অনলাইন ক্লাসে ব্যস্ত খুদে। ছবি: সংগৃহীত।
সকাল থেকে বাড়িতে তোড়জোড়। তাড়াহুড়ো। ব্যাগে বইপত্র আর টিফিনবাক্স ভরে বেরোনোর তাড়া নেই। তবে স্কুল আছে। স্কুলের পোশাক পরে তৈরি হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ল্যাপটপ কিংবা ফোনের সামনে বসে ক্লাস করতে হবে।
গরমে অনলাইনেই হবে বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজির ক্লাস। খুদেরাও তৎপর। নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে সময়ের আগেই বসে পড়ছে অনলাইন ক্লাস করতে। ক্লাসের বাহানায় হলেও, খানিক ক্ষণ ফোনের সঙ্গে সময় তো কাটানো যাবে! ফোনে মুখ গুঁজে থাকলেও বাবা বা মায়ের বকাবকি নেই। আর অনেকটা সেই কারণে কি অনলাইন ক্লাসের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে খুদে পড়ুয়াদের? প্রশ্ন তুললেন উত্তর কলকাতার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিভাস সান্যাল। তাঁর কথায়, ‘‘অনলাইনে ক্লাস করাতে আমাদের ভাল লাগে না। তবে অনেক পড়ুয়া কিন্তু অনলাইন ক্লাস করতে ভালবাসে। স্ট্যান্ডার্ড ওয়ানের এক পড়ুয়া সরাসরি জানিয়েছে, অনলাইনে পড়াশোনা করতেই সবচেয়ে ভাল লাগে। কারণ ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা যায়।’’
অনলাইন ক্লাস। শুনতে সুবিধাজনক হলেও, বাস্তবে কিন্তু ততটাও সহজ নয়। বিশেষ করে খুদে পড়ুয়াদের অনলাইনে ক্লাসে বসিয়ে রাখা একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে কতটা নাজেহাল হতে হচ্ছে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের?
অত্যধিক গরমে শহরের বেশ কিছু স্কুলে অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে। ক্লাস রুমে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নেই। কয়েক জোড়া ফ্যান খুদে পড়ুয়াদের স্বস্তি দেওয়ার পক্ষে অপর্যাপ্ত। তা ছাড়া গরমের ছুটি এগিয়ে আসায় সিলেবাস শেষ করার একটা তাড়াও আছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।
প্রবল গরম আর চাঁদিফাটা রোদে সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে না। সেটা যেমন অভিভাবকদের এক দিকে স্বস্তির বিষয়, পাশাপাশি সন্তানের অনলাইন ক্লাসের ফাঁদে পড়ে তাঁদের কাজকর্মও লাটে উঠতে বসেছে। সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়ার পর অনেকটা সময় পাওয়া যেত নিজের বা অফিসের বা বাড়ির কাজ গুছিয়ে নেওয়ার। এখন তা হওয়ার জো নেই। সারা ক্ষণ চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে বাচ্চাকে।
স্কুলে যাওয়া নিয়ে বায়না করলেও, আশ্চর্যজনক ভাবে ফোনে ক্লাস করতে এক পায়ে রাজি অনেক খুদেই। ক্লাস শেষ হলেও যন্ত্রেই মগ্ন হয়ে থাকছে তারা। ক্লাসের মাঝে যাতে ফোন কিংবা ল্যাপটপ যাতে বিগড়ে না যায়, তা নিয়ে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে পড়ুয়াদের মধ্যে। দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমেধা বসু। সুমেধার মা শ্রমণার কথায়, ‘‘স্কুল শুরু হওয়ার আগেই ফোন নিয়ে বসে পড়ছে মেয়ে। কারণ জানতে চাইলে বলেছে, ক্লাস চলার সময় যাতে কোনও অসুবিধে না দেখা দেয়, সেই জন্য আগে থেকে দেখে নিচ্ছি।’’
অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে সৌমিলি দাশেরও। মেয়ে সমৃদ্ধি দাশ বাইপাসের এক বেসরকারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। সৌমিলি জানিয়েছেন, অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। সারা ক্ষণ বাড়িতে থাকার কারণে খুদের দৌরাত্ম্য তো বেড়েছেই, দিনে দিনে তাকে সামলানো কঠিন হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে বাচ্চার ফোন ব্যবহারের প্রবণতাও বেড়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও নানা অছিলায় ফোন নিয়ে বসে থাকছে। সব সময় নজরে দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া আমাদের নিজেদেরও অফিসের কাজ থাকে।’’
শুধু অভিভাবকেরা নন, খুদে পড়ুয়াদের অনলাইনে পড়াশোনা করাতে নাজেহাল শিক্ষকেরাও। অনলাইনে ক্লাস করাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন শিয়ালদহের কাছের একটি স্কুলের শিক্ষিকা রোশনি কীর্তনীয়া। পড়ুয়ারা নাকি অর্ধেক সময় ক্যামেরা বন্ধ রেখে ফোনের সামনে থেকে উঠে গিয়ে খেলাধুলোয় মত্ত হয়ে পড়ছে। অভিভাবকেরা আবার জোর করে এনে ফোনের সামনে বসাচ্ছেন। রোশনি বলেন, ‘‘রোল কল করার সময় পর্যন্ত সকলেই শান্ত হয়ে বসে থাকছে। ক্লাস শুরু হতেই অনেকের আর সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পড়া ধরলে নেটওয়ার্ক কাজ করছে না বলে কায়দা করে এড়িয়ে যাচ্ছে অনেকেই।’’
তাঁর ক্লাসে এমন ঘটনা না ঘটলেও, অনলাইনে খুদে পড়ুয়াদের পড়াশোনা করানো যে বেশ কঠিন, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন উত্তর কলকাতার অন্য এক স্কুলের শিক্ষিকা দেবশ্রী দেবনাথ। তিনি জানিয়েছেন, এক প্রকার নিরুপায় হয়েই অনলাইনে ক্লাস করাতে হচ্ছে। ক্লাস রুমে ছোট পড়ুয়াদের যতটা নজরে রাখা যায়, অনলাইনে তা সম্ভব নয়। ফলে ফোনের ও পারে কে, কী করছে তা সব সময় বোঝা যায় না। বাচ্চারাও অমনোযোগী হয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষ হলে গ্রীষ্মের ছুটি কাটিয়ে ক্লাস রুমে ফেরার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy