুরু করতে পারেন। বয়স বাড়ার সঙ্গেই দিনে দু’বার ব্রাশিংয়ের অভ্যেস জরুরি। কোনও বাচ্চাকেই চকলেট বা গ্রানোলা বার খেতে নিষেধ করা হচ্ছে না। তা খাওয়ার পরে কুলকুচি করে মুখ ধুতে হবে।
• একটু বড় হলে সন্তানকেই বাছতে দিন নিজের টুথব্রাশ। নানা ডিজ়াইনের পাশাপাশি টুথব্রাশের ভাল-মন্দও গল্পের ছলে বুঝিয়ে দিন তাকে।
• অন্তত আট বছর অবধি সন্তানের ব্রাশিং হোক আপনার সামনেই। ব্রাশিং মানে শুধুই এ-পাশে, ও-পাশে ব্রাশ বোলানো নয়। সন্তানের সঙ্গে ব্রাশ করুন, শেখান ব্রাশিংয়ের টেকনিক।
• ডা. গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বাচ্চারা দেখে শেখে। তাই খাওয়ার সময়ে যদি টিভি-মোবাইলে চোখ না রেখে সকলে মিলে একসঙ্গে বসে খাওয়ার অভ্যেস করেন, তার চেয়ে ভাল কিছু নেই। সন্তানকে ভাল করে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যেস করান ছোট থেকেই।’’
• দাঁতের সেটিং এলোমেলো বা উঁচু-নিচু হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেটিং, ব্রেস করাতে পারেন।
এ কথা সত্যিই যে, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝা দায়! কিন্তু যদি দাঁতের যত্ন শুরু হয় একদম ছোট থেকেই, তা হলে হাসিতে মুক্ত ঝরবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy