বেশিক্ষণ সামনে ঝুঁকে বসলে কোমরের ডিস্কে চাপ পড়ে বেশি।
লোব্যাক পেন অনেকেরই নিত্যদিনের সমস্যা। তার উপরে পুজো শেষে, এই সিজ়ন চেঞ্জের সময়ে ব্যথা যেন আরও বাড়ে। এ ধরনের ব্যথার কারণ কিন্তু লাইফস্টাইল। বিশেষত যাঁদের দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়। তা ছাড়া পুজোর সময়ে তো মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসার কথা কারওই মনে থাকে না। ছুটি শেষে অফিসে ফিরে আবার দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ। এ ভাবে বসার সঙ্গে লো-ব্যাক পেন কিন্তু ইন্টারলিঙ্কড।
মেরুদণ্ডের একটা নির্দিষ্ট আকার রয়েছে। কিন্তু ঠিক ভাবে না বসলে ঠিক আকার বজায় থাকে না। অ্যালাইনমেন্ট নষ্ট হয়। আবার বেশিক্ষণ সামনে ঝুঁকে বসলে কোমরের ডিস্কে চাপ পড়ে বেশি। তার থেকেও এ ধরনের ব্যথা হয়। ব্যথার দ্বিতীয় কারণ হল, বেশিক্ষণ একটানা বসে থাকার ফলে হিপের পেশির সঙ্কোচন। এতেও মেরুদণ্ডের অ্যালাইনমেন্ট নষ্ট হয়। ফলে কোমরে ব্যথা হয়।
আবার পুজোর সময়ে অনেকেই হিল পরে অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেছেন। তা থেকেই গোড়ালি বা কোমরে ব্যথা। আপনি যখনই হিল পরছেন, কোমর সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়ালে কোমরে যে চাপ পড়ে, হিল পরার দরুন তার চেয়ে অনেক বেশি চাপ পড়ে। ফলত ব্যথা। সিজ়ন চেঞ্জের সময়ে তাপমাত্রার তারতম্য হয় বলে মাসল টাইটনেস বাড়ে। তাই এ সময়ে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকার পরে ঘুম থেকে উঠলেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। তবে কিছুক্ষণ চলাফেরার পরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হলে সে ব্যথা চলে যায়।
ব্যথার উপশম কী ভাবে হবে?
প্রথমেই বসার ভঙ্গি ঠিক করতে হবে। দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে কাঠের চেয়ারে বসুন। দ্বিতীয় হল স্পাইনাল স্টেবিলাইজ়েশন। অর্থাৎ মেরুদণ্ডকে সুস্থির রাখার জন্য কিছু ব্যায়াম। দেখা গিয়েছে, লো-ব্যাক পেন শতকরা নব্বই শতাংশ লোকের ক্ষেত্রেই ঝুঁকে কাজ করার কারণে হয়। এ জন্য দরকার এক্সটেনশন, মেরুদণ্ডকে প্রসারিত করার ব্যায়াম।
বার্ড ডগ: দু’হাতের তালু ও হাঁটু মাটিতে রেখে মেরুদণ্ড টানটান রাখুন। ডান হাত ও বাঁ পা প্রসারিত করে ধরে রাখুন। দশ সেকেন্ড করে ধরে রাখতে হবে। দু’দিকেই অর্থাৎ ডান হাত, বাঁ পা এবং বাঁ হাত, ডান পা, ছ’ থেকে আট বার করতে হবে।
ব্রিজ: মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুটো হাঁটু নব্বই ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে ভাঁজ করে কোমরটাকে শূন্যে ধরে রাখুন। বুক এবং হাঁটু যেন এক রেখায় থাকে। দশ সেকেন্ড করে ধরে রাখতে হবে। ছ’ থেকে আটবার এক্সারসাইজ়টি করতে হবে।
সাইড প্ল্যাঙ্ক: পাশাপাশি কনুই আর পায়ের পাতায় ভর দিয়ে শরীরটাকে শূন্যে তোলা। ডান কনুই ও ডান পায়ের পাতায় ভর রেখে শরীরকে শূন্যে দশ সেকেন্ড তুলে রাখুন। এ ভাবে বাঁ দিকেও করুন। তিন থেকে চার বার এক্সারসাইজ় করুন।
ডেড বাগ: মাটিতে শুয়ে পড়ুন। দুটো হাঁটু শূন্যে ভাঁজ করে কোমরের উপরে তুলুন। দুটো হাত একসঙ্গে সোজা করে তুলে রাখুন। এ বার সাইকেল চালানোর ভঙ্গিতে ডান হাত ও বাঁ পা এবং বাঁ হাত ও ডান পা প্রসারিত করুন। পর্যায়ক্রমে ডান পা ও বাঁ হাত, বাঁ পা ও ডান হাত প্রসারিত করুন। দু’দিকেই বারো বার করে করুন। এই ব্যায়ামটি অবশ্য ডান হাত ও ডান পা প্রসারিত করেও করতে পারেন। তিন থেকে চারবার করে রিপিট করুন।
এক্সারসাইজ় বাছার সময়ে দেখতে হবে, জীবনযাত্রার ধরন এবং কী কারণে ব্যথা হচ্ছে। এই ক’টি এক্সারসাইজ় কিন্তু যাঁরা বসে কাজ করেন, তাঁদের জন্য খুব উপকারী। আবার দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য যাঁদের কোমরে ব্যথা, তাঁদের জন্য ফ্লেকশন বেসড এক্সারসাইজ় উপকারী, যাতে মেরুদণ্ডের সামনের দিকের পেশির জোর বাড়ে।
ব্যথা কমানোর জন্য যে রকম জোর বাড়ানো দরকার, তেমনই অ্যালাইনমেন্ট ঠিক রাখার জন্যও পেশির স্ট্রেচিং দরকার। মেরুদণ্ডের স্টেবিলিটি এক্সারসাইজ়ের সঙ্গেই যে পেশি সঙ্কুচিত হয়েছে, তা দীর্ঘায়িত করার জন্য স্ট্রেচ করতে হবে। তবেই মেরুদণ্ডের অ্যালাইনমেন্ট ঠিক থাকবে। তাই কোর এক্সারসাইজ়ের সঙ্গে স্ট্রেচও করতে হবে।
হ্যামস্ট্রিংয়ের স্ট্রেচ: হাঁটুর পিছনের পেশির (হ্যামস্ট্রিং) স্ট্রেচ করতে মাটিতে বসে এক পা ভাঁজ করে, অন্য পা সোজা করে সামনের দিকে ঝুঁকুন। পায়ের পাতা স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। মেরুদণ্ড যেন টানটান থাকে। দীর্ঘক্ষণ কাজ করলে চেয়ারে বসেও স্ট্রেচটি করতে পারেন। একটি চেয়ারে বসে পা সামনের দিকে টানটান করে রাখুন। ডান পা ও বাঁ পা এ ভাবে দশ সেকেন্ড করে ধরে রাখুন। দু’ বার করে রিপিট করুন।
গ্লুট (হিপের পেশির) স্ট্রেচ: চেয়ারে বসে ইংরেজি ফোর-এর মতো করে পা রেখে বসুন, (যে ভাবে চেয়ারের উপর পা তুলে বসে গল্প করি) সামনের দিকে ঝুঁকুন। দশ সেকেন্ড করে দু’-তিন বার করুন।
তথ্য সহায়তা: ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy