Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
অনলাইন ক্লাসে কি মানিয়ে নিতে পারছে শিশুরা
New Normal

‘নিউ নর্ম্যাল’-এ কতটা ধাক্কা খাচ্ছে শিক্ষা?

ক্লাসঘর নেই, টিফিন খাওয়া নেই, বন্ধুদের সঙ্গে হুটোপাটিরও অবকাশ নেই। পড়াশোনা অবশ্য থামেনি। অনলাইনে ক্লাসও চলছে অনেকের।

একসঙ্গে: লকডাউনে অমিল প্লে-স্কুলের এই স্বাভাবিক দৃশ্য। ফাইল চিত্র

একসঙ্গে: লকডাউনে অমিল প্লে-স্কুলের এই স্বাভাবিক দৃশ্য। ফাইল চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০ ০২:৪১
Share: Save:

স্কুলের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাস কয়েক আগে। কবে আবার খুলবে, জানা নেই কারও। এখন চার দেওয়ালের ঘেরাটোপেই বন্দি ওদের জীবন। ক্লাসঘর নেই, টিফিন খাওয়া নেই, বন্ধুদের সঙ্গে হুটোপাটিরও অবকাশ নেই। পড়াশোনা অবশ্য থামেনি। অনলাইনে ক্লাসও চলছে অনেকের। প্রতিদিন সময় বেঁধে বসতে হচ্ছে ল্যাপটপ বা মোবাইলের সামনে। কিন্তু এ ভাবে কি শিশুদের পড়াশোনা করানো আদৌ সম্ভব? এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকেরাও।

তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, যে বয়সে খেলার ছলে নানা জিনিস শেখার কথা, সেই বয়সে শুধু অনলাইন ক্লাসের নিয়মে বেঁধে ফেললে শিশুমনের যথাযথ বিকাশ কী ভাবে হবে? ‘নিউ নর্ম্যাল’ বলে যে জীবন আমরা বড়রা মেনে নিয়েছি, শিশুদের পক্ষে কি তা মেনে নেওয়া সম্ভব?

আগে বছর পাঁচেক বয়স হলে তবেই স্কুলে ভর্তি হত শিশুরা। এখন দুই থেকে আড়াইয়ের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় প্লে-স্কুল। প্লে-স্কুলের শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে তৈরি হয়ে স্কুলে আসার মধ্যে দিয়ে শিশুদের মধ্যে একটা শৃঙ্খলার বোধ তৈরি হয়। তা ছাড়া, খেলার ছলে সেখানে অনেক কিছুই হাতেকলমে শিখতে পারে তারা।

কিন্তু লকডাউনে তা হবে কী ভাবে? শহরের বেশ কিছু প্লে-স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা খেলার ছলেই শিশুদের অনলাইন ক্লাস করাচ্ছেন। যদিও অভিভাবকদের একাংশ বলছেন, ‘‘অনলাইনে বাচ্চা কতটা কী শিখছে, তা বুঝতে পারছি না।’’ শহরে মন্তেসরি শিক্ষিকাদের একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের শিক্ষিকা ও কর্ণধার স্নেহা সাঁতরার কথায়, ‘‘প্লে-স্কুলে গিয়ে শিশুদের মধ্যে যে অভ্যাস তৈরি হয়, তা ব্যাহত হচ্ছে সন্দেহ নেই। তবে এখন যদি মায়েরা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় সন্তানের জন্য বরাদ্দ করেন, তা হলে বাড়িতেও হাতেকলমে অনেক কিছু শেখানো যায়।’’ তিনি জানান, অভিভাবকেরা ইন্টারনেট থেকে মন্তেসরি প্রশিক্ষণের কিছু ভিডিয়ো দেখে বাড়িতেই শিশুকে শেখাতে পারেন। যেমন, একটি পাত্রে বালি ও নুড়িপাথর রেখে তা আলাদা করতে শেখালে শিশুর হাত ও চোখের সমন্বয় ভাল ভাবে তৈরি হয়।

মাস দুয়েক ধরে দুই ও তিন বছরের শিশুদের অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছে লেক টাউনের একটি প্লে-স্কুল। অধ্যক্ষা নীলাক্ষী শুক্ল বললেন, ‘‘৪০-৪৫ মিনিটের অনলাইন ক্লাসে বাবা-মায়েদের ভূমিকাই আসল। তাঁদের আমরা যেমন বলছি, সেটাই তাঁরা নিজেরা করে বাচ্চাকে দেখাচ্ছেন বা শোনাচ্ছেন।’’ মোবাইল বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের জোরালো আলো শিশুদের চোখের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই অভিভাবকদের বলা হচ্ছে স্পিকার অন রাখতে। তাতে শিশুদের কবিতা বা অন্য কিছু শোনাচ্ছেন শিক্ষিকারা। আর তাঁদের নির্দেশ মতো বইয়ের পৃষ্ঠা খুলে দেখাচ্ছেন মায়েরা। অনলাইন পড়াশোনা মানেই শুধু ‘লাইভ’ ক্লাস নয়। বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। সেটাই তাঁরা অনুসরণ করছেন বলে জানালেন মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষা অঞ্জনা সাহা।

তিনি জানান, বাবা-মা কাজে বেরিয়ে গেলে ছোটরা অনেকেই বাড়িতে একা থাকে। তাদের কথা মাথায় রেখে পড়ুয়াদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছেন তাঁরা। সেখানে নানা রকম ভিডিয়ো এবং অডিয়ো ক্লিপ তৈরি করে শিক্ষিকারাই পাঠাচ্ছেন। তাতে বাড়ির অনেক ছোটখাটো কাজ শেখানো হচ্ছে। অঞ্জনাদেবীর কথায়, ‘‘পড়ুয়ারা সহজেই ওই কাজ শিখছে। পড়াশোনার চেয়ে এখন ওদের আনন্দে রাখাটাই বেশি জরুরি।’’ বেসরকারি স্কুলগুলিতে শিশুদের অনলাইন ক্লাসের সুযোগ থাকলেও সরকারি স্কুলে অবশ্য তা হচ্ছে না।

শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, শিক্ষার অধিকার আইনে ছ’বছর বয়সে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির কথা বলা রয়েছে। আরও ছোটদের জন্য আগে ছিল শিশু শ্রেণি। এখন সেটাই প্রাক্-প্রাথমিক। কিন্তু যে হেতু তা শিক্ষার অধিকার আইনের মধ্যে পড়ছে না, তাই অনলাইন ক্লাসেরও কোনও ব্যবস্থা নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

New Normal Coronavirus Lockdown, Virtual Classes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy