চেয়ারে টানা বসে কাজের মাঝে অতিরিক্ত ভূরিভোজে দেখা দিতে পারে নানা রোগবালাই। প্রতীকী ছবি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গিয়েছেন, ‘জেনো বাসনার সেরা বাসা রসনায়’। আর তাই বোধহয় তাঁর ‘দামোদর শেঠ’ ‘অল্পেতে খুশি’ হয় না। কিন্তু রসনার সঙ্গে শরীরটি যাতে সঙ্গত দেয়, সে খেয়াল রাখাটা বর্তমান জীবনযাত্রায় বড়ই জরুরি। সেডেন্টারি জীবনযাপনে ওভারইটিংয়ের সম্ভাবনা বেশি। তাই খেয়াল রাখতে হবে যাতে খাদ্যগ্রহণ ও মেটাবলিজ়মের মধ্যে ব্যালান্স বজায় থাকে।
শরীরকে পরিচালনা করতে ও দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে প্রয়োজন এনার্জির। আর তার জন্য আমাদের শরীরে বিপাকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। খাওয়াদাওয়ার পরে আমাদের শরীরে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়, তাকেই বিপাক বলা যেতে পারে। কোনও কাজ না করেও যে ক্যালরি ক্ষয় হয় আমাদের, তাকে বলা হয় ‘বেসাল মেটাবলিক রেট’।
মেডিসিনের ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, “এক জনের শরীরের গঠন, তার উচ্চতা, বয়স, লিঙ্গ ও তার কাজের ধরনের উপরে বেসাল মেটাবলিক রেট নির্ভরশীল।
বেশি খেলেই সমস্যা?
আমাদের প্রত্যেকের শারীরিক গঠন আলাদা হয়। খাবারের চাহিদাও হয় ভিন্ন। এখন বেশির ভাগ মানুষ সেডেন্টারি জীবনযাপনে অভ্যস্ত। অনেকের কাজই এখন বাড়িতে বা অফিসে বসে। এই ধরনের কর্মজীবনে খেয়াল রাখা দরকার, পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাবে আমাদের বেসাল মেটাবলিক রেট কিন্তু কমের দিকেই থাকে। এ দিকে অফিসে কাজের ফাঁকে হয়তো হাতের কাছে যে খাবার পাচ্ছেন, সেটা খাওয়া বেশি হয়ে যাচ্ছে। কাজ করতে করতে হয়তো কয়েক কাপ কফি, দুটো কুকিজ়, বাড়ি ফেরার পথে একটা রোল খেয়ে নিলেন। ফলে বাড়ি ফিরে ডিনার স্কিপ। ঠিক মতো মিল পাচ্ছে না শরীর। এ দিকে জাঙ্ক জমে যাচ্ছে।
পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, “অনেক সময়ে আমরা এমন কিছু খাবার খাই, যাতে ক্যালরি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আর এই ক্যালরি যদি ‘বার্ন’ না করা হয়, তবে তা আমাদের শরীরে চর্বি হিসেবে জমতে থাকে। বাড়তে থাকে মেদ-সহ নানা শারীরিক সমস্যা।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, আমরা অনেক সময়ে দিনে একবেলা বেশি পরিমাণে খাবার খেয়ে বাকি দিনটা না খেয়ে বা অনেকটা দেরিতে কিছু খেয়ে থাকি। এতে অনেকের মনে হয় যে কম খাচ্ছেন, ওজন বাড়বে না। চিকিৎসকেরা কিন্তু এই ধারণাকে একেবারেই সমর্থন করেন না। তাঁদের মতে, এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসের কারণেই শরীরে মেদ জমে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রোগ। তবে এখানে জেনে রাখা ভাল, আমাদের শরীরে ‘ওবেসিটি’-র লক্ষণ রয়েছে কি না, তা জানতে ‘বডি মাস ইনডেক্স’ (বিএমআই) মেপে নেওয়া উচিত। বিএমআই ৩০-এর বেশি হলে ‘ওবিস’ বলা যায়।
তবে শুধু মেদ নয়, খাদ্যাভ্যাস ঠিক না রাখলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে আরও নানা রোগ। হতে পারে এক ধরনের রোগ, যাকে বলে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’। এতে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ব্লাড সুগার, ইউরিক অ্যাসিড, দেখা দিতে পারে হাইপারটেনশন, হাই কোলেস্টেরলের সমস্যা। এর পরেও বাড়তে থাকে হার্ট ও কিডনির সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা বাড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অবশ্য অনেকে এমন কিছু রোগে ভোগেন, যাতে বেসাল মেটাবলিক রেট বাড়াতে পারেন না। তাঁদের ক্যালরি ‘বার্ন’ করতেও সমস্যা হয়। যেমন, হাইপোথাইরয়েড আর কুশিংস ডিজ়িজ। আরও এমন অনেক রোগ রয়েছে, যেখানে খাওয়ার সঙ্গে শরীরে মেদ জমা-না জমা বা তার থেকে অসুস্থ হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। এ ক্ষেত্রেও আগেভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অভ্যেস বদলে সমাধান
মনে করুন, আপনি আগের দিন ৮টায় রাতের খাবার খেয়েছেন। পরের দিন জলখাবার খাচ্ছেন বেলা ১১টায়। কাজের চাপে, বা নিছক হালকা ভাবে এই খাদ্যাভ্যাস তৈরি হলেও, লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। বিপাক কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকবে বদহজমের সমস্যা। কী ভাবে নিষ্কৃতি পাওয়া যেতে পারে? চিকিৎসকদের পরামর্শ,
সময়ে খাওয়া: ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনারের মাঝের সময়ের দূরত্ব যেন বেশি না হয়। পাশাপাশি, দু’টি মূল খাওয়ার মাঝেও দু’ঘণ্টার বেশি সময় পেট ফাঁকা রাখা যাবে না। এতে বাড়তে পারে গ্যাসের সমস্যা। তাই কাজের মাঝে হালকা স্ন্যাক্স চলতে পারে।
নজরে খাদ্যাভ্যাস: ভাজা, মশলাদার খাবার কম খেতে হবে। খাদ্যতালিকায় কিছুটা প্রোটিনজাতীয় খাবার রাখলে তা পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করবে। চোখের খিদে থেকে ভরা পেটেও খাবেন না।
সংযমেই বাজিমাত: রাস্তায় বেরোলে অনেক সময়ে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। উৎসব-অনুষ্ঠানের মরসুমে সেটা ঘনঘন চলতে থাকে। ভাজাভুজি, বা বেশি ক্যালরির খাবার ক্রমাগত খেতে থাকলে পরে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবেই। তবে গড়ে ১৫ দিনে এক বার সে সব চলতেই পারে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা। ফলে কোনও খাবারই একবারে বন্ধ করার দরকার নেই। তবে তা যেন খুব ঘনঘন খাওয়া না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখবেন।
ব্যাগে বিকল্প: স্ন্যাক্সের জন্য কিছু পরিমাণে ফল, ওটসের বিস্কিট বা স্যালাডের জুড়ি মেলা ভার। ব্যাগে রাখা যেতে পারে অল্প পরিমাণে ড্রাই ফ্রুটসও।
প্রোবায়োটিক জরুরি: অল্প দই, দুধ বা অন্য প্রোবায়োটিক ভরপুর খাবার মেটাবলিক রেট বাড়াতে সহায়ক। তাই রোজ খাদ্যতালিকায় এ ধরনের খাবার রাখা যেতেই পারে।
জলই জীবন: দিনভর কাজের মাঝে জল খাওয়ায় কোনও খামতি রাখবেন না। চা, জুস, লস্যি দিয়েও জলের ঘাটতি কিছুটা মেটানো যেতে পারে।
ব্যায়াম দরকার: শুধু খাদ্যাভাস নয়, নিয়মিত শারীরচর্চাও সুস্থ থাকতে জরুরি। ব্যায়াম, সাইক্লিং, বা শুধুই হাঁটাহাটি বিপাক-ক্রিয়ার জন্য সহায়ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy