Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Scabies

স্ক্যাবিস সারবে সহজেই

রাতে খুব বাড়ে স্ক্যাবিসের চুলকানি। শিশু ঘুমোতেই পারে না। কী করণীয়?

An image of Scabies

—প্রতীকী চিত্র।

চিরশ্রী মজুমদার 
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৭:২৮
Share: Save:

গরম, ঘনবসতিপূর্ণ দেশে থাকি আমরা। ভাইরাস, ব্যাক্টিরিয়া বা পরজীবী প্রাণী সংক্রান্ত নানা অসুখ, ছোঁয়াচে রোগব্যাধি লেগেই থাকে। এই ধরনের সংক্রমণে জেরবার হয় বাড়ির খুদেরাও। এমনই একটি সংক্রামক রোগ হল স্ক্যাবিস। এ ক্ষেত্রে বাচ্চার দু’আঙুলের ভাঁজে, গায়ের চামড়ায় ক্ষত (লিসন) বেরিয়ে যায়, আর সে ক্রমাগত চুলকাতে থাকে। বিশেষত, রাতে সমস্যা এতটাই বাড়ে যে, বাচ্চা ঘুমোতেই পারে না। সন্তানের কষ্ট দেখে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন বাবা-মা। কোনও জটিল সমস্যা হল কি না, কী ভাবে বাচ্চা সারবে তাই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাঁদের অনেকটাই আশ্বস্ত করলেন ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী। তিনি জানালেন এটি পরজীবী প্রাণী ঘটিত রোগ। এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির দেহে ছড়ায়। কখনও তা সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে হয়, কখনও গামছা, পোশাক, বিছানার চাদর ইত্যাদি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করলেও হতে পারে। কিছু স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চললেই একে রুখে দেওয়া সম্ভব।

রোগ চেনার উপায়

‘সারকপটিস স্ক্যাবি’ হল আর্থ্রোপড গোষ্ঠীভুক্ত একটি পরজীবী প্রাণী। এই পরজীবী বাতাসে জীবিত থাকতে পারে না। এগুলি মানুষের দেহে বসতি গড়ে। সেই সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে অন্য মানুষেরও রোগটি হয়। সে ক্ষেত্রে এই ছোট্ট ছোট্ট প্রাণীগুলি ত্বকের একেবারে উপরিস্তরকে আক্রমণ করে এবং চামড়ার মধ্যে গহ্বর (বারো) তৈরি করে। ওই গহ্বরে স্ত্রী সারকপটিস স্ক্যাবিগুলি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়তে পাড়তে কিছু দিন পর ওই গহ্বরের শেষ প্রান্তে গিয়ে প্রাণীটি মারা যায়। যেখানে প্রাণীটি মারা গেল, সেই অংশটায় একটু ফোলা ভাব দেখা যায়। দু’আঙুলের মাঝখানে, নখের ভাঁজে, বাহুমূলে, জননাঙ্গে এই সংক্রমণজনিত গহ্বর, ফোলা ভাব বেশি দেখা যায়। এই গহ্বরগুলো হয় খুব সূক্ষ্ম সর্পিলাকার ও ছাইরঙা। এই সব লক্ষণ, অসহ্য চুলকানির সমস্যা দেখলেই চিকিৎসক রোগটিকে শনাক্ত করে ফেলেন। এ ভাবেই গোটা বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন ডা. রায়চৌধুরী। আরও জানালেন, এই রোগের ক্ষেত্রে সারা শরীরেই কখনও কখনও ‘প্যাপিউলার লিসন’ (দাগড়া দাগড়া গোটার মতো) দেখা যায়। বাড়াবাড়ি হলে ফোসকার মতোও দেখা যেতে পারে।

বাচ্চাদের এই রোগ বেশি হয়। প্রায়ই মা-বাবা এসে বলেন, রাতে বাচ্চার এত চুলকানি হচ্ছে যে, গোটা রাত ঘুমাতে পারছে না। তাদের থেকে বড়দের শরীরেও এই রোগ ছড়ায়। নবজাতক থেকে স্কুলের শিশুদের এই রোগে ভুগতে দেখা যায়। বাচ্চারা একসঙ্গে টিফিন খায়। পড়ার সময় পাশাপাশি বসে, একে অপরের সংস্পর্শে বেশি আসে। নিজেদের মধ্যে ছোঁয়াছুঁয়ি, হুটোপাটি করে খেলে। তা ছাড়া ছোট বাচ্চারা তো আর নিজেদের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে জানে না, সেটা তাদের হয়ে অন্য কেউ খেয়াল রাখেন। তাই অনেক সময়েই তারা সহজেই এই রোগের কবলে পড়ে।

অনেকেই স্ক্যাবিসকে খোসপাঁচড়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। দুটো এক অসুখ নয়। অনেক সময়ে এই রোগ থেকে ‘সেকেন্ডারি ইনফেকশন’ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে স্ট্যাফাইলোকক্কাস বা স্ট্রেপটোকক্কাস দ্বারা সংক্রামিত হয়ে খোসপাঁচড়ার সমস্যা দেখা দেয়।

চিকিৎসার পদ্ধতি

রোগী ও আশপাশের মানুষ প্রত্যেককে খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রোজ ধোয়া জামাকাপড় ব্যবহার করতে হবে। বিছানার চাদর, বালিশের ঢাকনা নিয়মিত পাল্টাতে হবে।

সদ্যোজাতের অভিভাবক বা যিনি তার খেয়াল রাখছেন— তাঁদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। পরিষ্কার পোশাক পরে, নিজের পরিচ্ছন্নতা বিধি মেনে, হাত ভাল ভাবে ধুয়ে বাচ্চাকে ধরা উচিত। বা, তাদের বিছানায় বসা উচিত।

ডা. রায়চৌধুরী বললেন, “বাচ্চাকে ভাল করে স্নান করিয়ে গলা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীরে পারমিথ্রিন (৫%) মলম লাগিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে ওকে কাচা পোশাক পরিয়ে, কাচা বিছানার চাদরে শোয়াতে হবে। পরের দিন মলম ধুয়ে নিতে হবে। শুধু বাচ্চাকে নয়, বাড়ির সবাইকেই মলম লাগিয়ে ধোয়া পোশাক পরতে হবে, পরিষ্কার বিছানায় শুতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রোগলক্ষণ না থাকলেও তাঁদের এই ক্রিম লাগাতে হবে। নয়তো জীবাণুগুলি কারও না কারও দেহে থেকে যেতে পারে। এই মলমটি এক বার লাগালেই যথেষ্ট। তবে এই প্রাণীটির লালারস, ডিম্বাণু ইত্যাদির প্রভাবে ইমিউনোজেনিক রিয়্যাকশন-এর (যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাইরের কোনও ক্ষতিকর পদার্থ শরীরে ঢুকছে বলে চিহ্নিত করে ও তার বিরুদ্ধে লড়ে) কারণে খুব চুলকানি হয়। এই চুলকানির জ্বালা কমাতে অ্যান্টিহিস্টামিনিক জাতীয় (অ্যালার্জির ক্ষেত্রে যা দেওয়া হয়) ওষুধ দেওয়া হয়।”

রোগের প্রকোপ বেশি থাকলে বাচ্চাদের আইভারমেকটিন ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে। তাতে ভাল উপকার পাওয়া যায়।

প্রতিরোধের উপায়

ডা. রায়চৌধুরীর কথায় স্বাস্থ্যবিধি মানলে, পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস রপ্ত করলে এই রোগকে সহজেই রুখে দেওয়া যায়। আক্রান্তকে ঘৃণা বা অবজ্ঞা নয়, তার সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে। রোগ যাতে না ছড়ায়, তাই তার থেকে দূরে থাকতে হবে।

গ্রীষ্মপ্রধান দেশে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সাবধান থাকা জরুরি। এখানে প্রতিনিয়ত ঘাম হয়, ত্বকে ময়লা জমে। সে সব নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। না হলে স্ক্যাবিস এবং এ ধরনেরনানা রোগব্যাধিতে ভুগতে হবে।একই সঙ্গে বিশেষ যত্ন নিতে হবেআমাদের ভরসায় ও তত্ত্বাবধানে থাকা শিশুদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Children Allergy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy