Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Daily water drinking limit

লকডাউনে রুটিনের দফারফা, ঠিক কতটা জল খেতে হবে এই সময়ে

কে কতটা জল খাবেন? কম না বেশি? লকডাউনে মেনে চলেছেন এই নিয়ম?

ঠিক কতটা জল পান করতে হবে দিনে। ফাইল ছবি।

ঠিক কতটা জল পান করতে হবে দিনে। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ১০:৫৬
Share: Save:

লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি। এই সময়ে খাওয়া থেকে ঘুম সব কিছুই এলোমেলো হচ্ছে। জল খাওয়াও কমে গিয়েছে। বাইরে বেরলে পরিশ্রম ও বেশি ঘাম হয় বলে তেষ্টা বাড়ে, বাড়িতে থাকলে সে বালাই নেই। কিন্তু মানুষের শরীরের মোট ওজনের ৬০ শতাংশই জলীয়। তাই কম জল পান করলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। আবার অনেকে আছেন যারা জল খাওয়া ভাল বলে কথায় কথায় গ্লাস গ্লাস জল খান, অতিরিক্ত জলও শরীরের জন্যে একইরকম ক্ষতিকর, এমনই জানান ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল।

হজমের সমস্যা

অনেকেই স্বাভাবিক অবস্থায় প্রয়োজনের তুলনায় কম জল খান। এর থেকে শরীরের বিভিন্ন কোষে কোষে জলের পরিমাণ কমে গিয়ে যখন তখন নানা সমস্যার শুরু। এমনও হতে পারে ডায়ারিয়ার কারণে বার তিনেক শৌচাগারে যেতে হয় অথবা প্রবল জ্বরে এমন ডিহাইড্রেশন হয় যে হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন দেওয়া ছাড়া কোনও গতি থাকে না, বলেন পুষ্পিতা মণ্ডল।

দিনে সাত থেকে আট গ্লাসের কম জলপান করলে যে সমস্যা হতে পারে

১. কম জল পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া খাবার ঠিক মতো হজম হতে অসুবিধা হয়। খাবার খেলে তা ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষিত হয়। বাকি বর্জ্য পদার্থ কোলনে চলে গিয়ে মল হয়ে বাইরে যায়। এই পুরো প্রক্রিয়াটির সময় শরীরে বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্টস ও জলীয় অংশ শোষিত হয়। কম জল খেলে মল হয়ে উঠবে কঠিন। মলত্যাগ করা কষ্টকর হবে। ক্রমশ অর্শ, অ্যানাল ফিশার সহ মলদ্বারের নানা রোগের সম্ভাবনা বাড়বে।

আরও পড়ুন: লকডাউনে ছোটদের কাছে পাচ্ছেন বেশি, ভাল অভ্যাস গড়ে তুলবেন কী ভাবে?​

২. শরীরে কম জল থাকায় বিপাকীয় ক্রিয়ায় তৈরি কিছু অপ্রয়োজনীয় ও বিষাক্ত পদার্থ জমে গিয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

৩. রক্ত সংবহনের জন্যে ৩৫ শতাংশ জলীয় পদার্থ দরকার হয়। জল কম খেলে শরীরের মোট রক্তের আয়তন অর্থাৎ ব্লাড ভলিউম কমে যায়। ফলে রক্তচাপ নেমে যেতে পারে। কম রক্তচাপ থাকলে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌছতে অসুবিধে হয়। এই কারণে সারা দিনই ক্লান্ত লাগে। ঘুম পায়। বাচ্চাদের পড়াশোনায় মন বসে না, বড়রাও কোনও কাজ করতে পারেন না।

৪. শরীরে জল কম থাকলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একইসঙ্গে দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করার জন্য মূত্রনালী সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।

৫. কিডনিতে রেচন পদার্থ জমে গিয়ে কিডনির কাজ কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

৬. কোনও কাজে মনঃসংযোগ করতে অসুবিধা হতে পারে।

কত জল দরকার

গরম কালে আট থেকে বারো গ্লাস জল পান করা উচিত। তবে যদি কিডনি বা হার্টের অসুখ থাকে তখন জলপানের ব্যাপারে কিছু বিধি নিষেধ থাকে। যারা রোদে ঘোরাঘুরি করেন বা অনেক বেশি পরিশ্রম করেন তাদের বেশি জল তেষ্টা পায়। জল তেষ্টা পেলেই জলপান করা উচিৎ। যাঁদের কম তেষ্টা পায়, ছোট থেকেই কম জল পান করে অভ্যস্ত তাঁদের অবশ্যই ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল পানের অভ্যেস করতে হবে। নইলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা ১৬ আনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে জল খেলে পেটের ভেতরে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়। সারাদিন জল খেলেও সন্ধ্যার পর থেকে কম জল খাওয়া উচিত। বেশি বয়সের পুরুষদের প্রস্টেটের অসুখ থাকলে সন্ধ্যার পর জলপান কমিয়ে না দিলে রাতে ঘুম হবে না।

আরও পড়ুন: চশমা পরে বাইরে বেরচ্ছেন? এ সব না মানলেই সংক্রমণের আশঙ্কা

বেশি জলও ভাল নয়

জল খাওয়া ভাল বলে অনেকে ৮ থেকে ১০ লিটার পর্যন্ত জল খেয়ে ফেলেন। এর কোনও দরকার নেই, ৩ – ৩.৫ লিটারই যথেষ্ট। বাড়তি জল শরীরে সোডিয়াম পটাশিয়ামের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে। রোদে দীর্ঘক্ষণ খেলার পর ঢকঢক করে একসঙ্গে অনেকটা জল খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এর ফলে এক্সারসাইজ অ্যাসোসিয়েটেড হাইপোন্যাট্রিমিয়া (EAH) অর্থাৎ শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গিয়ে আচমকা জ্ঞান হারানোর ঝুঁকি থাকে। এছাড়া শরীরে নানান মিনারেলসের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে কথাবার্তা অসংলগ্ন হতে পারে এবং লেথার্জি লাগে, অর্থাৎ কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করে না। যাঁদের মনের অসুখ আছে, তাঁরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল পান করেন। সুতরাং বেশি বা খুব কম নয়, দিনে ৮ – ১২ গ্লাস জলপানই যথেষ্ট।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE