— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
জামরুলের রং সাদা। কিন্তু এখন আর তা বলা যায় না। বাজার ছেয়ে গিয়েছে লাল, সবুজ, সবুজ-লাল মেশানো রঙিন জামরুলে। আকৃতিতেও বৈচিত্র। আগে শুধু সাদা লাট্টুর মতো দেখতে জামরুল বাজারে পাওয়া যেত, এখন পাওয়া যায় লম্বাটে আকারেও।
দেশি জামরুলের পাশাপাশি বিদেশি, বিশেষ করে থাই প্রজাতির জামরুল চাষ করছেন ফলচাষিরা। ফলে জামরুল ফলে এসেছে বৈচিত্র। চিরাচরিত সাদা জামরুলের চেয়ে এদের দামও বেশি। অস্বীকার করা যাবে না, লাল, সবুজ বা সবুজ-লাল রঙের জামরুল দেখতে বেশ আকর্ষক, রঙিন হওয়ায় খাদ্যগুণও বেশি।
ফলের বাগানের শখ থাকলে আম, জাম, কাঁঠালের পাশে একটা জামরুল গাছ রাখাই যায়। লাল রঙের জামরুল হলে তো কথাই নেই। ফল ধরলে তার থেকে নজর সরানোই কঠিন হয়ে পড়ে। মিষ্টত্বের দৌড়েও সাদা জামরুলের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে। লাল, সবুজ, সাদা, লম্বাটে, দেশি বিদেশি, তাই যে কোনও প্রজাতির জামরুল গাছ বাগানের জমিতে যেমন হয়, তেমনই দিব্য হবে টবে। তবে তার জন্য ঠিক মতো যত্ন নিতে হবে প্রথম থেকেই। যত বড় টব নেওয়া যায় তত ভাল। প্রয়োজনে ড্রামেও রোপণ করতে পারেন। যদি প্রথমে ছোট টবে রোপণ করেন, তা হলে পরে প্রয়োজন মতো রিপটিং করে নিতে হবে।
বীজ থেকে চারা তৈরি করে নেওয়া যায়। তবে গুটিকলমের গাছে তাড়াতাড়ি ফল আসে। টবের জন্যও কলমের গাছ সেরা। গাছ রোপণের জন্য বর্ষাকাল এড়িয়ে যান, এই সময় অতিরিক্ত জল পেয়ে চারা গাছের শিকড় পচে যেতে পারে। আর পাঁচটা ফল বা ফুলের গাছের মতো জামরুলের প্রয়োজন পর্যাপ্ত রোদ। অন্তত সারাদিনে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা রোদ চায় এ গাছ। সেমি শেডে রাখলে জামরুল গাছ বাঁচবে, সবুজ পাতায় ভরে যাবে ঠিকই। কিন্তু ফুল আসবে না, ফল হবে না। যথেষ্ট জল দিতে হয় জামরুল গাছে। গ্রীষ্মের সময়ে সকাল বিকেল দু’বার। এর জন্য মাটি তৈরির সময়ে বাগানের মাটি, ভার্মিকম্পোস্ট বা এক বছরের পুরনো গোবরসারের মিশ্রণের সঙ্গে কিছুটা কোকোপিট বা কাঠের গুঁড়ো বা ধানের তুষ মিশিয়ে দিতে হবে, যাতে মাটি আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে। মাটি তৈরির সময়ে অল্প করে মিশিয়ে দিতে হবে হাড় গুঁড়ো, শিংকুচি, সরষে খোল। এর মধ্যে ফসফেট, নাইট্রোজেন পটাশিয়াম থাকে, এতে গাছের গ্রোথ ভাল হয়। এ ছাড়া মাটি তৈরির সময়ে অল্প করে নিমখোল মেশালে ছত্রাক আক্রমণ অনেকটা আটকায়।
গাছ রোপণের এক মাস পর থেকে সার দেবেন। এই গাছের জন্য উপযুক্ত মিশ্র জৈব সার। তরল সার হিসেবে সরষের খোল পচা জল দিন। এর পাঁচ থেকে সাত দিন পরে আনাজপাতির খোসা পচা জল দিতে পারেন। সাধারণত মার্চ মাসে ফুল আসে জামরুল গাছে। তাই জানুয়ারির শেষ থেকে গাছের খাদ্যে নাটট্রোজেনের ভাগ কমিয়ে ফসফেট ও পটাশের ভাগ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া হাড়গুঁড়ো, শিংকুচি, সরষে খোল, পটাশ, কলার খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো, ডিমের খোল একসঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন।
ফলের গাছে পোকার উপদ্রব তো হবেই। তবে অন্যান্য ফলের গাছের তুলনায় জামরুলে রোগপোকার আক্রমণ কম। মিলিবাগ, মাইটস, সাদা মাছির উৎপাত হয় এই গাছে। পোকার হাত হতে বাঁচতে নিমতেল জলে মিশিয়ে স্প্রে করা যায়। মিলিবাগের জন্য এক লিটার জলে শ্যাম্পু বা ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে তা স্প্রে করে দিতে পারেন। এর বদলে জৈব হলুদ গুঁড়ো জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে যথেষ্ট কাজ হয়। ফলের গাছ বলে রাসায়নিক সার কম ব্যবহার করাই ভাল। না হলে বাজারের ফলের সঙ্গে আপনার বাড়ির ফলের কী পার্থক্য থাকবে! খেয়াল রাখবেন গাছের গোড়ায় যেন আগাছা না জন্মায়। মাসে অন্তত একবার গাছের মাটি খুঁড়ে দিতে হবে।
গাছের যথার্থ পরিচর্যার মধ্যে গাছ ছাঁটাইয়ে কাজটাও পড়ে। ঠিক সময়ে ডালপালা ছেঁটে দিলে, নতুন ডাল পালা গজায়, ফুল ধরে, ফল হয়। শীতে এই গাছ ডরমেন্ট পিরিয়ডে চলে যায়। তাই সে সময় শুধু জল ছাড়া কোনও সার দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy