কথা বলার সময়ে কারও মুখ থেকে যদি দুর্গন্ধ আসে, সে এক বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার। স্কুল হোক বা অফিস, কারও মুখ থেকে গন্ধ এলে, সে কথা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে না। কিন্তু কেন হয় এই গন্ধ? সমাধানই বা কী।
অনেকেই ছোটবেলায় গল্পকথায় শুনেছি, বদ্যিমশাই ঘরে ঢুকে গন্ধ নিয়েই রোগটি সম্পর্কে বলে দিতেন। এই ধরনের গল্পগুলো কিন্তু অমূলক নয়। আসলে রোগীর মুখ থেকে যে বিশেষ গন্ধ আসে, সেটা থেকেই আন্দাজ করা হয়, রোগী সম্ভবত কোন রোগে ভুগছেন। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললেন, ‘‘যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত সুগারে ভুগছেন, তাঁদের মুখ থেকে মিষ্টি গন্ধ আসে। আবার যাঁরা ক্রনিক কিডনির রোগে ভুগছেন, তাঁদের মুখ থেকে তীব্র গন্ধ আসে। সিরোসিস অব লিভার বা লিভারের অন্য রোগে দীর্ঘ দিন ধরে ভুগলে, মুখ থেকে পচা ডিমের মতো গন্ধ আসে। যাঁরা ফুসফুস বা খাদ্যনালির ক্যানসারে ভুগছেন, তাঁদের মুখ থেকেও গন্ধ আসে... আগে তো এত পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগ ছিল না, তখন চিকিৎসকেরা এ ধরনের গন্ধ পেলেই রোগটা আঁচ করতেন।’’
মুখে গন্ধ কেন হয়?
মুখে গন্ধ হওয়াকে বলা হয় হ্যালিটোসিস। শরীরে নিয়মিত যেটুকু গ্যাসীয় পদার্থ তৈরি হয়, তা ইউরিন বা স্টুল দিয়ে ভেঙে ভেঙে বেরিয়ে যায়। কিন্তু লিভার, কিডনি বা ফুসফুস... যখন আমাদের এই অঙ্গের কোনওটি ঠিক মতো কাজ করে না, তখন সেই গ্যাসীয় পদার্থ রক্তে বেশি করে থেকে যায়। রক্ত থেকে তা ফুসফুসে আসে। এবং আমরা যখন নিঃশ্বাস ছাড়ছি, তার সঙ্গে বেরিয়ে আসে। শরীরের অভ্যন্তরীণ জটিলতাই গন্ধের উৎস।
এর কারণকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। মুখ আর নাকের মধ্যে বিভিন্ন সাইনাস থাকে, সেখানে যদি কোনও ইনফেকশন হয়, তা হলে গন্ধ আসতে পারে। নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে মুখে গন্ধের কারণ হয় মুখ বা নাকের মধ্যেকার সাইনাসের সমস্যা। দাঁত, দাঁতের গোড়া, মাড়ি, জিভ, মুখগহ্বরে কোনও ইনফেকশন হলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। তাই খাওয়ার পর ঠিকমতো মুখ না ধুলে, জল যথাযথ পরিমাণে খাওয়া না হলে, দাঁতের গোড়ায় খাবারের অংশ থেকে গেলে বা দাঁতের এনামেল নষ্ট হলেও মুখ থেকে খারাপ গন্ধ আসতে পারে।
এ ছাড়াও অ্যাসিডিটির প্রবণতা থাকলে বা ফুসফুসে কোনও ইনফেকশন হলে, সেখান থেকে গন্ধ হতে পারে। যেখানে কোনও ইনফেকশন হয়েছে, সেখানে যে গ্যাস তৈরি হচ্ছে, তা মুখে আসবে। এই গ্যাস আসার দুটো জায়গা রয়েছে— লাংসের ভিতর থেকে এবং খাদ্যনালির ভিতর থেকে। এই জায়গায় যদি বড় রকমের কোনও ইনফেকশন হয়, তা হলে সেখান থেকেও গন্ধ আসতে পারে।
এ ছাড়া লিভার, কিডনির সমস্যা, অনিয়ন্ত্রিত সুগারের কথা আগেই বলা হয়েছে, যা থেকেও মুখে গন্ধ হয়।
সমাধান কী?
লিভার, কিডনি বা ডায়াবিটিসের মতো রোগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সাইনাসের ইনফেকশন হলে, অনেক সময়ে গলার কাছে যেন কফ এসে জমা হয়ে থাকে, তা থেকে দুর্গন্ধ বেরোলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তবে সমস্যা খুব জটিল না হলে, সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। ডা. তালুকদার বললেন, ‘‘প্রত্যেকের উচিত দিনে অন্তত দু’বার ব্রাশ করা। এর পাশাপাশি দুপুরে খাওয়ার পরে দাঁত মাজতে পারলে খুবই ভাল। অফিসে লাঞ্চ করার পরেও যদি ব্রাশ করা সম্ভব হয়, তা হলে সেটা করুন। খেয়াল রাখতে হবে, দাঁতের ফাঁকে যেন কোনও ভাবেই খাবারের টুকরো আটকে না থাকে। প্রত্যেক বার খাওয়ার পরে মুখ ও দাঁত ভাল করে ধোয়া, কুলকুচি করা জরুরি। ব্রাশ করতে হবে জিভের উপরেও। সেখানেও অনেক ময়লা জমে থাকে। বাচ্চাদেরও জিভ পরিষ্কার করতে হবে। ঘন ঘন ব্রাশ পাল্টানোটাও খুব জরুরি। সেই সঙ্গে দিনে যথেষ্ট পরিমাণে জল খেতে হবে।’’
এই সাধারণ কিছু নিয়ম প্রত্যহ মেনে চললে মুখে গন্ধ হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy