জলে জোর দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলুন। ছবি: শাটারস্টক।
স্বাভাবিক খাওয়া–দাওয়া করেন এমন সুস্থ–সবল মানুষ, তাঁর ওজন ও কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে, দিনে ৩–৪ লিটার এমনকি ৫–৬ লিটার পর্যন্ত জল খেতে পারেন। তবে ঠান্ডা ঘরে এসির মধ্যে শুয়ে–বসে থাকা মানুষ যদি লিটার লিটার জল খেতে শুরু করেন, সমস্যা আছে। কম নুন খেলে তো বিশেষ করে। দিনে ৩–৪ গ্রামের মতো নুন ও ৫–৬ লিটার জল খাওয়া মোটে ভাল নয়। বেশি বয়সে ও কিডনি কম কাজ করলে বিপদ আরও বেশি।
সমতা চাই নুন ও জলে
কিডনি বিশেষজ্ঞ সুব্রত ভৌমিক বলেন, ‘’দিনে যত গ্রাম নুন খাবেন, জল খেতে হবে মোটামুটি তত লিটার। সুস্থ–সবল কমবয়সী মানুষ ৫–৭ গ্রামের মতো নুন খেলে ৫–৭ লিটার পর্যন্ত জল খেতে পারেন। কোনও কারণে কম নুন খেতে হলে সেই হিসেবে জল খাওয়া না কমালে রক্তে সোডিয়াম কমে বিপদ হতে পারে। বাড়াবাড়ি হলে সোডিয়াম বিপদসীমার নীচে নেমে গিয়ে হাইপোন্যাট্রিমিয়ার মতো সমস্যা হওয়াও বিচিত্র নয়।’’
বিপদের নাম হাইপোন্যাট্রিমিয়া
• প্রথমে গা–বমি করে বা বমি হয়, ক্লান্ত লাগে, বারবার মূত্রত্যাগ করতে হয়, মাথা ব্যথা করে।
• আচমকা আচ্ছন্ন বা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়তে পারেন।
আরও পড়ুন: উপসর্গহীন মারি নিয়েই ঘর, করোনা তার নতুন দোসর
• বয়স্ক মানুষদের সমস্যা বেশি হয়। সঙ্গে ভুলে যাওয়ার অসুখ থাকলে বিপদ বাড়ে।
• সময়মতো চিকিৎসা না হলে সামান্য কিছু ক্ষেত্রে রোগী মারা যান।
• খুব কম সময়ে প্রচুর জল খেয়ে নিলে সামান্য কিছু ক্ষেত্রে চরম বিপদ হতে পারে।
কিডনির অসুখে মেপে জল খেতে হবে। ফাইল ছবি।
অতিরিক্ত জল মানে বিষ
কিছু মানুষ ছোট থেকে জেনে এসেছেন, বেশি জল খেলে শরীরে জমা বিষ বেরিয়ে যায়। স্বাস্থ্য ভাল থাকলে কম বয়সে তাতে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু কোনও কারণে জল কম খাওয়ার প্রশ্ন এলে, তাঁরা তা করে উঠতে পারেন না। বিপদ বাড়ে। অনেক বেশি জল খেলে তা রক্তকে পাতলা করে পরিমাণে বাড়িয়ে এক দিকে যেমন ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্সের সূত্রপাত করে, সঙ্গে চাপ বাড়ে শিরা–ধমনী ও হৃদযন্ত্রে। খাটনি বাড়ে কিডনির। ১–২ ঘণ্টার মধ্যে ৭–৮ লিটার জল খেয়ে নিলে সমস্যার জের মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় কখনও। হালকা মাথা ব্যথা থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্ট বা মৃত্যুও হতে পারে। কাজেই জল খান মেপে।
আরও পড়ুন: করোনা সারলেও বাড়ছে অন্য রোগের ঝুঁকি, সুস্থ থাকতে কী কী করবেন
জলের পরিমাণ
আগেও আমাদের দেশে ৬৫–৭০ কেজি ওজনের কর্মক্ষম সুস্থ মানুষের শরীরে জলের চাহিদা ছিল ৩–৪ লিটার। শীতকালে তা কমে ২–৩ লিটার। এখন গরমে তা দাঁড়িয়েছে ৪–৫ লিটার ও শীতে ৩–৪ লিটার। আগামী ২০ বছরে তা আরও এক লিটারের মতো বাড়বে বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান। এর একটা কারণ যদি হয় পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই মেদবাহুল্য। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কারণে মানুষের গড় উচ্চতা বাড়ছে, সেও আরেক কারণ। কাজেই ৫০ কেজি ওজনের একজন মানুষ যদি ঠান্ডা ঘরে শুয়ে–বসে থাকেন, তাঁকে যতটা জল খেতে হবে ৭৫ কেজি ওজনের, রোদে–জলে ঘোরা মানুষকে তার চেয়ে বেশি খেতে হবে। প্রচণ্ড তাপের মধ্যে কাজ করলে বা দূরপাল্লার দৌড়বাজদের খেতে হবে আরও বেশি।
আরও পড়ুন:থাকে মৃত্যুর আশঙ্কাও,হবু মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এ সব মনে রাখতেই হবে
কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন তার উপরও নির্ভর করে জলের চাহিদা। ঘরে কম তেল–নুন–মশলায় রান্না করা সুষম খাবার খেলে, কম জল খেলেই হয়। আর ফাস্ট ফুড বা প্রসেসড ফুডে প্রচুর নুন থাকে বলে এ সব নিয়মিত খেলে জল খাওয়া বাড়াতে হয়।
কতটা জল, কখন খাবেন
কেউ বলছেন তেষ্টা পেলে খান। কেউ মনে করেন জল খেতে হবে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। কারও মতে প্রস্রাবের রং দেখে বুঝতে হবে জল ঠিক খাওয়া হচ্ছে কি না। ওজন বেশি হলে আবার দিনের প্রতিটি খাবার খাওয়ার ঠিক আগে জল খেতে বলেন কিছু ফিটনেসগুরু, যাতে কম খাবারে পেট ভরে।
কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন তার উপরও নির্ভর করে জলের চাহিদা। ফাইল ছবি।
সুব্রতর মত, ‘’শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে জল খাওয়া উচিত তেষ্টা পেলে। ডায়াবিটিস থাকলে অনেক সময় শরীরে জলের চাহিদা না থাকলেও তেষ্টা পায়। কিডনি ঠিক থাকলে তাতে ক্ষতি নেই। কারণ যত বার প্রস্রাব হয় তার সঙ্গে কিছুটা করে সুগার বেরিয়ে গিয়ে উন্নতিই হয় রোগের।
আরও পড়ুন:শুধু খাওয়া নয়, এই সব কাজেও ব্যবহার করা যায় ডিম
তবে হার্ট ফেলিওর, ক্রনিক কিডনির অসুখ, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ইত্যাদির কারণে যাঁদের নুন কম খেতে হয়, তাঁদের জলের ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। ঠান্ডা ঘরে সময় কাটালে হুটহাট জল খাওয়ার বদলে এক–আধবার চা খেয়ে তেষ্টা মেটালে কোনও ক্ষতি নেই। আবার অত জল খেতে ভাল লাগে না বলে মাঝেমধ্যে যে স্যুপ, ঘোল, ফলের রস, চা–কফি খাওয়া হয়, তার হিসেবও জলের মধ্যে ধরতে হবে। কারণ দিনে ৩–৪ লিটার তরলের চাহিদা যে স্রেফ জল দিয়েই মেটাতে হবে, এমন কিন্তু নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy